1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 3:35 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

যাদুকাটায় থামছে না তাণ্ডব : ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন

  • প্রকাশিতঃ বুধবার, এপ্রিল ৯, ২০২৫
  • 59 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

ইজারাসীমা অতিক্রম করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীতে চলছে বালুখেকোদের তাণ্ডবযজ্ঞ। ফলে জেলার সর্ববৃহৎ এই বালুমহাল এখন ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসন সেখানে রয়েছে নির্বিকার।

প্রশাসন বলছে, দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযানের খবর আগে ভাগে পেয়ে সরে যায় দৃবৃর্ত্তরা, এ কারণে বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

জানাগেছে, কয়েক বছর ধরেই ইজারার দোহাই দিয়ে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী তাণ্ডব চলেছে। একারণে নদীর তীরবর্তী রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। নদীর তীরের সরকারি খাস জমির দখলদাররা ও কিছু রেকর্ডিয় জমির মালিকেরাও নদীতে বালু লুটপাটের অংশীদার। তারা প্রতিফুট বালু আট থেকে দশ টাকা করে বিক্রয় করছে। একারণে নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি বিলীন হলেও নিরব রয়েছেন এরা।

ঘাগড়া গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি বললেন, নদীর তীরে বেশিরভাগই খাস জমি। এসব জমির দখলদাররেরা বিনা বাধায় বালু বিক্রয় করছেন। যে জমি বিক্রয় করলে আট থেকে নয় লাখ টাকা পাওয়া যাবে, সেই জমি থেকে কোটি টাকার বালু বিক্রি করা হয়েছে।

ঘাগড়া গ্রামের পাকা আরসিসি সড়ক যাদুকাটা নদীর তীরে গিয়ে শেষ হয়েছে। কয়েক বছর আগেও যতটুকু সড়ক ছিলো, এখন এর বড় অংশ নেই। নদীতে সড়কের ভাঙা কংক্রিট পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছরে বালু খেকোদের তাণ্ডবে সড়কের প্রায় ২৫০ মিটার বিলীন হয়েছে।

ঘাগটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক (ছদ্মনাম) বললেন, নদীর তীরে গাছ লাগিয়েছিলাম। রানু মেম্বারের (মোশহিদ আলম রানু, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা) নেতৃত্বে সেখানে ড্রেজার মেশিনে বালু তোলা হয়েছে। তাদের পেছনে ছিলো আওয়ামী লীগের এমপিরা। গাছগাছালি সহ সবই বিলীন হয়েছে নদীতে। প্রতিবাদ করায় হামলা হয়েছে, বিচার পাইনি। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরে তার চাচা (রানু মেম্বারের চাচা) বিএনপির নেতা আবুল কালাম আজাদ এই লুটপাটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করে না। আমি প্রতিবাদ করায় দুইবার হামলা হয়েছে, কোনোবারই বিচার পাই নি।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোশাহিদ আলম রানু বললেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর ঘরেই থাকতে পারছি না। ইতোমধ্যে জেলও খেটে এসেছি। আগে ইজারায় যুক্ত ছিলাম বালু উত্তোলন করেছি ন্যায়সঙ্গতভাবে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে পাড় কাটার অভিযোগ সত্য নয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বললেন, যাদুকাটা নদী রক্ষার জন্য সব সময়েই আন্দোলন করেছি। এখন কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ যারা লুটপাট করতে পারছে না, তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সরেজমিনে ঘাগড়া গ্রাম তীরবর্তী যাদুকাটা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অনেক পতিত জমি, ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীর মাঝে কোথাও ত্রিভূজ আকৃতির স্তুপ মতো ভেসে উঠেছে। গ্রামের শেষ সীমানায় আরসিসি সড়কের অংশ নদীতে পড়ে রয়েছে। এছাড়াও দেশের বৃহৎ শিমুল বাগানের পূর্বদিক থেকে বালু কেটে নেওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাগানটি। নদীর ইজারাকৃত অংশের বাইরে নদীর পাড় থেকে শতাধিক শ্রমিক বেলছা দিয়ে নৌকায় বালু তুলেছেন।

ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল বললেন, নদীর পাড়ের মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা ছিলো ‘যাদুকাটা’। হাতে অর্থাৎ ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বালু তুললে বহু বছর এখানে কর্মসংস্থান হতো তাদের। এই নদীটি একসময়ে প্রস্থে ছিলো ৫৭ মিটার, এখন তাকালে মনে হবে সাগর। এই অবস্থার পেছনে একটি লুণ্টনকারী চক্র রয়েছে। তারা দিনেদিনে নদীতে লুটপাট বাড়িয়েছে। কোনো শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে না। একারণে নদীর তীর ভাঙছে। মানুষের ঘরবাড়ি সড়ক বিলীন হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। যারা মুলহোতা তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যাতে এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং নদীকে রক্ষা করা যায়।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি একেএম আবু নাছার আহমদ বললেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এই বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তারা জড়িত না থাকলে, দিনের পর দিন নদীতে এ ধরণের অবৈধ কাজ হতো না। অনেকবার বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করেছি। তারা কথা দিয়েছিলেন বালু লুটপাট বন্ধ করবেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। আগের মতোই সব চলছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে উন্নয়নের কথা বলে সারাদেশের প্রাণ—প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। যাদুকাটা নদী এর রাইরে থাকেনি। বালু উত্তোলনের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সেখান থেকে বের হয়ে অতিরিক্ত লোভ ও মুনাফার আশায় অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন হয়েছে। এতে এই নদীর খুবই নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই কাজের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন জড়িত ছিলো। সামনে দেশের উন্নয়নে প্রাণ—প্রকৃতি এবং পরিবেশকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি যারা ফ্যাসিস্ট আমলে প্রাণ—প্রকৃতি ধ্বংসের সঙ্গে যুক্ত ছিলো তাদের বিচার হওয়া জরুরী।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম বললেন, আমরা নিয়মিত যাদুকাটায় অভিযান পরিচালনা করি। অনেক শ্রমিকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে প্রশাসন। আমরা ইজারাদারদের অনুরোধ করেছি, সীমানার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য। এটি সীমান্তবর্তী এলাকা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এবং দুর্গম হওয়ায় অভিযানে যাওয়ার পথেই দুবৃর্ত্তরা খবর পেয়ে যায়।, এসময় তারা অবস্থান থেকেও সরে যায়। ফলে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, তাদের ধরা বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। তবুও পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন সর্তক অবস্থানে রয়েছে। যাদুকাটার পাড়ের পরিবেশ—প্রতিবেশ ভালো রাখতে চাই আমরা।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews