1. admin@sylhetbela24.com : admin :
October 15, 2025, 1:47 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

অভাবের দেয়াল ডিঙিয়ে জাতীয় হকি দলে নাটোরের কনা

  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, জুলাই ২৫, ২০২৫
  • 29 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

টিনের ছাউনি, কর্দমাক্ত উঠোন, অন্ধকার ঘরে কেরোসিনের আলো—এই ছিল কনা আক্তারের ছোট্ট জগৎ। সেই ঘর থেকেই উঠে এসেছে হকির জাতীয় দলে এক উজ্জ্বল মুখ। অভাব-অনটন আর সামাজিক বাধা পেরিয়ে আজ কনা বাংলাদেশের হয়ে মাঠে লড়ছে গর্বের সঙ্গে।

নাটোরের বাগাতিপাড়ার সান্যালপাড়া গ্রামের কনা আক্তারের বাবা আবু বকর পেশায় দিনমজুর।
মা চামেলী বেগম গৃহিণী। ছয় সদস্যের পরিবারে প্রতিদিনই চলে টানাটানি। সংসারের এমন হাল, যেখানে তিন বেলা খাওয়াই কষ্টসাধ্য, সেখানে মেয়ের খেলাধুলা একপ্রকার ‘অপরাধ’ই মনে হতো আশপাশের মানুষের কাছে।

তবে কনার স্বপ্ন ছিল অন্যরকম।
ছোটবোন হিসেবে বড়বোন বিনার সঙ্গে খেলায় অংশ নিত সে। বোন অসাধারণ ফুটবল খেললেও অভাব আর সামাজিক চাপে স্কুলজীবনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। সেখানেই থেমে যায় এক প্রতিভার পথচলা। তবে বোনের স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার অঙ্গীকার করে মাঠে ফেরে কনা।

স্কুলের শিক্ষক কামরুল হাসান পাশে দাঁড়ান। গোপনে চালিয়ে যায় অনুশীলন। ২০২১ সালে রাজশাহীতে বিকেএসপির ট্রায়ালে অংশ নেয় সে। হকি, ফুটবল ও জিমন্যাস্টিকস—সবকটিতেই নির্বাচিত হয়! হকিতে সেরা হওয়ায় সেটিকেই বেছে নেয় নিজের স্বপ্নপথ হিসেবে।

কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ভর্তি ফি নিয়ে।
প্রয়োজন ছিল ৩৫ হাজার টাকা। দিনমজুর বাবার পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা অসম্ভব ছিল। শেষমেশ বিক্রি হয় ঘরের ছাগল-হাঁস। শিক্ষক কামরুল স্যারের সহায়তায় ভর্তি হয় বিকেএসপিতে। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম।

মাত্র দুই বছরের মধ্যেই কনা অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে বিদেশের মাঠে নাম লেখায়। খেলেছে সিঙ্গাপুর, ওমান ও চীনে। ২০২৫ সালে চীনের দাজহুতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে বাংলাদেশ দলের অন্যতম খেলোয়াড় ছিল কনা। খেলেছে সাতটি ম্যাচ, যার মধ্যে দুটিতে হয়েছে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’—সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়েও।

কনার মা চামেলী বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছি। অনেকেই বলেছে, মেয়ে খেলাধুলা শিখে কী হবে? কিন্তু মেয়ের ইচ্ছার কাছে হার মেনেছি। এখন বুঝি, মেয়েটা ঠিক পথেই ছিল।’

শিক্ষক কামরুল হাসান জানান, ‘ওর ভেতরে আগ্রহ ও নিষ্ঠা ছিল। আমরা শুধু পাশে থেকেছি। তবে এখনও পরিবারটি খুব কষ্টে আছে। বিকেএসপির এক বছরের খরচ বাকি রয়েছে।’

নিজের স্বপ্ন নিয়ে কনা জানায়, ‘দেশের হয়ে খেলাটা গর্বের। আমি চাই আরও ভালো খেলতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উঁচু করতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

অভাব, বাধা, সামাজিক ট্যাবু—সবকিছুকে ছাপিয়ে কনা আজ স্বপ্ন ছুঁয়েছে। তার গল্প যেন এক অনুপ্রেরণার নাম, যেখানে প্রত্যয় আর পরিশ্রম মিললে কোনো সীমাবদ্ধতাই পথ আটকাতে পারে না।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews