পিতৃত্বকালীন ছুটির আইনি স্বীকৃতির পথে বড় অগ্রগতি ঘটেছে। সরকারি কর্মীদের জন্য ১৫ দিনের সবেতনে পিতৃত্বকালীন ছুটি প্রস্তাব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এই উদ্যোগ, যা পরিবারের কাঠামোতে পিতার সক্রিয় ভূমিকার গুরুত্ব নতুনভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবী মায়েদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। তবে পিতার জন্য কোনো ছুটির সুযোগ নেই, যদিও পরিবার গঠনের প্রতিটি ধাপে বাবার উপস্থিতি সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু জন্মের পর মায়ের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাবার পাশে থাকা শুধু আবেগ নয়, একটি বাস্তব প্রয়োজন।
সিজারিয়ান ডেলিভারির পর একজন মা শারীরিকভাবে দুর্বল থাকেন, নবজাতকও থাকে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। এই সময়ে বাবার সহায়তা হয়ে উঠতে পারে জীবনযাত্রার ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্য উপাদান। অথচ অনেক সময় সরকারি চাকরিজীবী বাবাকে স্ত্রী-সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই অফিস করতে হয়। এ অভিজ্ঞতা প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারি কর্মীর।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৭৮টি দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু আছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশেও পিতার ছুটি আছে। ইউরোপে এই ছুটি আরও বেশি দীর্ঘ এবং কাঠামোগত। স্পেনে পিতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ, পোল্যান্ডে ৯০ দিন।
বাংলাদেশেও কিছু অগ্রগামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন – আড়ং, ব্র্যাক, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান চালু করেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এখন এই ছুটি প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ দিনের জন্য, যাতে বাবা সন্তান জন্মের পরপরই পরিবারে সময় দিতে পারেন, স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেন, এবং নবজাতকের সঙ্গে প্রথম দিনের বন্ধনে জড়াতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিতৃত্বকালীন ছুটি কেবল একটি সামাজিক দাবিই নয়, এটি কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ। ছুটির পর কর্মস্থলে ফিরে অনেকেই আরও মনোযোগী, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল হন। মা-বাবার সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে শিশুর বিকাশেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সরকার যদি এ প্রস্তাব অনুমোদন করে, তাহলে বাংলাদেশের শ্রমনীতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। যা কেবল পরিবার নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রেও একটি মানবিক, সমতা-ভিত্তিক ও আধুনিক বার্তা বহন করবে।