সিলেটে মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। ফলে পুস্ফস্তবক অর্পণ করতে আসা বিভিন্ন সংগঠনের লোকজনকে বাধার সম্মুখিন হতে হয়। মঙ্গলবার ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২ টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। বাধা্র মুখে পড়া কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা এ সময় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের শহীদ মিনারের প্রবেশ গেট খোলে দেওয়ার আবেদন জানালেও পুলিশ সদস্যরা গেট খুলতে অসম্মতি জানান। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ একপর্যায়ে তাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত ১২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে তারা সেখানে গিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের ফটক বন্ধ দেখতে পান। ফটকের সামনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয় ছিল।
ছাত্র সংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে তারা শহীদ মিনারে গেলে সেখানে থাকা পুলিশ তাদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় তারা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
পুলিশ সদস্যদের এমন বাধার মুখে সংগঠন দুটির নেতাকর্মী এবং উপস্থিত জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। শহীদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তারা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহীদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’-সহ নানা স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ছাত্র সংগঠন দুটির নেতাকর্মীরা নগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তারা স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘শহীদ মিনারে আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপ’ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ প্রশাসন একপর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয়, সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।’
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলব, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণের রাষ্ট্রীয় যে রীতি আছে, সবাই যেন সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করেন।’