1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 4:52 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

দেশে-বিদেশে বিক্রি হচ্ছে সিলেটের তরুণ-তরুণীরা

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০২৫
  • 226 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

সিলেটে সক্রিয় একটি মানবপাচারকারী চক্র। টার্গেট করে করে তরুণ-তরুনী শিকার করাই এই চক্রের অন্যতম কাজ। কখনো প্রেমের ফাঁদ, কখনো বড় চাকুরী আবার কখনো বিদেশে পাঠানোর নাম করে শুরু হয় উদ্যাগের প্রথম পর্ব। এই কাজের জন্য নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকজনই তাদের প্রধান টার্গেট। লক্ষ্য পূরণে শুরু হয় পরিবারগুলোতে ওই চক্রের আনাগোনা। আবার নগরীর কিছু কিছু ট্র্যাভেলস এর সাথেও রয়েছে পাচারকারী চক্রের সখ্যতা। চক্রের লোভনীয় অফারে কমিশন ভিত্তিতে কাজ করছে ট্র্যাভেলস এজেন্সিগুলো। মহিলা এজেন্ট নিয়োগ করে গ্রামে গ্রামে গরিব ও অসহায় পরিবারের তরুণ- তরুনীদের উদ্ধুব্ধ করে তারা। আর এভাবেই সংগ্রহ শেষে তাদেরকে কখনো পাঠানো হয় ভারতে, কখনোবা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারপর চুক্তি অনুযায়ী তাদের তোলে দেওয়া হয় অপর একটি চক্রের কাছে। দেশে কিংবা বিদেশে থাকা ওই চক্র তখন তরুণীদের বন্দী রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করাতে থাকে। আর তরুণদের জিম্মি করে মুক্তিপন দাবির কাজ করে। প্রস্তাবে রাজী না হলে শুরু হয় তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন।

সম্প্রতি সিলেটের জাফলং সীমান্ত দিয়ে ভারতে বেশ ক’জন তরুণীকে পাচার করে ৭ সদস্যের একটি পাচারকারী চক্র। ওই চক্রের কবল থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হয় নীপা বেগম নামের এক তরুণীকে। তার দেওয়া চাঞ্চল্যকর সেই তথ্য এখন সারা সিলেটে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ। চক্রের সেই ৭ সদস্যের নামও জানালেন নীপা বেগম। তারা হলেন, জাফলংয়ের আলী মিয়া, বুলবুল আহমেদ, আজাদ মিয়া , জানু, ফখরুল ইসলাম ও ছায়েদ আলী। এই চক্র শুধুমাত্র ভারতে বাংলাদেশী নারীদের পাচার করার কাজ করে থাকে। নীপার দেওয়া তথ্য মতে, এদের সাথে রয়েছে সায়েস্তাগঞ্জের সাব্বির। সে প্রথমে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে পরে বিয়ে করে মেয়েদের এই গ্রুপের হাতে তোলে দেয়। সিলেট বিভাগের নিরাপদ সীমান্ত হিসেবে জাফলং ইউনিয়নের সীমান্ত সকল কিছুতে সেরা সুবিধা বেশি। পরে গ্রুপের সদস্যরা মেয়েদের ভারতে পাচার করে থাকে অবৈধ দেহ ব্যবসার জন্য। উদ্ধার হওয়া তরুণী বলেন ভারতে একটি বাসায় প্রায় ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশী নারী আছে।

এদিকে গেল মাসের ৭ এপ্রিল সিলেটের শাহপরান এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় দুই কিশোরী। ঘটনার ১৬ দিন পর গত ২৩ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ২৮ এপ্রিল শাহপরান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন এক কিশোরীর মা। মামলার প্রেক্ষিতে শাহনাজ ও তার স্বামী মুরাদকে গ্রেপ্তার করে সিলেট মহানগর পুলিশ। সিলেট মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক ছগির আহমদ তাদের প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পোশাক কারখানায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিক্রি করে দেওয়া হয় পতিতাবৃত্তির জন্য।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন জানান, শাহপরান এলাকার পিরের চক গ্রামের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম ও তার স্বামী মুরাদ আহমেদ রাজু ওই দুই কিশোরীকে চাকরির কথা বলে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করেন। পরে কক্সবাজারের এক হোটেলে নিয়ে গিয়ে তাদের চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধ্য করেন।

এদিকে গত মাসের ১৫ এপ্রিল বিকেলের দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ৬ যুবক কাজের খোঁজে কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৬ এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। অবশেষে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধারের কথা জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন মো. লুকুছ আলীর ছেলে রশিদ আহমদ, ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ, আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ, আব্দুল মান্নানের ছেলে এমাদ উদ্দিন, সুফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান ও মৃত ছবর আলীর ছেলে আব্দুল জলিল। তারা সবাই সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ঈদগাঁও বাজার এলাকার বাসিন্দা। ৬ যুবককে ট্রলারে করে টেকনাফ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে নিখোঁজদের স্বজনরা টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তাদের উদ্ধার করা হয়।

তবে এই দুটি ঘটনায় উদ্ধার হলেও সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া অনেকের এখনও সন্ধান মিলেনি। গত এপ্রিল মাসে সিলেট মহানগর এলাকায় ৬টি থানায় নিখোঁজের এমন ৯৪টি জিডি হয়, যার মধ্যে ৬৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে অনেক ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত আসে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

এদিকে ছাতকে এসএসসি পরীক্ষার্থী রিমা নামের এক ছাত্রী নি’খোঁ’জ হয়েছে। শুক্রবার ৯মে সকাল ৯ টায় উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের মাটিয়ারচর এলাকায় এঘটনা ঘটে। সে উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের মাটিয়ারচর গ্রামের আলী আকবরের মেয়ে রিমা বেগম (১৭)।

জানা যায়, গত ৯মে শুক্রবার সকাল ৯ টায় মাটিয়ারচর গ্রামের বাড়ী থেকে বাহির হয়ে গেলেও আর ফিরে আসেনি। সন্ধ্যার পরেও বাড়িতে না ফেরায় সম্ভাব্য সকল আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো স’ন্ধা’ন পাওয়া যায় নি। এঘটনায় নি’খোঁ’জ শিক্ষার্থীর ভাই আলী ইমরান থানায় সাধারন ডায়রী (নং ৪৯৩) তাং ১০/০৫/২০২৫ইং করেন।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, মানবপাচারের পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

তবে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, চাকরির জন্য বা অপরিচিত কারো সাথে কোথাও যেতে দেওয়ার আগে পরিবারের উচিত বিষয়টি থানায় জানিয়ে রাখা। একই সাথে এমন ফাঁদে যেন কেউ না পড়েন এজন্য সচেনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews