জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক মতামত জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চেয়েছে দলটি।
আজ শুক্রবার দুপুরে দলটির পক্ষ থেকে এসব মতামত কমিশনে জমা দেওয়া হয়।
মতামতে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে দলের অবস্থান তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া সংসদে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন, সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত বিল পাসের প্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু বিষয়ে জুলাই সনদের খসড়ার সঙ্গে এনসিপির মতপার্থক্য এতে স্থান পেয়েছে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর স্থলে ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ করার কথা বলেছে এনসিপি। এ ছাড়া এতে সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত যেকোনো বিল উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের দাবি জানিয়েছে এনসিপি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা নিয়ে মতামতে এনসিপি বলেছে, ‘সাংবিধানিক কনভেনশনের নামে পরবর্তী সংসদের কাছে জুলাই সনদ ২০২৫-এর বাস্তবায়নকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, যা আমাদের দাবি অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই সনদ নির্বাচনের পূর্বে বাস্তবায়ন করা ও এর আইনি ভিত্তি প্রদান করার কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেখা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা নিয়ে কমিশনের এই বক্তব্যকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনায় দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দলিল এবং এটাকে প্রথম সংবিধানও বলা যেতে পারে।
এই ঘোষণাপত্রে ঘোষণা করা হয় ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকেই এটা কার্যকর হবে। পাশাপাশি ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটা আদেশ জারি করেন, ওইটাও আইনি ভিত্তিসম্পন্ন একটা ডকুমেন্ট।
কাজেই এখানে যেভাবে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধান, এটা সত্য নয়, বরং তা ইতিহাস বিকৃতি।
‘উল্লিখিত সময়কালের বৈধতা দিয়েছে যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রোক্লেমেশন এবং ১১ জানুয়ারির রাষ্ট্রপতির আদেশ।
একইভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তার কার্যক্রম তথা বৈধতার ভার পরের সংসদের কাছে ন্যস্ত করার এই বিবৃতি আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
আমরা মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তার কার্যক্রম তথা জুলাই সনদের বৈধতা গণ-অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাপত্র।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সময়কাল নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে এনসিপি তাদের মতামতে বলেছে, ‘কোন কোন প্রস্তাব বা সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেটা সুস্পষ্ট নয়।
আমরা এর বিরোধিতা করছি। এনসিপির পক্ষ থেকে আমরা জুলাই সনদ ২০২৫-এর সম্পূর্ণটাই কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।’
জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে মতামত আজ বিকেলের মধ্যে জমা দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সময় মতামত জানিয়েছে ২৩টি দল।
দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।