1. admin@sylhetbela24.com : admin :
October 15, 2025, 7:47 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

নির্বাচন ঘিরে এআইর অপব্যবহার বাড়ছে, নিষ্ক্রিয় ইসি

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
  • 34 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কেবল গবেষণাগারের প্রযুক্তি নয়, এটি ঢুকে পড়েছে রাজনীতির মাঠে, নির্বাচনী প্রচারে এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনকভাবে—জনমত প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রে। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এআই-নির্ভর ডিপফেক ভিডিও, বিকৃত ছবি এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য। এই ডিজিটাল আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী নেত্রী থেকে শুরু করে প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাস্তবে নেই কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এই ডিজিটাল ঝুঁকির মুখে কীভাবে হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন?
ভুয়া কনটেন্ট ছড়ানো বেড়েছে ১৭ শতাংশ

গবেষণা সংস্থা ডিসমিসল্যাব সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে দেশে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ কনটেন্ট সরাসরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত।

এই ভুয়া তথ্যের মধ্যে বেশির ভাগই তৈরি করা হচ্ছে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। ব্যবহার করা হচ্ছে ডিপফেক টুল, যার মাধ্যমে একজনের মুখমণ্ডল ও কণ্ঠস্বর অন্য কারও সঙ্গে প্রতিস্থাপন করে তাকে কিছু বলতে বা করতে দেখানো হয়—যা আদৌ সে বলেনি বা করেনি।

এছাড়া, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক নেতাদের নামে তৈরি করা হয়েছে ডজনখানেক যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভুয়া ভিডিও ও মিথ্যা গ্রাফিক্স। কিছু ক্ষেত্রে বিশিষ্ট সংবাদমাধ্যমের লোগো ও ডিজাইন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ভুয়া সংবাদ কাভার।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ পর্যন্ত ১৭৬টি ভুয়া গ্রাফিক্স কার্ড শনাক্ত করা হয়েছে, যার ৮৫ শতাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়েছে।
নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে নোংরা কনটেন্ট: রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুধুই তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক মাঠে নারীদের অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করতেই এর পেছনে পরিকল্পিত হাত কাজ করছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, “নারীদের ঘিরে যে ধরনের ভুয়া ভিডিও বানানো হচ্ছে, তা শুধু অনৈতিকই নয়, বরং একটি ভয়ংকর মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এটা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
নির্বাচন কমিশন জানে, কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপ নেই

নির্বাচন কমিশন আচরণবিধির খসড়ায় সামাজিক মাধ্যমে ডিপফেক, বিকৃত ভিডিও ও মিথ্যা তথ্য প্রচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে, এআই ব্যবহারে প্রার্থিতা বাতিল, জরিমানা এবং অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে, নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কাগজে-কলমে অনেক কিছু আছে, কিন্তু বাস্তবে আমাদের পক্ষে এসব কনটেন্ট শনাক্ত বা প্রতিরোধ করা কঠিন। আমাদের নেই কোনো সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট বা এআই পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি।”

কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা মনিটরিং টিম গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছি। তবে সামাজিক মাধ্যমের ওপর আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই।”
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য: একটি ভিডিওই বিপর্যয় আনতে পারে

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “একটি ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হতে সময় লাগে না। নির্বাচনের সময় এটি হাজারো মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচন কমিশনের উচিত, এখনই উপযুক্ত প্রযুক্তি ও জনবল নিয়ে প্রস্তুত হওয়া।”

ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ-এর প্রধান কদরুদ্দিন শিশির বলেন, “একটি ভুয়া তথ্য দু-এক ঘণ্টার মধ্যেই জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের হাতে কোনো প্রযুক্তিগত উপকরণ নেই, তাদের উচিত হবে ফ্যাক্টচেক প্ল্যাটফর্ম ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করা।”
বিশ্বজুড়ে এআই হস্তক্ষেপ: সতর্কতা কোথায় বাংলাদেশে?

বিশ্বের বহু দেশে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার নির্বাচনে ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামে ছড়ানো হয় ডিপফেক ভিডিও

ভারতে শতাধিক প্রার্থীর নামে চালানো হয় ভুয়া প্রচার

রোমানিয়ায় নির্বাচনে এআই হস্তক্ষেপের অভিযোগে নির্বাচন বাতিল

ইইউ, ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত—সবগুলো দেশ এআই নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে

বাংলাদেশে এআই নিয়ন্ত্রণে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ আইন নেই। জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা ও কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা হলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি: ভুক্তভোগী হলেও দায়িত্বশীল নয়

ভুয়া ভিডিও ও ডিপফেকের শিকার রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাও এই প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, “এটা এখনই প্রতিরোধ না করলে জাতীয় নির্বাচনে মহামারি আকার ধারণ করবে। সরকারকে এটা ঠেকাতে হবে।”

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “প্রযুক্তি ও জনবল শুধু সরকারের কাছেই আছে। ইসিকে তাদের সহায়তা নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই নিচের উদ্যোগগুলো না নিলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে:

ইসির নিজস্ব সাইবার ইউনিট গঠন

পূর্ণাঙ্গ এআই নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন

জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে প্রচারণা

সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসরি সমন্বয়

ফ্যাক্টচেকার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি সহায়তা দেওয়া

সব রাজনৈতিক দলের জন্য এআই ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews