সিলেটে একটি পোস্টার সাটাঁনো নিয়ে রহস্য দানা বেধেঁ উঠেছে। হঠাৎ করে কেনই বা এই পোস্টার? পোস্টার সাটানোই বা হলো কার নির্দেশে। এই পোস্টার কি দলীয় সিগন্যাল নিশ্চিত করলো-নাকি ঘটনার মোড় অন্যভাবে ঘুড়িয়ে দিতেই এমন প্রচেষ্টা। যদি এই ঘটনা সিলেটের রাজনীতির প্রেষ্টিজ ইস্যুকে প্রতিষ্টা করার জন্য হয়ে থাকে, তাহলে হিসেব মিলানো খুবই সহজ। এই সহজ হিসেবের অংক যিনি কষছেন, তিনি কে ? এমন প্রশ্ন সিলেটের বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। বিশেষ করে সিলেটের বিএনপি দলীয় সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সম্প্রতি দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে যুক্তরাজ্যে সফররত অবস্থায় এমন পোস্টার এখন বেশি করে আলোচিত হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্ন- সিলেট-১ আসনে কী কাঙ্খিত প্রার্থীতা পাচ্ছেন না আরিফুল হক? যুক্তরাজ্যে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের সাথে সাক্ষাতকালে হয়তোবা তেমন ইঙ্গিতই পেয়েছেন তিনি। যে কারণে হিসেব পাল্টে দিতেই সিলেট-১ আসনে তারেক পত্নী ডা. জুবাইদা রহমানকে দেখতে চাই-এমন পোস্টারের আবির্ভাব। তাছাড়া, পোস্টারে কারো নাম উল্লেখ নেই, নেই কোন সংগঠন বা ব্যক্তির পরিচয়। এমনকি প্রচারে কারা-সেটিরও উল্লেখ নেই। ফলে পোস্টারকে কেন্দ্র করে ভেসে বেড়াচ্ছে একাধিক প্রশ্ন।

যেভাবে সন্দেহ >
পোস্টার দেখে সন্দেহের ডাল-পালা যখন বিস্তৃত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে বিষয়টি আরো পরিস্কার করে দিলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তারেক আহমদ খান। তিনি ১৫ মে বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন। সেখানে তিনি পোস্টার সাটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে লিখেন, পোস্টার যিনি লাগিয়েছেন, তারা বিএনপির অন্যতম উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর গাড়ি চালক কামরুল এর লোকজন। অতএব হিসেব অনেকটা পরিস্কার।

ফেসবুক পোস্টে যা লিখেন তারেক আহমদ খান >
তারেক আহমদ খান লিখেন, ‘সিলেটের গর্ব ডা: জোবায়দা রহমান প্রার্থী হলে দলের কারোই আপত্তি থাকার কথা না, বরং খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু এই কার সৌজন্যে লাগানো হলো সেটা অন্তত লেখা থাকলে ভালো ছিল, নাকি সরাসরি কেন্দ্র থেকে প্রচারিত। ছাপা কে করিয়েছেন জানা না গেলেও লাগিয়েছেন বিএনপির অন্যতম উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর ড্রাইভার কামরুল এর লোকজন !

সিলেট-১ আসন যে কারণে প্রেষ্টিজ ইস্যু >
সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বহুদিনের। প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে একসময় ছিল মরহুম অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও এম. ইলিয়াস আলী বলয়। এই দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ এক সময় চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছিল যে, সাইফুর রহমান রাজনীতি ছাড়ার হুমকি দেন। পরে খালেদা জিয়ার মধ্যস্থতায় ইলিয়াসপন্থীরা তাঁর কাছে ক্ষমা চান। সাইফুর রহমান নেই ১৬ বছর, অপরদিকে ১৩ বছর যাবত সন্ধান নেই ইলিয়াস আলীরও। তবুও তাদের দুইজনের নামেই চলছে সিলেটে বিএনপির রাজনীতি। এর মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী সাইফুর রহমান পন্থী হিসেবে পরিচিত অন্যদিকে খন্দকার আবদুল মোক্তাদির ইলিয়াস অনুসারী বলে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। দলীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই গ্রুপের বাহিরেও রয়েছে একটি গ্রুপ, যারা দুই নেতা নয় বরং দলীয় আনুগত্যে সরাসরি দলীয় নির্দেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মোক্তাদিন দু’জনেই দলীয় মনোনয়নে সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। খন্দকার মুক্তাদীর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলেও দলের প্রতি অনুগত থেকেছেন এবং এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আরিফুল হক চৌধুরী অবশ্য সিলেট-৪ আসনও চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য সফররত অবস্থায় গণমাধ্যমে তিনি সিলেট-১ আসন বিষয়ে জানতে চাইলে পুরনো কায়দায় গণমাধ্যমে ‘যদি’ ‘তবে’ এর মধ্যে তিনি উত্তর দেন। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কোন গ্রিন সিগন্যাল পান নি। ফলে সিলেট-১ আসনে তারেক পত্নীর আওয়াজ তোলে প্রতিদ্বন্দ্বিকে ঘায়েল করতে পারবেন তিনি।

জুবাইদা রহমান যেভাবে আলোচনায় >
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের স্ত্রী সিলেটের সন্তান ডা. জুবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর শাশুড়ি ও দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেশে ফিরেন তিনি। তাকে ঘিরে নতুন ঐক্যের সম্ভাবনাও দেখছে সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী হিসেবে বেশি আলোচিত হলেও পেশায় চিকিৎসক জুবাইদা রহমানের পরিবারের সাথে সিলেটের জন্মের সুতো খুব নিবিড়ভাবে বাঁধা। সিলেটের কৃতিসন্তান নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর কন্যা ডা. জুবাইদা রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনয়াক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ডা. জুবাইদা রহমানের চাচা। সুতরাং রাজনীতিতে ডা. জুবাইদা রহমানের অংশগ্রহণ শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়, সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিরসনেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অনেক হিসাবও হবে নতুন করে।