ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ডেঞ্জার জোন সাত কিলোমিটার। হবিগঞ্জের বাহুবলের নতুনবাজার থেকে আমতৈল এবং মৌলভীবাজারের প্রবেশমুখ চা কন্যা ভাস্কর্য পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এই ডেঞ্জার জোন-খ্যাত অংশটি এখন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক এ মহাসড়কে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। নির্জন চা ও রাবার বাগান ভেতর মহাসড়কের এই ৭ কিলোমিটার অংশে রয়েছে পাহাড়ি উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা পথ। সন্ধ্যার পর থেকে এই অংশে চলাচলকারী যানবাহন চালক-যাত্রীরা ডাকাত আতঙ্কে থাকেন। ৭ কিলোমিটার সড়ক নিরাপত্তায় সাতগাঁও হাইওয়ে থানা পুলিশ ও কামাইছড়া পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে। ফাঁড়ি পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এই সড়ক অতিক্রম করতে ভয়ে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ আঞ্চলিক মহাসড়কে ডাকাত চক্রের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে স্থানীয়, পার্শ্ববর্তী চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র সক্রিয় রয়েছে। সর্বশেষ গত ১লা এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ডেঞ্জার জোনের রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড এলাকায় ৩টি প্রাইভেটকারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে যানবাহনে ভাঙচুর ও নারী যাত্রীদের প্রহারের ঘটনা ঘটে। এতে সড়কের দু’পাশে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, কামাইছড়া পুলিশ ফাঁড়ির টহল টিম থাকলেও ঘটনার ১ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসে সাতগাঁও হাইওয়ে থানা পুলিশ। এর আগে গত ১৬ই মার্চ রোববার রাত ১১টায় একই এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা মুখোশ পরে থাকার কথা জানায় যাত্রীরা। এ ছাড়া ৮ই ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড রাবার বাগান এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে বিভিন্ন যানবাহন আটকিয়ে ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ সময় ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে আসার পথে হানিফ পরিবহনের বাসটি ডাকাতের কবলে পড়ে। বাসের যাত্রী মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এড. নিয়ামুল হক তার ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের সাহায্য চেয়ে ৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ এলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
এর আগে গত বছর ২১শে নভেম্বর রাতে হবিগঞ্জ থেকে কাপড় নিয়ে এক ব্যবসায়ী মৌলভীবাজার যাবার পথে রাবার বাগান এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েন। এ সময় ডাকাতরা সিএনজিতে থাকা ৩ লাখ টাকার মালামাল ও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়। পরে পুলিশ হবিগঞ্জের অলিপুর এলাকা থেকে সিএনজি ও ডাকাতির মালামাল উদ্ধার ও ৭ ডাকাতকে আটক করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পণ্যবাহী গাড়িচালক ও সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে ডাকাতদের সঙ্গে। এরা সংখ্যায় ৪০-৫০ জন। ১৮ থেকে ২০ জন ২-৩টি দলে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে। এই সড়কে পুলিশের অপ্রতুল টহলের সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা।
কামাইছড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই এখলাছুর রহমান ভুঁইয়া জানান, ‘সড়কের দু’পাশেই জঙ্গল, চা বাগান। পুলিশ টিম একদিকে গেলে অন্যদিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ২ মিনিটের মধ্যে গাছ কেটে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ডাকাতি করে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।’ এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি জানান। সাতগাঁও হাইওয়ে থানার ওসি মো. সাইফুর রহমান জানান, ‘কামাইছড়া এলাকার ডাকাতি প্রতিরোধের জন্য ওই ফাঁড়ি রয়েছে। তিনি বলেন, উল্লেখিত ৭ কিলোমিটার এলাকা ডাকাতের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ১৮-২০ জনের পেশাদার ডাকাত সক্রিয় রয়েছে। মিরপুর বাজার থেকে হাইওয়ে সড়কের সাত কিলোমিটার এলাকায় ১৬/১৭টি বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে চা বাগানের গাছে ও জঙ্গলে আচ্ছাদিত। কম লোকবল এবং যানবাহনের ত্রুটি থাকায় রাতের টহলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে’ বলে ওসি জানান।