বেলা প্রতিবেদক :
৫ আগষ্টের পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। তবে যে লক্ষ নিয়ে এই পরিবর্তন তার সুফল পাচ্ছেন না জনগন। আগে আওয়ামী দু:শাসনের কাছে জিম্মি ছিল মানুষ। অবশ্য এখন আওয়ামী লীগ না থাকলেও কাটছে না জিম্মিদশা। বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে নানা অপরাধ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন সিলেটের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের লোকজন। একের পর এক এমন ঘটনায় দলীয় এ্যকশন বন্ধ হয় নি। কিন্তু তবুও থামছে না অপরাধ কর্মকাণ্ড। ফলে দলীয় নেতাকর্মীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
জানাগেছে, বালু-পাথর লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনায় একের পর এক বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর নাম আসছে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ছয়-সাতজনকে। তবু এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিলেট নগরীর ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কারের পর গ্রেপ্তার করা হয় মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব চৌধুরী মাধবকে। এ ছাড়া চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে শাহপরাণ এলাকার দাসপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর দলীয় পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চোরাচালানের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্রে করে দু’পক্ষের মধ্যে ওই দিন দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
যদিও জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর দাবি, অভিযুক্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে এখন অভিযোগ কম আসছে। দলীয় নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তিনি বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যারা দখল-চাঁদাবাজি করছে, তারা আগাছা। আমরা পুলিশকে বলেছি কঠোর হতে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কৃপণতা করব না।
৫ আগস্টের পর সিলেটে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় বিএনপি নেতাদের বালু ও পাথর কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট। দ্বিতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সীমান্তে চোরাচালান। জাফলং পাথর কোয়ারি লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৪ অক্টোবর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ স্থগিত করা হয়। গত ২ নভেম্বর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন পারভেজকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পদ স্থগিত ও অব্যাহতি ছাড়াও ইতোমধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৫-১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চোরাই চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সুলেমান হোসেন সুমনকে। গত সোমবার তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতীরঘেঁষা ঘাগটিয়া এলাকায় বিএনপির আবুল কালাম ও আশরাফ আলী গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বালু শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে এমন ঘটনা ঘটে।
চাঁদাবাজি, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি বহিষ্কার করা হয় জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ আহমদ, কর্মী সুলতান আহমদ, জেলা বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক, দলের নেতা আহমদ সোলায়মান, জেলা যুবদলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কাওছার আহমদ জুম্মান, কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম মিয়া, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম ও জুনেদ আহমদ, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুস সালামসহ কয়েকজনকে। একইভাবে ১৪ আগস্ট সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিমকে জমি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে সেখানকার কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমলযোগ্য অভিযোগ হলে সাংগঠনিক পর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীলকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের তদন্তের জন্য দেওয়া হচ্ছে। ছোটখাটো অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।