সিলেট উইমেন্স চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে জড়িত নিবন্ধিত নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। শুরুতে হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য নিয়ে ২০১৫ সালে নগরীর জামতলা আবাসিক এলাকায় জন্ম হয় প্রতিষ্ঠানটির। জন্মলগ্ন থেকেই এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিসেস স্বর্ণলতা রায়। এর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল মহিলা উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত পদক্ষেপগুলিকে সুরক্ষা, বিকাশ, সমর্থন এবং প্রচার করা। একই সাথে মহিলাদের ক্ষমতায়ন করে একটি আয় উৎপাদনকারী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে এবং জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, শুরু থেকেই লক্ষ্যের সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের কোনো মিল ছিল না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নীতিমালা থাকলেও তার তোয়াক্কা না করেই গেল ১৫ বছর শাসন করেছেন সভাপতি স্বর্ণলতা রায়। স্বর্ণ-লতার ডানে-বায়ে থাকা নিজস্ব কিছু লোকই ছিল উইমেন্স চেম্বারে নিয়ন্ত্রক। ফলে টানা ১৫ বছর নির্বাচন না করে দাপটের সাথে একাই প্রতিষ্ঠানটি শাসন করেন স্বর্ণলতা রায়। প্রকৃত নারী উদ্যোক্তাদের ভোটার করার বিপরীতে নিজ ইচ্ছায় সুবিধামতো সদস্য তৈরি করে তিনি খায়েস পূরণ করেছেন ষোলোকলা।স্বর্ণলতার স্বৈরাচারী আচরণের ফলে একাধিবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মনে ক্ষোভ চেম্বারের অধিকাংশ সদস্যের। এই ক্ষোভ থেকে শেষমেষ অভিযোগ পৌছায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেল ১৮ মার্চ সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নুরের জামান চৌধুরী এই দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
একই নির্দেশে নতুন প্রশাসক নিয়োগের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংগঠনটির আগের কার্যনির্বাহী কমিটিও বাতিল করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, সিলেট উইমেন চেম্বারের সাধারণ সদস্যদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর জবাবে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি সন্তোষজনক জবাব উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির কমিটি বাতিল করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়।
নতুন প্রশাসকের দায়িত্ব প্রাপ্তির পর আজ ২৩ মার্চ চেম্বারের সকল সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের আহবান করা হয়েছে। বৈঠকে সকল সদস্যদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার আহবান জানানো হয়েছে।
এদিকে সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রী নিয়ে নানা অভিযোগ তোলে ধরেন গাজি জিনাত আফজা নামের একজন সদস্য ও নারী উদ্যোক্তা। ২১ মার্চ তিনি নিজের ফেসবুক পোস্টে উইমেন্স চেম্বারের নানা অনিয়ম তোলে ধরে একটি সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি স্বৈরাচারের কবলমুক্ত করার দাবি জানান।
Gazi Zinath Afza নিজ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন,
👉সিলেট ওমেন্স চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ” বিগত স্বৈরাচার, অসহিষ্ণু সরকারের মতো ১৫ টি বছর স্বৈরাচারী করে গেছে সকল নিয়ম নীতির উর্ধ্বে গিয়ে।
২০১৫ সাল থেকে অধ্যাবদি তারা কোন নির্বাচনের আয়োজন করেনি। সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় তারা সিলেকশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বারবার সভাপতি ও পরিচালক নির্বাচন করেছে।
👉 সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে শুরু থেকেই তারা বিধি পরিপন্থী কাজ করেছে। বাণিজ্য সংগঠনের নীতিমালার বাইরে গিয়ে তারা টাকার বিনিময়ে নিজের সুবিধা মত ২ শ্রেণির সদস্য নিয়েছে। “সবুজ কুড়ি” (৮৪ জন সদস্য) ও ” সাধারণ সদস্যের তালিকা”(৩১ জন সদস্য) আদতে নীতিমালা অনুযায়ী ১১৫ জন পুতুল সদস্য, যারা চেম্বারে সদস্য হিসেবে অবৈধ। আমাদের এইসব ব্যবসায়ী বোনদের টাকা তারা কৌশলে তাদের পকেটে ভরেছে। দুঃখের বিষয় ভোটাধিকার সহ উনাদের কোনো ধরনের কোনো আইনত অধিকার নাই। এই বোনদের তারা তাদের সুবিধামত পুতুলের মতো নাচিয়েছে।
👉চাইলেই কোনো নারী উদ্যোক্তা সদস্য হতে পারতো না। সদস্য ফরম সীমিত রেখে চেম্বারকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলো।
👉 নীতিমালা না মেনে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছিল।
👉প্রতিবছর অডিট ও হিসাব দাখিল না করে কৌশলে বিভিন্নভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
👉উইমেন্স চেম্বার শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে থাকায় প্রকৃত নারী উদ্যোক্তারা এখানে কাজ করার সুযোগ পায়নি এবং কৌশলে তাদেরকে চেম্বারে সদস্য হতে দেয়া হয়নি।
এছাড়াও সাধারণ সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আরো অনেক দুর্নীতি তারা করেছে।
মাননীয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিলেট শহরের উইমেন চেম্বার সংশ্লিষ্ট সকল নারী উদ্যোক্তাদেরকে ( উইমেন চেম্বার এর মেম্বার) আগামী ২৩/০৩/২৫ ইং তারিখে দুপুর ২:০০ ঘটিকায় জেলা প্রশাসক এর সম্মেলন কক্ষে একত্রিত হবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আপনাদের সকলেই এই দুর্নীতি দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যাতে আপনাদের সঠিক অধিকার আপনারা পেতে পারেন।
নিম্নোক্ত ছবি (নামসহ) প্রকাশ করার জন্য আমি ক্ষমাপার্থী 🙏।কিন্তু আমার পক্ষে এত কম সময়ে আপনাদের সবার কাছে পৌছানো সহজ হবেনা তাই এখানে প্রকাশ করলাম। এই তালিকা ছাড়াও যারা এতদিন নিজেদের সদস্য জেনে আসছেন আশাকরছি সকলেই উপস্থিত হয়ে আপনাদের সাথে ঘটে যাওয়া এতদিনের বঞ্চনা নিয়ে, নিজেদের অধিকার আদায়ের সোচ্চার হবেন।
আমরা নিজেদের জন্য নয় আপনাদের জন্য, আপনাদের অধিকার আদায়ের কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের উপস্থিতি কামনা করছি।
একই সাথে তিনি লিখেন আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড লিস্টের সিলেটের সকল নারী উদ্যোক্তা এই পোস্ট গুরুত্ব নিয়ে পড়বেন। এবং আপনাদের পরিচিত সকল নারী উদ্যোক্তাকে জানাবেন।
আপনারা হয়ত অনেকেই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন “সিলেট উইমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি” কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী বাতিল ঘোষণা করে মহামান্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে উক্ত কমিটি বর্তমানে চেম্বারের কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। করলে সেটা অবৈধ হবে।