রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ও একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান।
সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেই সম্মেলনে যোগ দেন ড. ইউনূস। এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সশস্ত্র ঘাতকদের থামানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তার সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্য নিয়েও ২০১৭ সাল থেকে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এ অবস্থা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূল উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারেই সমাধান খুঁজতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মিকে বাধ্য করা যায়। আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এবং আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক তদারকি কাঠামো গঠন। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পরিচালনা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী মোতায়েন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার স্বীকৃতিতে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ চালু করা। বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা ও আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার ৭দফা প্রস্তাব করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য একটি নিরাপত্তাজনিত হুমকি। এটি মিয়ানমারের রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার ফল। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই দুর্যোগের ভার বইতে না হয়, সে জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
এ সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমানে দেশ স্থিতিশীল রয়েছে এবং জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি আরও জানান, একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিনিধিরাও নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান।