পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা অফিস হোক- প্রায়ই দেখা যায় অনেক জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার পরও আপনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনটা অনেকের সঙ্গেই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই বিষয়কে তারা সাধারণ বলে উড়িয়ে দেয়। তবে এই অবমূল্যায়ন করার অনুভূতি হতাশাজনক হতে পারে এবং এমনকী আপনার রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। এর মূল কারণগুলো বুঝলে তা আপনাকে এই পরিস্থিতির প্রতিকার খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক যেসব কারণে মানুষ আপনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
অসঙ্গতভাবে যোগাযোগ করা
যেকোনো মানুষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগে ধারাবাহিকতার অভাব থাকলে তখন অন্যদের পক্ষে আপনাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া কঠিন হতে পারে। আপনি যদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঘন ঘন আপনার অবস্থান পরিবর্তন করেন বা নিজের বিরোধিতা করেন, তাহলে মানুষ আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই আপনার নিজেকে প্রকাশের ধরনে স্পষ্টতা এবং ধারাবাহিকতা থাকলে তা অন্যদেরকে আপনার অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে, আপনার নির্ভরযোগ্যতার ওপর আস্থা তৈরি করে। তবেই অন্যরা আপনার প্রতি আস্থা পাবে। আপনাকে মূল্যায়ন করবে।
দক্ষতা ও সঠিক জ্ঞানের অভাব
কিছু পরিস্থিতিতে, মানুষ হয়তো আপনাকে গুরুত্ব সহকারে নাও নিতে পারে কারণ তারা আপনার দক্ষতা বা প্রাসঙ্গিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে মনে করে। যদি ধারাবাহিকভাবে এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকেন যে বিষয়ে ভালোভাবে আপনি পারদর্শী নন, তাহলে অন্যরা আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার মতামত গুরুত্ব হারাতে থাকবে। যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন সে বিষয়ে জ্ঞান থাকলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। মানুষ তাদের সম্মান করবে যারা জ্ঞানী এবং স্পষ্ট, সুপরিচিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শারীরিক ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ
শরীরের ভাষা কখনো কখনো শব্দের চেয়ে জোরালো প্রভাব ফেলে। যদি আপনার শরীরের ভাষা বন্ধ থাকে, তাহলে এটি এমন ধারণা তৈরি করতে পারে যে আপনি অনিরাপদ বা কথোপকথনে সম্পূর্ণরূপে মনোযোগী নন। আপনার শরীরের ভাষা যদি কথার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তবে মানুষ আপনাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার সম্ভাবনা কম। মুখের ভাষার সঙ্গে শারীরিক ভাষা সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকলে আপনার কথাকে সবাই কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।
নিজেকে অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করা
অন্যের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে তা আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। কারও কাছে গুরুত্ব পাওয়ার জন্য নিজেকে আরও বেশি ব্যাখ্যা করেন অনেকেই। কিন্তু এই কাজটি তাকে আরও বেশি গুরুত্বহীন করে দেয়। আপনার অবস্থান সম্পর্কে বোঝানোর পরিবর্তে, আপনার চিন্তাভাবনার স্পষ্টতা এবং কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। এতে বিপরীত প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া
অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া, বিশেষ করে যে জিনিসগুলোর জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হয় না, তা আপনাকে দুর্বল হিসেবে প্রকাশ করতে পারে। উপযুক্ত সময়ে ভদ্র এবং ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া এই বার্তা দেয় যে আপনার কাজ বা কথায় আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া যাবে না।
আত্মবিশ্বাসের অভাব
আপনার আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে মানুষ আপনাকে কতটা গুরুত্ব দেবে। আপনি যদি নিজেকে অনিশ্চিত মনে করেন, তাহলে অন্যরা পরিস্থিতি সামলানো বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে। আত্মবিশ্বাসী মানুষদের প্রতি সব মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হয়। কেননা আত্মবিশ্বাস হচ্ছে কর্তৃত্ব ও দক্ষতার লক্ষণ। তাই আপনি যা বলবেন, করবেন, তাতে আপনার আত্মবিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।