শামছুল আলম আখঞ্জী, তাহিরপুর প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরাঞ্চলে চলছে ধান কাটাই- মাড়াই। মাড়াই শেষে একই সাথে চলছে ধান শুকানোর কাজ। ফলে এখন এইসব কাজে ব্যস্থ সময় কাটছে কৃষকদের। রবিবার (২০এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার মাটিয়ান হাওর ঘুরে দেখা যায়,পাকাঁ ধান কর্তনে অধিকাংশ জমিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছে কৃষক।
তবে কিছু স্থানে নালা খাল থাকায় সেখানে এখনো হাতের কাস্তে দিয়ে ধান কাটতেও দেখা গেছে।এসব এলাকায় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে কিছু জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার শনি মাটিয়ান, মহালিয়া, গুমরা আলির আংশিক হাওরসহ বিভিন্ন ছোট হাওরে ১৭হাজার ৫শত ৯ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১লক্ষ ১৩হাজার মেট্রিক টন চাউল,( ৬৮ হাজার ৬শত১৮ মেট্রিক টন ধান),যার বাজার মূল আনুমানিক ৩শত কোট ৩৬ লক্ষ টাকা। ধান কর্তনের জন্য ৭১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কাজ করছে। এর মধ্যে ৫৪টি তাহিরপুরের বাকি ১৭টি অন্য উপজেলা। এ পর্যন্ত ৩০%,(প্রায়) ৪হাজার ৫০হেক্টর জমি ধান কর্তন শেষ হয়েছে।
শনির হাওর পাড়ের কৃষক আলমগীর কবির বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে, এখন গৃহস্থালীর কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। সকাল- সন্ধ্যার কোন তফাত নেই- যেকোনো সময় জমির ধান কাটতে পারি। শুধু সিরিয়াল পেলেই হয়। কাটার পর রাত্রি যাপন করতে হয় না, ধান সঙ্গে সঙ্গে টলিবা অটোরিকশা দিয়ে বাড়ির খলায় আনা যায়। এতে সময় ও কষ্ট দুটোই বাঁচে। কামলার টেনশন নেই। আমি দুই দিনে দশ কেয়ার জমির ধান কেটেছি। আর কয়েক দিন মেঘ বৃষ্টি না হলে বাকি জমির ধানও কেটে শুকিয়ে ঘরে তুলতে পারব।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, এবার ভালো ফলন হয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক কৃষকের জমির ধান ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে। আমার ইউনিয়ন তুলনামূলক ভাবে নিচু অঞ্চল হওয়ায়, সব জমিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন পৌঁছাতে পারে না।তাই সেখানে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে, এর ফলে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। এরপর ও আশাবাদী, বৈশাখের ১৫তারিখের মধ্যে হাওরের সব ধান কর্তন শেষ হবে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ৪হাজার ৫০হেক্টর প্রায় ( ৩০%) ধান কর্তন শেষ হয়েছে। জাতভিত্তিত ধানের উৎপাদন এবার প্রতি বিঘায় ১৬ মন হতে ২৬ মন পর্যন্ত হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে কাটাই-মাড়াই যন্ত্র রয়েছে হাওরে। শ্রমিক সংকট নেই। কৃষকরা যেন দ্রুত ধান কাটতে পারে, সেজন্য আমরা প্রতিদিন হাওর পরিদর্শন করছি। আশা করছি বৈশাখের ১৫তারিখের মধ্যেই সব ধান কর্তন শেষ হবে।