বেলা ডেস্ক :
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আনু মোহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশে নারীর সম্পত্তির অধিকার নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ফল।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে নারী উন্নয়ন নীতিতে অর্জিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও, সেটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশে কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছিল।
ড. আনু মোহাম্মদ আরও বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা নতুন নয়, তারা সবসময়ই ছিল এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ব্যবহার করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারও একসময় তাদেরকে তুষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে নারীর সম্পত্তির সমানাধিকারের প্রসঙ্গ এলেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী উসকানি দেয় এবং সমাজের বহু মানুষ, যাদের ধর্মীয় অনুশীলনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক নেই, তারাও এই বিষয়ে ইসলামের বিধানকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করায়।
তিনি বলেন, ধর্মের নাম ব্যবহার করে নারীর প্রতি বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ ইসলামে কোথাও বলা নেই যে মেয়েরা ছেলের অর্ধেকের বেশি সম্পত্তি পেতে পারবে না। বাস্তবিকভাবে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা সেই অর্ধেকেরও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
নারীর সামাজিক সক্রিয়তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, সমাজের একটি বড় অংশ— যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রয়েছেন— মেয়েদের স্বাধীন ও দৃশ্যমান উপস্থিতিকে সহজভাবে নিতে পারে না। নারীদের হাঁটা, হাসি, উচ্চকণ্ঠে কথা বলা, অভিনয়, নাচ, খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে তারা সীমাবদ্ধ করতে চায়। এসব নিয়ন্ত্রণের পেছনে ধর্মকে ব্যবহার করা হলেও মূলত এটি একটি মতাদর্শিক অবস্থান, যেখানে নারীকে নিষ্ক্রিয় রাখার মানসিকতা কাজ করে।
তিনি বলেন, নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করা জরুরি। নাটক, গান, খেলা, রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং বুদ্ধিভিত্তিক কাজের মাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তিনি অনলাইন ও অফলাইন উভয় জায়গায় নারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত আক্রমণের মোকাবিলায় সচেতন ও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান।
নারী দিবস উপলক্ষে তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন শুধু নারীর জন্য নয়, বরং সবার জন্য। নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই সম্মিলিতভাবে আমাদের আরও শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।”