আজমিরীগঞ্জে কোনভাবেই থামছে না বালুখেকো আওয়ামী লীগ নেতা ফজলু ও তার সহোদর সোহেলের নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের দৌরাত্ম। উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তারা যেনো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। তবে প্রশাসনের এমন গা-ছাড়া মনোভাব অনেকটা ম্যানেজ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
কিছুদিন পুর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বালু উত্তোলনের প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে দিনের পরিবর্তে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত বদলপুর ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন এলাকা পিরোজপুর ও পিটুয়ারকান্দি গ্রামের মধ্যবর্তী কালনী নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিরাতেই চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
এতে করে পিরোজপুর, পিটুয়ারকান্দি গ্রাম, সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহসড়কের কালনী নদীর উপর নির্মিত সেতু, রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধ ও নদী ভাঙ্গন রোধে গ্রামগুলো রক্ষা করার জন্য নেয়া জিও ব্যাগ ফেলা প্রকল্পের কাজ ভাঙ্গনের কবলে পড়বে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
এর আগে গত ৮ মার্চ বালু উত্তোলনের সময় এলাকাবাসীর হাতে ড্রেজার মেশিন ও নৌকা আটক হওয়ার পর দেড় লক্ষ টাকায় নৌকা ও মেশিন ছাড়িয়ে আনেন ফজলু ও সোহেল।
“বালুমহাল মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ আইনের ধারা ৪ এর উপধারা (গ) বলা হয়েছে, ‘বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে এরূপ এবং উপধারা (ঙ) অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন উক্ত বোর্ড কর্তৃক চিহ্নিত সেচ, পানিনিষ্কাশন, বন্যানিয়ন্ত্রণ বা নদীভাঙন রোধকল্পে নির্মিত অবকাঠামো সংলগ্ন এলাকা হতে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ ছাড়া একই আইনের ধারা ৫ (১) এ বলা হয়েছে, ‘পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবেনা।’
কিন্তু এই আইন থাকার পরও ভাঙ্গন এলাকায় কিভাবে নদী থেকে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করছে বালুখেকোরা এই প্রশ্ন এখন জনসাধারণের । তবে “বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করছেন সোহেল৷”
উপজেলা এলজিডি সুত্রে জানাগেছে, চলতি বছরে আজমিরীগঞ্জ সদরের ০.২ কিলোমিটার থেকে বদলপুর ইউনিয়নের বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা বরাদ্ধে কাজ শুরু করা হয়। তন্মধ্যে বদলপুর ইউনিয়নের কৈয়ারঢালা স্লুইস গেইট মেরামতে মাটি ফেলার জন্য ৩২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৯ টাকা প্রাক্কলন ব্যায় ধরা হয়৷ কিন্তু সেই মেরামতে মাটি ভরাটের পরিবর্তে নদী থেকে অবৈধপন্থায় বালি তোলে কৈয়ার ঢালা স্লুইসগেট মেরামত করা হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালের জুনে বন্যায় কৈয়ার ঢালা স্লুইসগেটের উভয়পাশ ভেঙ্গে যায়। ২০২৩ সালের মার্চে উপজেলা এলজিডি কতৃপক্ষের দরপত্রের মাধ্যমে ১কোটি ২ লক্ষ ৪ শত টাকা ব্যায়ে ভাঙ্গন মেরামতের সময় ব্যাবহার করা হয় নদীর পলি বালি। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় নয় লক্ষ টাকা ব্যায়ে স্লুইচগেটের খাল খনন করেন। কোটি টাকার মেরামতের মাস চারেক পর বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে রাস্তাটির একপাশ ধ্বসে যায় এবং ২০২৪ সালের আকস্মিক পানির তোড়ে স্লুইসগেটের উক্ত অংশ ভেঙ্গে যায়।
সরজমিনে স্লুইসগেট এলাকায় দেখাযায়, ড্রেজার মেশিন ও নৌকা নদীর পাড়ে নোঙ্গর করা রয়েছে। ড্রেজারের পাইপে ইতিমধ্য স্লুইসগেটের ভাঙ্গন অংশের অনেকাংশে বালি ভরাটও করা হয়েছে। এসময় আলাপকালে একাধিক ব্যাক্তি জানান, রাতের আঁধারে বালু ভরাট করা হয় তবে দিনে বালু ভরাট বন্ধ থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুর রহমান বলেন, রাতের আঁধারে চোরের মত নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমাদের গ্রাম এমনিতেই নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে, এমনভকবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গন আরো বাড়বে৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একজন স্কুল শিক্ষক জানান, এভাবে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি, গ্রাম এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের জন্য কালনী নদীর উপর নির্মিত সেতু হুমকিতে পড়ছে। বিষয়টি এখনই থামানো না গেলে আসছে বর্ষায় বিপর্যয়ে পড়বে গ্রাম,সড়কসহ ফসলি জমি।
পিরোজপুর গ্রামের নদীপাড়ের বাসিন্দা পায়েল মিয়াসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, বিগত দেড়যুগের বেশি সময় ধরে নদী ভাঙ্গনে আমাদের বসতভিটার অধিকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমৈ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে জিও ব্যাগ ফেলে গ্রামটির ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের কাজ শেষ করে৷ কিন্তু বিগত কিছুদিন যাবত ধরে একটি চক্র অবৈধভাবে অপরিকল্পিত ভাবে রাতের নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এখন আমাদের শঙ্কা যেকোন মুহুর্তে আমাদের বসত ভিটাসহ আশেপাশের ফসলি জমি পুনরায় নদী ভাঙ্গনে বিলীন হবে।
বালু উত্তোলনকারী সোহেল মিয়ার মুটোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে আমি এবং আমার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ফজলু বালু উত্তোলন করছেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র প্রকৌশলী আয়েশা আখতার সাথে মটোফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদারের মুটোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷এমনকি এ বিষয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সিলেট বেলা / সুমন / ০২