সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদে এবার ‘মব করে’ ৩শ কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। টানা পাঁচ দিনে এসব বালু লুট করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপি কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, এভাবে অবৈধ বালু লুট বন্ধ না হলে নদের ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা আল জেদান ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক একই রকম তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, জাদুকাটার ইজারাবিহীন এলাকা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে বালু লুট করছে। তারা লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের উত্তরে সাহিদাবাদ, কেউরি, কাঞ্চনখালের কয়েকশ একর জায়গায় প্রতি ঘনফুট খনিজ বালু উত্তোলনে ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে আসছে। জাদুকাটার এসব জায়গা সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।
লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ৭ থেকে ১১ অক্টোবর পাঁচ দিনে গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম, হারুন, জাহাঙ্গীর, তমিজ, ফানা উদ্দিন, এজিবুল, ফুচকা জাহাঙ্গীর, গোলাপ মাহমুদ, খাঁজা মাঈনুদ্দিন ও আবুবক্করের নেতৃত্বে কয়েক গ্রামের লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা হাতে ‘মব তৈরি করে’ প্রায় ৩শ কোটি টাকার বালু লুট করেছে।
জানা যায়, যে খনিজ বালু লুট হয়েছে দেশের অন্য কোনো নদীতে এই বালু পাওয়া যায় না। এই বালুর মান ২.০৫। ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়াই এর মূল্য প্রতি ঘনফুট ১০০ টাকা। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ ঘনফুট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কয়েক হাজার ছোট ছোট স্টিল বডির ট্রলারে বালু লুট হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই অন্তত ৬০ কোটি টাকার বালু লুট হয়।
এ ব্যাপারে জাদুকাটা বালু মহাল-১ এর ইজারাদারের পক্ষে মোশারফ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে তাহিরপুর থানায় ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-লাউড়েরগড়ের মৃত কিবরিয়ার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম ওরফে খেলু মিয়া, আবুল কাসেমের ছেলে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খাজা মাঈনুদ্দিন, মকবুলের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী আবুবক্কর, ময়দরের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নানের ছেলে আলহাজ, জাহিদ মিয়ার ছেলে শাজাহান, শাহিন আলম, বিল্লাল আমিনের ছেলে হেনাজ, জালালের ছেলে আলমগীর, পুরানলাউড়ের শুক্কুর মাহমুদের ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাপ মাহমুদের চাচাতো ভাই শিপন, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মান্নান, ঘাগটিয়া প্রামের মৃত নুর জালালের ছেলে কথিত পরিবেশবাদী নেতা কাসমির রেজা ওরফে কাসমিরুলের ভাই আস্তারুল।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের শিগ্গিরই আইনের আওতায় আনা হবে।
লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির বললেন, ৭ অক্টোবর গভীর রাতে কমপক্ষে দুই হাজার বাল্কহেড একসঙ্গে ঢুকেছে। একেকটি বাল্কহেডে ৮-১০ জন করে শ্রমিক ছিল। বিজিবির লাউড়েরগড় ক্যাম্পের পক্ষে এত মানুষকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর লুটের বিষয়টি জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, জাদুকাটার ইজারাবিহিন চর, নদীরপাড় কাটার ঘটনায় ইজারাদারকে শোকজ করা হয়েছে। গেল পাঁচ দিন ধরে যারা পাড় কাটায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে : বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, জাদুকাটা নদে ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে কিছু কুচক্রী মহল এবং অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছে। এতে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে তীরের দিকে লাউড়েরগড় এলাকায় বিজিবির বিওপিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।