1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 21, 2025, 9:01 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

নারীর আজকের অবস্থান ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার ফল

  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, মার্চ ৭, ২০২৫
  • 65 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

নাসরীন জাহান

ভাষা আন্দোলনে নারীরা অংশগ্রহণ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ও নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন; এবং শেষবার ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানেও আমরা দেখলাম নারীদের ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তারপর রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন পদ-পদবি ও আলোচনা থেকে নারীদের নানাভাবে বাদ দেয়া হচ্ছে, অনেক জায়গায় ‘নারীদের নাই’ করে দেয়া হচ্ছে। এটা কেন? নারীদের অবদান অস্বীকার করার প্রবণতা ঐতিহাসিককাল থেকে ধারাবাহিকভাবেই হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা নারীদের নাই করে দেয়া হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ও অবদান রাখা নারীদেরও যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে নারীরা ‘শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন’, এ পরিচয়টাকেই সামনে আনা হয়েছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্যে-চলচ্চিত্রে-রাজনীতিতে- সব জায়গায়। যেন ‘ধর্ষিতা’ পরিচয় ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আর কোনো অবদান নেই। এটা হয়েছে পুরুষশাসিত সমাজের কারণে। আমরা তো পুরুষশাসিত সমাজে-রাষ্ট্রেই বাস করি, উন্নত বলি আর অনুন্নত বলি, সব জায়গাতেই পুরুষশাসিত। ফলে ৫ জন পুরুষ যদি চায় আমাদের ১০ জন নারীকে ফেলে দিতে পারে ধাক্কা দিয়ে। তারা যে কোনোভাবেই এটা পারে, কারণ নেতৃত্বটা তাদের হাতে আছে।

এখন অনেক মেয়েদের মধ্যেও পুরুষশাসিত মনোভাব ঢুকে গেছে। এমন কি আমাদের দুজন নারী একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এ দেশের নারীদের তেমন কল্যাণ হয়নি। এর কারণ ওই দুজন নারীও আসলে পুরুষতান্ত্রিক। তাদের অবয়বটা নারীর; কিন্তু মস্তিষ্কটা পুরুষের এবং আমাদের অনেক ক্ষমতাবান নারীও এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার। তাই দুচারজন নারীর ক্ষমতা দিয়ে সর্বসাধারণ নারীর অবস্থান বিচার করা যাবে না। আমাদের সাধারণ নারীরা আজও অবহেলা, বঞ্চনা ও নানা নিপীড়নের শিকার। এখন বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।

গণঅভ্যুত্থানের নারীরা হঠাৎ হারিয়ে গেল কেন? এটা আমার কাছে একটা জাদু মনে হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় দেখেছি তারা আছে সম্মুখভাগে, ভিডিও রেকর্ডগুলোতে এখনো আছে তারা; কিন্তু আন্দোলনের পর তারা সম্পূর্ণ ভ্যানিশ হয়ে গেল। আর দেখা গেল না তাদের। দল গঠন হলো, সমন্বয়করা আসলেন, সরকার গঠন করা হলো- কোথাও কোনো নারীকে দেখা গেল না। যেসব নারীরা নিজের জীবন বিপন্ন করে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছে, পরে তারা ইচ্ছে করেই হারিয়ে গেছে এটা হতে পারে না। এটা কেউ বললেই আমি বিশ্বাস করব না।

নারীরা নিজেকে নারী নারী করে পুরুষের কাছ থেকে আরও বেশি দূরে সরে যাচ্ছে। এখন আমার মনে হয় উপায় কী? নারীকে নাই করে দিয়ে কারা জয়ী হচ্ছে? পুরুষই তো জিতছে। একেকটা ৮ মার্চ আসে আমরা এসব নিয়ে লিখি, বলি; কিন্তু কোনো ফল হয় না। আজকে নয়, যেদিন থেকে আমি লেখালেখি শুরু করেছি, সেই ১৯৮০ সাল থেকেই লিখছি, বলছি; কিন্তু আমি তো নারীদের কোনো উন্নতি দেখি না। হয়তো পড়াশোনা জানা নারীর সংখ্যা বেড়েছে, তাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে; কিন্তু সম্মান কি বেড়েছে? আমি তো দেখি না এই ৪০ চল্লিশ বছরে নারীর সম্মান কোথাও বেড়েছে। এখন তো দেখি সম্মানের চেয়ে অসম্মান বেশি হচ্ছে। ইচ্ছা মতো ধর্ষণ হচ্ছে, ঘর-বাইরে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, যেভাবে খুশি সেভাবে নারীদের অত্যাচার করা হচ্ছে।

এখন তো নারীরা সামনেই আসতে পারছে না। বরং আগে ছিল। সুফিয়া কামাল ছিলেন, জাহানারা ইমাম ছিলেন। এখন তেমন নারী কোথায় আমাদের? নারীদের যদি সামনেই আসতে না দেয়া হয় ৮ মার্চ দিয়ে আমরা কী করব? আমি তো এর কোনো সুফল দেখি না।
নারীদের অস্বীকার করার প্রবণতা কেবল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নয়, এর পেছনে অনেক ধর্মীয় অপ্রচারও আছে। আমাদের অনেক হুজুররা তো ধর্ম নিজে নিজে বানাচ্ছেন। তারা নতুন নতুন ফতোয়া বানাচ্ছেন। নারীদের অপমান না করে তো তারা কথাই বলতে পারেন না। এর প্রভাব তো সমাজের ওপর পড়েছে। নারীর ওপর গিয়ে পড়েছে।

আমি সারাজীবন বলতাম আমি আশাবাদী; কিন্তু এখন তা বলতে পারি না। আমি জানি না ধীরে ধীরে কেন নারীদের নেই করে দেয়া হচ্ছে! আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম দেখেছি নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের অনেক ছেলে বন্ধু ছিল। আমরা নিজেদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতাম না। কিন্তু এখন দেখি ছেলেমেয়ে আলাদা হয়ে গেছে। ছবি তোলার সময় ছেলেরা এক পাশে দাঁড়ায়, মেয়েরা এক পাশে দাঁড়ায়। সাহিত্যের ক্ষেত্রে দেখছি ছেলেরা ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছে, মেয়েরা মেয়েরা আলাদা আড্ডা দিচ্ছে। আমাদের সময় এ নিয়ে চিন্তা ছিল না কে ছেলে, কে মেয়ে। ভ্রমণেও নারী-পুরুষ আলাদা যায়। এ দেখে আমি আর কী আশা করব? এখন তো এসব নিয়ে কথাও বলা যায় না। আপত্তি তুললেই একদল প্রতিবাদ করবে।

নারী তো এখন পোশাক-রাজনীতিরও শিকার। নারীর পোশাক নিয়ে তো কথা চলছেই। এখন তো এসব নিয়েও কথা বলা যাবে না। যেখানে ইরানে-সৌদি আরবের নারীরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে সেখানে আমাদের দেশের নারীদের আরও ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ এর মধ্যে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে, নারী নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে। নারীকে পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেও তো ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। অনেক নারীও এটা বুঝতে পারছে না, বলছে তার পোশাক তার স্বাধীনতা। এটা ইদানিং শুরু করেছে ‘আমার পোশাক আমার স্বাধীনতা’; কিন্তু এটা আসলে পোশাকের পরাধীনতা।

আমার আসলে দম বন্ধ লাগে। বুক ফেটে যায়; কিন্তু কিছু বলতে পারি না। বলেও কী লাভ হবে বুঝতে পারি না। এখন শিল্প-সাহিত্যেও সেভাবে নারী জাগরণের বিষয়টা নেই। যদিও এখন অনেকে ভালো লিখছেন; কিন্তু তাদের মধ্যে নারী জাগরণের, নারী অধিকারের বিষয়টা তেমন নেই। নারীরা সব জায়গাতেই সংকোচিত হয়ে গেছে। এর কারণ সমাজে প্রগতিশীলতার চর্চা নেই। তাও আমি আশা রাখতে চাই। যদি আবার আমাদের দেশে আলো আসে, প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা হয় তাহলে হয়তো নারীরা মুক্তি পাবে; কিন্তু কাছাকাছি সময়ে আমি এমন কোনো লক্ষণ দেখছি না। হয়তো আরও বিশ-ত্রিশ বছর পর হতে পারে। আমাদের মেয়েরাও হয়তো দেখবে না, তার মেয়েরা হয়তো সুফল পেতে পারে, কারণ এভাবে একটা দেশ দীর্ঘকাল চলতে পারে না। এক সময় না এক সময় নারীর মুক্তি ঘটবে এটাই শেষ আশাবাদ। ভৌগোলিকভাবে আমরা আফগানিস্তানও না, ইরানও না।

এদেশের মেয়েদের তো বাইরে কাজ করে খেতে হবে। গার্মেন্টসের মেয়েরা কাজ ছেড়ে দিলে এ দেশ বাঁচবে? বাইরের জগতে প্রচুর নারী কাজ করছে, এটাই আশার দিক। অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া নারীর মুক্তি সম্ভব নয়, আজীবন বলেছি। এখন প্রচুর নারী অর্থনৈতিকভাবে সফল। নারী উপার্জন পুরুষের সংসারেও জরুরি হয়ে উঠছে। আমি আশাবাদী, এই জরুরি হয়ে ওঠা অবস্থান থেকেই নারী একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। বোধবুদ্ধি সম্পন্ন কোনো মানুষ জীবনভর পরাধীনতার শৃঙ্খল পায়ে বেঁধে রাখতে পছন্দ করবে? আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি- একদিন এ দেশের মেয়েরা রুখে দাঁড়াবে। আমি বলি তোমরা একটু সচেতন হও, নিজের সম্পর্কে জানো, নিজের অধিকার সম্পর্কে জানো, যেদিন আমাদের দেশের নারীরা মুক্তি পাবে সেদিন ৮ মার্চ সফল হবে।

নাসরীন জাহান: কথাশিল্পী

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews