ওড়িশার ভুবনেশ্বরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের আটজন শ্রমিক নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন।
ঘটনা ঘটেছে গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে। শ্রমিকেরা মহাবীরনগরের একটি প্রজেক্টে সারা দিনের কাজ শেষে ঘুমিয়ে ছিলেন। স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী তাদের ওপর চড়াও হয়ে লাঠি, বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে আক্রমণ চালায়।
হামলাকারীরা মোবাইল ফোন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং প্রায় ৪ হাজার রুপি ছিনিয়ে নেয়।
আক্রান্ত সাতজন শ্রমিক বর্তমানে ভুবনেশ্বর এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনকে পরে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে আব্দুল আলিম নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা বাংলায় কথা বলার কারণে স্থানীয়রা আমাদের বাংলাদেশি মনে করে মারধর করেছে। আমি প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকা ছয়জন শ্রমিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শ্রমিকদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ শুধু ঘটনা দেখতে এসেছে, কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মুর্শিদাবাদের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ‘কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীরবতার কারণে দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকেরা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমরা তাঁর ইস্তফা দাবি করছি।’
ভগবানগোলা বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকার বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা দেশের একটি বিরাট সমস্যা নির্দেশ করছে। কেন্দ্রের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভাবে দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওড়িশার জঙ্গিপুরে সামশেরগঞ্জের নিহত শ্রমিক লোকমান শেখের হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত হিসেবে দুই প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনা থেকে দেখা যায়, পূর্ববর্তী সংঘর্ষ ও নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা এবং কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের অভাবে এই ধরনের হামলার ঘটনা বাড়ছে।
শ্রমিকেরা অভিযোগ করে বলেছেন, আমরা পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ করতে আসি। কিন্তু ওড়িশায় আমাদের বাংলাদেশি সন্দেহে মারধর করা হচ্ছে। আমাদের পরিচয়পত্র, অর্থ, সবকিছুকে লুট করা হয়েছে। আহত শ্রমিকদের পরিবারও নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে সেখানকার প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ভারতের শ্রমিকদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং শ্রমিকদের দ্রুত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে। তৃণমূল নেতারা মনে করেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র শ্রমিকদের ওপর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত সন্দেহকে ব্যবহার করে তাদের ওপর দমনমূলক আচরণ করছে। ফলে শ্রমিকদের শারীরিক এবং মানসিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।