সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নেওয়ার এই অপচেষ্টা দিনকে দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বালুখেকো চক্রের এই তৎপরতায় একদিকে যেমন পরিবেশ ও জনপথ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চক্রটি হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। তাদের লাগামহীন তৎপরতায় ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, ছড়া-খালপাড়, এমনকি হুমকির মুখে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট ও আঞ্চলিক সড়ক অবকাঠামো।
জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ৫নং ওয়ার্ডে মহালদিক গ্রামের ছড়ার পাশের জমি থেকে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দা করিম ও এমরান মিয়ার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, উপজেলার খাদিমনগর ৫নং ওয়ার্ডে মহালদিক ব্রিজ সংলগ্ন ছড়ার পশ্চিম পাশে বসবাস করছেন এমরান মিয়া। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এমরান ও করিম মিলে দীর্ঘদিন ধরে বালুর চর থেকে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করে শহরে বিক্রি করে আসছেন। এমরানের নিজস্ব একটি ডিআই পিকআপ থাকায় প্রতিদিন গভীর রাতে তার উঠানে প্রায় ১৫০-২০০ ফুট বালু জমা করেন আজর মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ইরন মিয়া। পরে ভোরবেলায় সেই বালু শহরে পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোররাতে এমরানের বাড়ি থেকে বালু লোড করা পিকআপ রাস্তায় উঠলে হঠাৎ করে যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয় এবং সকাল হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের নজরে আসে চোরাই বালুর বিষয়টি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি ক্রাশার মিলের চৌকিদার ও এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে নাজিম, ইরন ও করিমকে ছড়ার পাশে রাতের বেলায় কাজ করতে দেখেছেন। অবশেষে গত শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে সচেতন মহলের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে নাজিম ও এমরানের ছোট ভাই হোসাইনকে বালু উত্তোলনের সময় হাতে-নাতে ধরেন। ঘটনার সময় আজরের ছেলে ইরন বনরুটি ও পানি আনতে দোকানে গিয়েছিলেন এবং উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান- ‘এমরানের ঘরের কাজের জন্য বালু তুলছেন। তখন নাজিম স্বীকার করেন, তারা করিমের নির্দেশে কাজ করছেন এবং বালু বিক্রির টাকাটি এমরান ও করিম ভাগ করে নেন, তারা শুধু শ্রমিকের মজুরি পান।’
এই ব্যাপারে জায়গার মালিক বাবলু চৌধুরী বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা করিম ও এমরান মিয়া দীর্ঘদিন থেকে আমার মালিকানা জায়গায় রাতের আধারে বালু উত্তোলন করছেন। এমরানের নিজস্ব একটি ডিআই পিকআপ থাকায় প্রতিদিন গভীর রাতে তার উঠানে প্রায় ১৫০-২০০ ফুট বালু জমা করেন আজর মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ইরন মিয়া। গত শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নাজিম ও এমরানের ছোট ভাই হোসাইনকে বালু উত্তোলনের সময় হাতে-নাতে আটক করি। পরে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, এমরান মিয়ার ঘরের কাজের জন্য বালু তুলছেন। আমি এই ঘটনায় সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
সিলেট এয়ারপোর্ট থানার এ এস আই ফেরদৌস জানান, ‘সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ৫নং ওয়ার্ডে মহালদিক গ্রামের ছড়ার পাশের জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা এই ঘটনায় তদন্ত করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষতে বিষয়টি অবহিত করেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বাবলু চৌধুরী আমাদের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন যে অবৈধভাবে তার জায়গা থেকে বালু উত্তোলন ও বালু বিক্রি করছে একটি চক্র। আমরা অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং আমরা আরেকটু যাচাই-বাছাই করে এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।