কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পিয়াইন নদীতে শ্যালো ও পরিবেশ বিধ্বংসী ‘বোমা মেশিন’ বসিয়ে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। প্রশাসনকে উপেক্ষা করেই ২ কোটির বেশি ঘনফুট বালু লুট করে স্তূপ ও বিক্রি করছে বালুখেকোরা। যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকার অধিক। এখনো রাতের আঁধারে ইজারা বহির্ভূত পিয়াইন নদীতে স্টিলবডির নৌকা দিয়ে নিয়মিত হচ্ছে বালু লুট।
এ বছরের মার্চ থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। উপজেলার বুড়িডহর হাজী হাছন আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লামনীগাঁও পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পিয়াইন নদীর দুপাশে থাকা বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, মসজিদ, কবরস্থান, ঈদগাহ, ফসলি জমি, রাস্তা, শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প (গুচ্ছগ্রাম) সহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। প্রভাবশালীদের ভয়ে অভিযোগ করে না কেউ। এ ধরনের ঘটনায় মামলাও নেই। প্রশাসনও নিশ্চুপ।
সরজমিনে গিয়ে বুড়িডহর, গুচ্ছগ্রাম ও লামনীগাঁওয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার প্রভাবশালীরা এ বালু উত্তোলন করে স্তূপ করে রেখেছে। এখান থেকে নিয়মিত বিক্রি করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করে পার্শ্ববর্তী ছাতকসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।
বালুর বড় বড় স্তূপ কারা করেছে তা উঠে এসেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। উপজেলায় ও রাজনীতিতে তারা বেশ প্রভাবশালী।
উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আজমান আলী, আলী রাজা, পশ্চিম ইসলামপুর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াদ আলীর ছেলে আক্কাস আলী ও শওকত আলী, উপজেলা বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক উসমান খাঁ, সহমুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন আরিফ, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা, ছাত্রলীগ নেতা সুমন, স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবন, চাটিবহর গ্রামের আব্দুল কাদির, বিএনপি নেতা আমির হোসেন, তাজ উদ্দিন, আশিক, ময়না, চাতলপাড় গ্রামের ইয়াকুব আলী, কাঁঠালবাড়ি গ্রামের লুলু মিয়া, ইয়াছিন, ইফতেখার আহমদ, রইছ আলী, মুসা মিয়া, আব্দুস সালাম, রাজ্জাক ভূঁইয়া, গফুর মিয়া, শাহাদাত খাঁ, আরাফাত, মাসুক, শাহীনুর, আব্দুল গফুর, দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের জুয়েল, রুহেল, গৌ-খালেরপার গ্রামের যুবলীগ নেতা আলী আব্বাস, আলী হোসেন, রুস্তম আলী, রাজনগর গ্রামের হাজী সগির, বর্ণি গ্রামের আ.লীগ নেতা আজির উদ্দিন, বুড়িডহর গ্রামের জামাল, গয়াস মিয়া, আলী হোসেন, সোহেলসহ আরও অনেকেই অবৈধ বালুর স্তূপ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
গেল বছরও একইভাবে বালু লুট করেছিল তারা। এ লুট নিয়ে ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ যুগান্তরে ‘কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আতঙ্ক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরই টনক নড়ে প্রশাসনের। জব্দ করে বালু নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের সাথে সমঝোতা করে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে বালু নিলাম করে প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বালু স্তূপকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বালু স্তূপ করেছে যাতে গত বছরের মতো প্রশাসন জব্দ করে এবং বালুর পরিমাণ কম দেখিয়ে অল্পমূল্যে কিনে সহজেই বিক্রয় ও পরিবহণ করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসন জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য জুয়েল আহমদ যুগান্তরকে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের গ্রামের হাজী হাছন আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়েছে। এমনকি দুই কিলোমিটারজুড়ে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন স্থাপনাসহ ফসলি জমি হুমকিতে রয়েছে।
পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী ফকরুল আহমেদ বলেন, পিয়াইন নদীর বালু লুট দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।