সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ৫ নেতার বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বুধবার ২ এপ্রিল এই হামলা ও ভাঙচুর ঘটনার পর আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ছবি ও তালিকা প্রকাশ করার হুশিয়ারির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছেন। দেশে- বিদেশে থাকা সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই ঘটনাটি আগামীর হিসেবে জমা রাখার তাগিদ দিচ্ছেন।
অপরদিকে দল-মতের বাহিরে শান্তিপ্রিয় লোকজন এই ঘটনাটিকে সিলেটের প্রেক্ষাপটে অশনি সংকেত হিসেবে উল্লেখ করছেন। ওই অংশের দাবি- সিলেটে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকলেও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কারো বাসা বাড়িতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হামলা বা ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টিকে খুবই দু:খজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে সিলেটে দলীয় মতের বাহিরে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে একে অপরের ব্যবসায়ীক সম্পর্কের বিষয়টিও সামনে আনছেন।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠক ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক আবদুল করিম কিম নিজের ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি হামলার বিষয়টিকে দু:খজনক এবং সিলেটের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে উ্ল্লেখ করেন। আবদুল করিম কিমের লেখাটি হুবুহ তোলে ধরা হল-
’সিলেটে বাসা-বাড়িতে এখনো হামলার ঘটনা ঘটছে। যা দু:খজনক। সিলেটের মানুষ বাড়াবাড়ি অপছন্দ করে।
পলাতক নেতাদের নামে মামলা আরও ১০০ করেন কিন্তু কোন আবাসিক এলাকায় মিছিল নিয়ে ঢুকে অস্বাভাবিক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। আজকের হামলার ঘটনা তৌহিদি জনতার ব্যানারের হামলা নয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে ভোরের আধারে দেয়া ঝটিকা মিছিলের প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা কারা করলো? কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী? কোন দল?
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জীবনেও প্রত্যাবর্তন করবে এ আশা নেই। তাই হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ভয়ে এভাবে অরাজকতা তৈরি করে ইচ্ছেখুশি হামলা ও লুটপাট অব্যাহত রাখলে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই শেখা মানুষ আবারও প্রতিবাদ জানাবে। মনে রাখবেন জনতা ফ্যাসিবাদী কালচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সেই কালচারের পুনরাবৃত্তি দেখার জন্য কেউ প্রাণবাজী রেখে গুলির সামনে দাঁড়ায়নি। হামলা-মামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৮% ভোটারের জামাতকে শেখ হাসিনা নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি ১৬ বছরে। আর আপনারা আট মাসে ৩৫% ভোটারের আওয়ামীলীগ নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন? ফ্যাসিবাদী হাসিনা শাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ ঘরানার অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিল। সাধারণ মানুষের অংশ হয়ে রাজপথেও নেমেছিল অনেকে। নয়া বন্দোবস্তের নামে পুরাতন বন্দোবস্তের চর্চা তাদেরকে হতাশ করবে। এদের হতাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
এই লেখায় মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন। তিনি তার মন্তব্যে লিখেন, আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো– কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।। আর এবার তো সীমা লঙ্ঘনের রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।। রাজনীতির হাওয়া বাতাস বোঝার সক্ষমতাও যাদের নেই, তারাই আজকাল এখানে রাজনীতিবিদ বনেছেন।। পরিণতি দৃশ্যমান।।
পোস্টে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত। তিনি লিখেন-সিলেটের রাজনৈতিক শিষ্টাচার এমনটা ছিলোনা।আওয়ামী লীগ,বিএনপি উভয় দলই ক্ষমতায় ছিলেন,আবার বিরোধী দলে ছিলেন।মাঠের রাজনীতি বাড়ি পর্যন্ত টেনে নিয়ে এটাকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে পরিণত করে সিলেটের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কালীমা লেপন করা হলো।এটা কোনভাবেই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে ইতিবাচক হবে না।তবুও চাইবো এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ হোক।রাজনীতি কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা উচিৎ।
Syed Fazla Elahi Obhi লিখেন, মাঠের রাজনীতি বাসায় নিয়ে আসা উচিত নয়। সবারই পরিবার, সামাজিক অবস্থান ও বাসস্থান আছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কারও বাড়িতে হামলা করা যাবে। এটি রাজনীতি নয়, বরং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সিলেটের সংস্কৃতিতে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত বিরল। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, সিলেটে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিল বের হওয়ার জের ধরে একদিনে আওয়ামী লীগের ৫ নেতার বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটে। বুধবার (২ এপ্রিল) পৃথক পৃথক সময়ে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রদল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
জানাগেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক সিসিক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন ও সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ভাই শফিক আহমদের বাসায় এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর আগে সিলেট নগরীতে মিছিল বের করায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।