1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 3:11 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

শ্রীমঙ্গলে মাদ্রাসার পাশেই আবর্জনার স্তূপ : ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
  • 47 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার অন্তর্গত কলেজ রোডের শুধু একটি খোলা ময়লার ভাগাড়ের জন্য হাজারো শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়।

শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডস্থ শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দ্য বার্ডস রেসিডেন্সিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার ঠিক পাশেই এই ময়লা আবর্জনার স্তূপ। যার থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধে পাশেই স্কুল এবং কলেজে আগত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে দিনের পর দিন।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্দোলন মানববন্ধন, গণসাক্ষর কর্মসূচি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান করেও হয়নি এই ময়লার ভাগাড়ের স্থায়ী সমাধান কিংবা অন্যত্র সরানোর প্রচেষ্টা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডস্থ ময়লার ভাগাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা বাসিন্দাদের ফেলে দেওয়া গৃহস্থালির ময়লা আবর্জনার স্তূপ। সেখানে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে পলিথিন। কুকুরের দল পলিথিন থেকে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে খাবার খাচ্ছে একদল গবাদিপশু। পাশেই ভাড়াউড়া চা বাগান সংলগ্ন কৃষকের কৃষিক্ষেত। বৃষ্টি হলেই এই ময়লার ভাগাড়ে জমে থাকা পলিথিনসহ দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছড়িয়ে যাচ্ছে কৃষকের কৃষিক্ষেতে। জমি হারাচ্ছে উর্বরতা, সেই সঙ্গে এই ময়লার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।

শহরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনা শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কর্তৃক ফেলে দেওয়া হয় এই কলেজ রোডস্থ ময়লার ভাগাড়ে এবং খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত ফেলে রাখা পলিথিন ব্যাগসহ অপচনশীল দ্রব্যে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। আর এসব পলিথিন অনেক সময় ফেলে দেওয়া হচ্ছে শহরের মানুষের দৈনন্দিন গৃহস্থালির ব্যবহৃত পানি প্রবাহের নালায়, যা বৃষ্টির পানিতে চলে যাচ্ছে স্থানীয় হাওড়ের পানিপ্রবাহের খালের ভেতর, এতে জলজ প্রাণীদের জীবনচক্র যেমন ব্যাহত করছে তেমনি এই অপচনশীল দ্রব্যে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা, বন্ধ হচ্ছে হাওড়ের পানি প্রবাহ। সেই সঙ্গে শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ হাট-বাজারের নিত্য ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া আবর্জনাও পৌরসভা কর্তৃক সংগ্রহ করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এই ময়লার ভাগাড়ে।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অনার্স ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থী রুনা বেগম জানান, প্রতিদিন কলেজে আসতেই কলেজ গেটেই নাকে রুমাল চেপে আসতে হয়, প্রচণ্ড দুর্গন্ধ থাকে, অসুস্থতা বোধ হয় আমরা এটা নিয়ে মানববন্ধন করেছি, আন্দোলন করেছি কিন্তু এটি সরানোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

আরেক শিক্ষার্থী সুজন দাশ বলেন, আমাদের এখানে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এই ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধের জন্য। শিক্ষার্থীদের পক্ষ নানা এটি সরানোর জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সত্ত্বেও আজও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক বিবেচনা করে হলেও এটি দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তর করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রীমঙ্গলে পরিবেশ কর্মী ও লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের কর্মী তাপস দাশ বলেন, আমাদের দেশে প্রাণীকুল এবং পরিবেশ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত, কলেজ রোডের এই খোলা ময়লার ভাগাড়টি আমাদের জন্য একটি বিষফোড়া, কারণ এটি যেমন অত্র এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করছে ঠিক তেমনি হাজারো শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়, আমরা চাই সরকারি সিদ্ধান্তে অতিদ্রুত এই ময়লার ভাগাড়টি পরিবেশের জন্য নিরাপদ একটি স্থানে যেন সরিয়ে নেওয়া হয়।

পরিবেশ কর্মী রিয়াজ খাঁন বলেন, দেশে আইন হচ্ছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ যথাযোগ্যভাবে মাঠ পর্যায়ে হচ্ছে না, পরিবেশ সংরক্ষণ এর আন্দোলনে আমরা অনেক বছর জুড়েই যুক্ত। পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে কিন্তু পুরো একটি পর্যটনশিল্প বান্ধব শহরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে একটি ময়লার ভাগাড়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন সত্ত্বেও এটি এখনো বিদ্যমান। তাই সরকারের এখানে আরও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ময়লার ভাগাড়। এটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বহু আগে থেকেই আন্দোলন করছে, দাবি জানিয়েছে তৎকালীন সংসদ সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে। এটার যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সেটা নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এটি সরানোর কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি, আন্তরিকতা কিংবা অবহেলার কারণেই হয়ত এমনটি ঘটছে বলে আমরা মনে করি। তাই কলেজের সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য এই ভাগাড়টি একটি পরিকল্পনা করে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ না হয় এমন স্থানে স্থানান্তর করার দাবি জানাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট।

সহযোগী অধ্যাপক উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিজন চন্দ্র দেবনাথ জানান, আমি এই কলেজে ২০১৩ সাল থেকে কর্মরত আছি, আমি আসার পর থেকেই দেখছি এই ভাগাড়ের কারণে এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, এই সমস্যাটি ঠিক শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ঠিক গেটের পাশেই, এটা থেকে যে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস বের হয় তার কারণে শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর। জরুরি সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এটি সরানোর জন্য আমরা কলেজের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।

শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডস্থ দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের স্কুলের ঠিক সামনেই শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ময়লার ভাগাড়টি, যেখানে পরে রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ আর হাজারো পলিথিন। যার থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এটি সরানোর জন্য মানববন্ধনসহ অসংখ্য কার্যক্রম করেছি, প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণসাক্ষর কর্মসূচি নিয়ে একটি স্মারকলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও জমা দিয়েছি, কিন্তু সরকারি পদক্ষেপ না থাকায় তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি, আমরা স্কুলের সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই ময়লার ভাগাড়টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, কলেজ রোডের ময়লার ভাগাড়টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে এখানকার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, আমরা সেটা জেলা প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি এখন সরকারি সিদ্ধান্ত হলেই এর কার্যক্রম শুরু হবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews