পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে কম নম্বর দেওয়া, শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক ইমতিয়াজ মাশরুরের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে এসব অভিযোগ তদন্তাধীন থাকলেও এখনো কোনো সমাধান আসেনি। এর মধ্যেই মনোনীত হয়েছেন উপাচার্য পদকে।
গত ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম তার হাতে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ তুলে দেন।
পুরস্কারের অংশ হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকার চেক, সনদপত্র ও মেডেল।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের লক্ষ্যে অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মিটিংয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার মান, পরীক্ষার খাতায় অনিয়মসহ শিক্ষক কর্তৃক বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের হেয়প্রতিপন্ন করা, এমন সব দাবি উপস্থাপন করেন। শিক্ষকরা তখন দাবিগুলো মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
শিক্ষার্থীদের দায়ের করা অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল, ২০২০-২১ সেশনের সব শিক্ষার্থীকে ‘বই না আনার দায়ে কান ধরিয়ে’ দাঁড় করে রাখা, নতুন ডিসিপ্লিন হিসেবে নিজস্ব ক্লাসরুম না থাকায় বারবার খোঁটা দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের তো ক্লাসরুম নাই, অন্য ডিসিপ্লিন থেকে ধার করে নিয়েছো’। ২০২০-২১ সেশনের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী তার কোর্সে ইন্টারনালে ভালো নম্বর পেয়েও ফাইনালে ফেল করে।
এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে, পরে সহপাঠীরা তাকে রক্ষা করে। দুঃখপ্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি আমার জীবনে কোনো পরীক্ষায় ফেল করিনি, ইন্টারনালে ৩০ এর বেশি মার্কস পেয়েও কিভাবে আমি ফেইল করি!
এছাড়াও তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় তিন ব্যাচের শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানের কাছে স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত আবেদনের মাধ্যমে উক্ত শিক্ষককে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ডিন অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে গত ১৩ মে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ডাকা হয়। তবে যেসব শিক্ষার্থীকে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়, তাদের মধ্যে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ৩ জন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বস্ততা হারান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা অভিযোগ দায়ের করেছে তাদেরই ডাকা হয়েছিল।
অনেককে না পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যাচ থেকে ডাকা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিন্ধান্ত আসবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো দৃশ্যমান বিচার করেনি প্রশাসন। তদন্ত কমিটি করেছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফলাফল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি।
অভিযোগ থাকার পরেও উপাচার্য পদক মনোনীত করার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসনের একপাক্ষিক এবং স্বজনপ্রীতিমূলক সিদ্ধান্ত, যে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করতে পারে সেই শিক্ষক কী করে উপাচার্য পদক মনোনীত হতে পারেন?
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নুর আলম বলেন, এ ঘটনার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনের কাজ শেষ করেছে। সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত আসবে। আসলে এটি সবাই চায় দ্রুত সমাধান হয়ে যাক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক দৃঢ় থাকুক এটা চাওয়া, আমরা চাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগ নেব। আমরা চাই না এ ধরনের বিষয় দীর্ঘায়িত হোক। তদন্ত প্রতিবেদনে তার আচরণগত কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তিনি একজন মেধাবী গবেষক, আমরা তাকে হারাতে চাই না। তার অসামান্য গবেষণা অবদানের জন্যই তাকে উপাচার্য পদকে ভূষিত করা হয়েছে।