ক্যান্ডির পল্লেকেলেতে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জিততে লক্ষ্য ২৮৬ রান। শুরুটা ভালো করবে কী, উল্টো শুরুতেই চাপে সফরকারীরা। ৬২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছে টাইগাররা।
উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ভুলের কারণে ইনিংসটা বড় করতে পারলেন না পারভেজ হোসেন ইমন। লংকান বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়াল্লালাগেকে স্লগ সুইপে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়েছেন এই ওপেনার। ৪৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
এরআগে দলীয় ১৯ রানে উদ্বোধনী জুটিতে ভাঙন। আর এক রান যোগ করতেই নেই দ্বিতীয় উইকেট। বাংলাদেশের জন্য বাজে শুরু। তবে পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদযের সতর্ক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬১ রান করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই বাংলাদেশের ছন্দপতন। ব্যাক্তিগত ২৮ রানে পারভেজ হোসেন ইমন ক্যাচ আউট হয়ে ফিরে গেছেন সাজঘরে। তাহহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় আছেন বাংরাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭ ওভারে ৮১ রান। তাহহিদ হৃদয় ১৬ ও মেহেদী মিরাজ ১৫ রানে অপরাজিত আছেন।
তানজিম হাসান তামিম অবশ্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মারকুটে ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ১৩ বলে ১৭ রানেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। এরপর ইনসাইডেজে বোল্ড হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩ বল খেলে খুলতে পারেননি রানের খাতা।
এর আগে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। একটা সময় মনে হচ্ছিল, লঙ্কানদের রান ৩০০-৩৫০ হয়ে যাবে। ৪০ ওভার পর্যন্ত তেমন অবস্থানেই ছিল স্বাগতিক দল। তবে শেষের দিকে ভালো বোলিং করেছে টাইগাররা।
৪০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার বোর্ডে ছিল ৩ উইকেটে ২২২ রান। পরের ৭ ওভারে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ। লঙ্কানরা নিতে পারে মাত্র ৩৭ রান, হারায় ৪ উইকেট। সবমিলিয়ে শেষ ১০ ওভারে মোটে ৬৩ রান দিয়েছে বাংলাদেশ।
পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান শিবিরে শুরুতেই আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। নিশান মাদুশকার উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। লঙ্কান ওপেনারকে ১ রানের (৬ বলে) বেশি করতে দেননি ডানহাতি টাইগার পেসার।
শুরু থেকেই ব্যাট হাতে সংগ্রাম করছিলেন মাদুশকা। তাসকিনের বলে কয়েকবার পরাস্ত হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তানজিম সাকিবের প্রথম বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লঙ্কান ব্যাটার।
আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা অবশ্য সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৪৭ বলে ৩৫ রান করা নিশাঙ্কাকে থামান আগের ম্যাচের নায়ক তানভীর ইসলাম। তাকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে পারভেজ হোসেন ইমনের সহজ ক্যাচ হন নিশাঙ্কা।
এরপর ১৬ রান করে কামিন্দু মেন্ডিস এলবিডব্লিউ হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। ১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে সেঞ্চুরি জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। ১১৭ বলে ১২৪ রান তোলেন তারা। মেন্ডিস সেঞ্চুরি, আসালাঙ্কা করেন হাফসেঞ্চুরি।
অবশেষে ইনিংসের ৪১তম ওভারে জুটিটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। টাইগার পেসারের লো ফুলটস হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আসালাঙ্কা। ৬৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫৮ রান।
জানিথ লিয়ানাগে আবারও ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে ১৭ বলে ১২ করেই তাকে দুর্ভাগ্যজনক আউটের শিকার হতে হয়। মিরাজের বলে পেছনে খেলতে গিয়ে পা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন তিনি, ফেরেন হিটউইকেট হয়ে।
পরের ওভারে শ্রীলঙ্কা হারায় তাদের সেঞ্চুরিয়ানকে। শামীম পাটোয়ারীর বলে টপএজ হন কুশল মেন্ডিস। শামীম নিজেই দৌড়ে গিয়ে বলটি তালুবন্দি করেন। ১১৪ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে কুশলের দুর্দান্ত ইনিংসটি ছিল ১২৪ রানের।
শেষদিকে দুশমন্ত চামিরা ৮ বলে ১০ আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৪ বলে অপরাজিত ১৮ করেন।
তাসকিন আহমেদ ৫১ রানে আর মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮ রানে নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম আর শামীম পাটোয়ারীর। মুস্তাফিজুর রহমান ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলংকা: ৫০ ওভারে ২৮৫/৭ (নিসাঙ্কা ৩৫, মাদুশকা ১, কুশল মেন্ডিস ১২৪, কামিন্দু ১৬, চারিথ আসালাঙ্কা ৫৮, লিয়ানাগে ১২, ওয়েলালাগে ৬, হাসারাঙ্গা ১৮, চামিরা ১০; তাসকিন ১০-০-৫১-২, তানজিম ৬-০-৪১-২, তানভির ১০-০-৬১-১, মুস্তাফিজ ১০-০-৫২-০, মিরাজ ১০-০-৪৮-২, শামীম ৪-০-৩০-১)