সিলেটে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ধানকাটা শ্রমিকদের। এর ফলে হাওরাঞ্চলগুলোতে বাড়ছে বজ্রপাত আতঙ্ক। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপনের দাবিও জোড়ালো হচ্ছে। গেল ১০ দিনে (২২ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত) সিলেট অঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। বজ্রপাতের এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে সুনামগঞ্জে ৫ জন, সিলেটের ২ জন, মৌলভীবাজারে ১ জন ও হবিগঞ্জের ২ জন রয়েছেন।
২২ এপ্রিল একদিনে মৃত্যু ৩ জনের
২২ এপ্রিল বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তিন জনের। ওই দিন সকাল ৯ টায় বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা ঘটে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীতে। এ ঘটনায় জিলাল মিয়া (৪০) নামের এক নৌকার মাঝির মৃত্যু হয়। নিহত জিলাল মিয়া উপজেলার বাঘমারা (পশ্চিম) গ্রামের মাছিম মিয়ার পুত্র। তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। সকাল সাড় ৮টার দিকে উজান গঙ্গাপুর ঘাট থেকে যাত্রীসহ নৌকা নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আসছিলেন তিনি। এ সময় আকাশে বিকট শব্দে এক আকস্মিক বজ্রপাত হলে নৌকার মাঝি জিলাল মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এ সময় নৌকায় থাকা অন্য যাত্রীরা ছিলেন অক্ষত। জিলাল মিয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ওইদিন দুপুরে বজ্রপাতে নিহতের ঘটনা ঘটে মৌলভীবজারের আখাইলকুড়া ইউনিয়নে। বোরো ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এ সময় মিলাদ মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ৩ জন। এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সুত্র জানায়, সকালে ধান কাটতে মিলাদ মিয়াসহ কয়েকজন বাড়ির পাশে মাঠে যান। হঠাৎ করে দুপুরের দিকে বজ্রপাত হয়। এতে করে চার জন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার পার্থ মিলাদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন ও বাকি তিনজনকে আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিহত মিলাদ মিয়া(২৮) পাগুলিয়া গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে। বজ্রপাতে মিলাদের আপন ছোট ভাই তানভীর মিয়া(১৫) ও পিতা তাজ উদ্দিন(৬০) আহত হয়েছেন। আহত তাজ উদ্দিনের পিতামৃত- আপ্তাব উদ্দিন। অপর আহত হলো, ইমাদ(২১), পিতা-হেলাল মিয়া, সকলের বাড়ি পাগুলিয়া গ্রামে।বর্তমানে আহত তিনজনের চিকিৎসা চলছে ও তারা সুস্থ আছেন।
এদিকে একই দিন সুনামগঞ্জে দিরাইয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ইকবাল হোসেন (৩৫) নামের এক ধানকাটা শ্রমিক। সন্ধ্যায় দিরাই উপজেলার ভরাম হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে তিনি আহত হন। এসময় তার সাথে থাকা অন্য শ্রমিকরা তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. নাজিয়া মানালুল ইসলাম তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত ইকবাল হোসেন ভোলা জেলার রসুলপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের সালা উদ্দিনের ছেলে। সে দিরাই পৌর সদরের চন্ডিপুর গ্রামে ধানকাটার শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন। এছাড়াও সকালের দিকে বজ্রপাতের কবলে পড়ে উপজেলার পৃথক জায়গায় এক কিশোরী সহ আরও তিনজন আহত হয়েছে।
২৩ এপ্রিল মৃত্যু ১ জনের
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২৩ এপ্রিল বুধবার। বাড়ির সামনে খড় সংগ্রহ করার সময় বজ্রপাতে আবু আইয়ূব (২০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যায় উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের সেচনী গ্রামের এই ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহত আবু আইয়ূব সেচনী গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে। বজ্রপাতে নিহতের বড় ভাই অলিউর ও গ্রামের কাবিল মিয়ার ছেলে মনিরুল (৩৫) আহত হয়েছেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজীব সরকার।
২৫ এপ্রিল মৃত্যু হয় ১ জনের
২৫ এপ্রিল শুক্রবার বজ্রপাতে নিহতের ঘটনা ঘটে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। বিকেলে বাদ আসর মাঠে গরু আনতে গেলে বজ্রপাতে জীবন মিয়া (৪০) নামে দুবাই প্রবাসী যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত জীবন মিয়া উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের দক্ষিণ পান্তুমাই (ডালারপার) গ্রামের শাহজান মিয়ার ছেলে। গত রবিবার তিনি তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছুটি শেষে আবারো প্রবাসে যাওয়ার কথা ছিল। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গোয়াইনঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই উৎসব মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
২৮ এপ্রিল মৃত্যু হয় ৩ জনের
সিলেটে বজ্রপাতে ২৮ এপ্রিল একদিনে মৃত্যু হয় ৩ জনের, এ ঘটনায় আহত হন আরও ৫ জন। বজ্রপাতে নিহতের মধ্যে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার ১ জন করে রয়েছেন। ওইদিন বজ্রপাতে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় দূর্বাসা দাস (৩৫) নামে এক ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুসহ আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। সকালে বানিয়াচং উপজেলার একটি হাওরে এই ঘটনা ঘটে। দূর্বাসা দাস উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালাবাসী দাসের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা। এছাড়াও আহন হন তার ভাই ভূষণ দাস (৩৪) ও বোন সুধন্য দাস (২৮)। অপরদিকে একই উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) নামে এক শিশু বজ্রাঘাতে আহত হয়েছে।
এদিকে একই দিনে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।
অপর বজ্রপাতের ঘটনায় সুনামগঞ্জের শাল্লায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম রিমন আহমদ তালুকদার (২৪)। বাড়ি উপজেলার আটগাঁও গ্রামে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ছয়টায় এই ঘটনা ঘটে। এদিকে সকাল সাড়ে আটটায় পাশের দিরাই উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় খোদেজা বেগম (৪৫) নামের এক কৃষাণী আহত হয়েছেন। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বললেন, রিমনের চাচা আব্দুশ শহীদ জানিয়েছেন বাড়ির পাশের হাওরের খলা থেকে গরু আনার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলেই রিমনের মৃত্যু ঘটে। রিমন শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
১ মে মৃত্যু হয় ২ জনের
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মানিক মিয়া (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে উপজেলার পাগনার হাওরের এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, ভোরে জামালগঞ্জের পাগনার হাওরে ধান কাটছিলেন মানিক মিয়াসহ কয়েক কৃষক। হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন মানিক মিয়া। পরে সঙ্গে থাকা অন্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জামালগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে একই দিনে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বজ্রপাতে রিংকু দাস (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের পাশে হাওরে এ ঘটনা ঘটেছে। মৃত রিংকু দাস গোপালপুর গ্রামের মৃত রনধীর দাসের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাওর থেকে ট্রলিতে করে ধান নিয়ে গোপালপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন রিংকু দাস। তার সঙ্গে ছিলেন একই গ্রামের ননী গোপাল দাসের ছেলে কালিপদ দাস (৪২) ও যজ্ঞেশ্বর দাসের ছেলে রাজেশ দাস (৩৫)। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান রিংকু দাস। অপর দুজন আহত হন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মনি রানী তালুকদার রিংকু দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত কালিপদ দাসকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত রাজেশ দাসকে আশংকাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও দিরাই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মনি রানী তালুকদার বলেন, বজ্রপাতে ১ জন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে।
যা বলছে হাওরপাড়ের লোকজন
হাওরাঞ্চলের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বজ্রপাতে বেশি মারা যায় কৃষক ও জেলে। চৈত্র থেকে আষাঢ় (মার্চ-মে) মাস পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে খুব বজ্রবৃষ্টি হয়। এ সময় বোরো ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত হাওরেই পড়ে থাকতে হয় কৃষকের। এরপর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষদিকে গোটা হাওরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। তখন ওই এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটা অংশ জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে হাওরে বের হয়। এ মুহূর্তে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বিশাল হাওর পাড়ি দিয়ে দ্রুত কৃষক-জেলে কেউই নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে পারে না। যে কারণে বজ্রপাতের শিকার হয়ে মারা যায় অনেকে। বজ্রপাতসহ প্রকৃতিগত যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় হাওরের প্রতিটি স্পটে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের তাগিদ অনেকের।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বজ্রপাত থেকে জীবন রক্ষায় করণীয় বিষয়ে বলেন, টেকনোলজি কিংবা প্রযুক্তির বাইরে গিয়ে কিভাবে বজ্র ঝুঁকি কমানো যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। পশ্চিম আকাশে মেঘের রঙ কালো দেখলেই মাঠে-ঘাটে থাকা যাবে না। এই শর্তটা সকলকে মানতে হবে। আপনার জীবন আপনাকে বাঁচাতে হবে। বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতার বিকল্প নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা নির্দেশনা দেখেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ। বিশেষ করে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জন্য তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, যারা মাঠে থাকবেন তারা পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে নিচু হয়ে কানে হাত দিয়ে বসে থাকবেন। আর যারা নৌকায় থাকবেন তারা অবশ্যই বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে দ্রুত নৌকার ছাউনির (ছই) ভেতরে অবস্থান নেবেন। আবহাওয়া পূর্বাভাস সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস একই রকম থাকবে। এই রোদ, এই বৃষ্টি, আবার ঘূর্ণিঝড়। খুব বেশি পরিবর্তন হবে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রায় আশি ভাগ সুনামগঞ্জে ঘটে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু সুনামগঞ্জের উপরে এসে মেঘালয় পর্বতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। যে বায়ুতে উষ্ণতা (তাপমাত্রা) বেশি থাকে। ওই গরম বায়ুতে সংঘর্ষ হওয়ায় আলোর বিস্ফোরণ ঘটে এবং বজ্রপাত হয়। তিনি বলেন, সূর্য আমাদের যে তাপ (গরম) দিচ্ছে সেটা ফিরে যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না। সেই তাপমাত্রা মূলত পৃথিবীর উপরে থাকা ওজন স্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। তাপমাত্রা বেশি হলে জলীয়বাষ্প কিংবা বায়ু দূষণও বেশি হয়। যা বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করে। একসময় পুরো বর্ষাকাল জুড়েই বৃষ্টি হতো। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন সেটা হচ্ছে না। মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধিই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক সমস্যা।
অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে গত ত্রিশ বছরে প্রায় ষাট ভাগ ভূমির ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে। অপরিকল্পিত হাওর রক্ষা বাঁধ, রাস্তাঘাট, অতিরিক্ত নদী শাসনে জলাধার কমে যাওয়ার মতো নেতিবাচক কর্মকান্ড জলবায়ু পরিবর্তনকে উৎসাহিত করছে। যে কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বজ্রপাত বাড়ছে। তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বজ্রপাত হবে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারক, গবেষকসহ সকলকে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বজ্রপাতের সম্ভাব্য সময়ে গাছের নিচে থাকা যাবে না। এ সময় ক্ষেতে-মাঠে কাজ করা লোকজন যেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে সেই সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। তাতে প্রায় আশি ভাগ মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব।