নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনা করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। কলম্বোতে অনুষ্ঠিত নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে একেবারে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছে নিগার সুলতানার দল। ৭ উইকেটের বিশাল জয় আর হাতে ছিল ১১৩টি বল — যা ম্যাচে বাংলাদেশের আধিপত্যের চিত্রই তুলে ধরে।
ম্যাচের শুরুতেই টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। তবে তাদের শুরুটা হয় ভয়াবহ। বাংলাদেশের পেসার মারুফা আক্তার ইনিংসের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে তুলে নেন দুই উইকেট। গোল্ডেন ডাকের শিকার হন পাকিস্তানের দুই ব্যাটার উমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিন।
মাত্র ২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। পরে কিছুটা সামলে নিতে চেষ্টা করেন রামিনা শামিম ও মুনিবা আলি, তবে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। স্পিন আক্রমণে নামা নাহিদা আক্তার ১২তম ওভারে মুনিবাকে ফিরিয়ে দেন এবং পরের ওভারে রামিনাকেও নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে সাজঘরে পাঠান।
পাকিস্তানের মিডল অর্ডার থেকেও কেউই বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। সিদরা নওয়াজ, আলিয়া রিয়াজ, ও ফাতিমা সানা কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও তা দলের রানকে সম্মানজনক করতে যথেষ্ট ছিল না।
এক পর্যায়ে ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে পাকিস্তান। এরপর দ্রুতই তারা ১২৯ রানে অলআউট হয়ে যায় ইনিংসের ৩৮.৩ ওভারে।
বাংলাদেশের হয়ে দারুণ বোলিং করেন স্বর্ণা আক্তার, মাত্র ৫ রান খরচায় তুলে নেন ৩টি উইকেট। মারুফা ও নাহিদা পান ২টি করে উইকেট। ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান নেন একটি করে উইকেট।
১৩০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৭ রানের মাথায় ফারজানা হক ২ রানে আউট হন। এরপর শারমিন আক্তার কিছুক্ষণ লড়লেও ৩০ বলে ১০ রান করে ফিরে যান।
এই অবস্থায় দলের হাল ধরেন রুবাইয়া হায়দার। প্রথমে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সঙ্গে গড়েন ৬২ রানের জুটি। নিগার করেন ২৩ রান। এরপর সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন রুবাইয়া।
রুবাইয়ার ব্যাট থেকে আসে দারুণ এক ফিফটি—৭৭ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৫৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার পাশাপাশি সোবহানা মোস্তারি ছিলেন ১৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত।
পরিসংখ্যানের ঝলক:
পাকিস্তান: ১২৯ অলআউট (৩৮.৩ ওভার)
বাংলাদেশ: ১৩২/৩ (৩১.১ ওভার)
ম্যাচের সেরা: রুবাইয়া হায়দার (৫৪* রান)
ব্যাটিং-বোলিং—দুই বিভাগেই পুরোপুরি আধিপত্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। একদিকে বোলারদের টাইট লাইনের সামনে পাকিস্তান ব্যাটাররা চাপে পড়ে গুটিয়ে যায়, অন্যদিকে ব্যাটিংয়ে ধৈর্য, কৌশল ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছায় টাইগ্রেসরা।
এই জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপের শুরুটা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর করল নিগারদের। সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলেও এই জয় তাদের মানসিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে।