সিলেটে ১০ দিনের ব্যবধানে প্রাণ গেছে ১৬ জনের। এর মধ্যে আঘাত/অস্ত্রাঘাতে খুনের ঘটনা ৪ টি, নদী,জঙ্গল ও খাল এবং ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে আরও ১২টি। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সিলেটের অবস্থান। এ জেলায় খুনসহ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ৮ টি। ২য় অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় এ রকম ৫ টি ঘটনা ঘটে। এরপরে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলায় অনাকাঙ্খিত প্রাণহানির ঘটনা রয়েছে ২ টি। আর মৌলভীবাজার জেলায় ১ টি । ১৬ প্রাণহানির মধ্যে খুন করে লাশ ফেলে দেওয়া, পারিবারিক দ্বন্দ্বে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন,আত্মহত্যা, মেরে ফেলে লাশ ঝুলিয়ে রাখা আবার কখনো পুকুর, নদী বা ডোবায় ফেলে দেওয়ারও ঘটনা রয়েছে।
হঠাৎ করে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় প্রাণহানির কারণে সকলের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। অনেকেই সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়কে এমন প্রাণহানির কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। তার উপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়হীনতাকে দায়ী করেছেন সচেতন মহল। তবে অনাকাঙ্খিত এসব মৃত্যুর ঘটনা আরও বেশি হতে পারে মনে করছেন তাঁরা। ওই মহলের মতে, অনেক ঘটনা পারিবারিক কারণে ঘটে থাকলেও সেটি চলে যায় লোক চক্ষুর অন্তরালে। আবার অনেকে মামলা মোকদ্দমার ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খোলা থেকে বিরত থাকেন। ফলে প্রাণহানি বেশি ঘটলে তার সঠিক তথ্য নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
১০ এপ্রিল : হবিগঞ্জে জঙ্গল থেকে মরদেহ উদ্ধার
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকে নিখোঁজের ৭ দিন পর ১০ এপ্রিল চুনারুঘাটের কাপাইছড়া চা বাগানের গহীন জঙ্গল থেকে মাটি খুঁড়ে লিটন মিয়া (৩৮) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লিটন মিয়া মাধবপুর উপজেলার গোয়াছনগর এলাকার ছায়েদ আলীর ছেলে।
চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম জানান, এ ঘটনায় প্রমোদ রিকমন (৩২) নামে এক ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রমোদ কাপাইছড়া চা বাগানের মঙ্গল রিকমনের ছেলে। পরে প্রমোদকে সাথে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যমতে পাহাড়ি এলাকার কাপাইছড়া চা বাগানের ৯ নম্বর টিলার ভেতরে মাটিচাপা দিয়ে রাখা লিটন মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সাথে আরও যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
১৫ এপ্রিল : দুই মরদেহ উদ্ধার ও ১ খুন
হবিগঞ্জ ও সিলেটে ১৫ এপ্রিল ২ টি মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি একটি খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুরে একই দিনে পৃথক স্থান থেকে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাধবপুর থানার ওসি তদন্ত কবির হোসেন জানান, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন-শিমুলঘর সড়কের মাঝামাঝি এলাকায় সড়কের পাশে একটি অজ্ঞাত (৩০) পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে সকাল ১১টার দিকে মাধবপুর পৌর শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় হেলাল মিয়া (৩০) নামে একটি ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে নাসিরনগর উপজেলার রোস্তমপুর গ্রামের শিরু মিয়ার ছেলে।
থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লা আল মামুন জানান, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে একই দিনে সিলেটে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে নগরীর শাহী ঈদগাস্থ দলদলি চা বাগান এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত তুষার চৌধুরী (১৯) সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জাবেদ আহমদকে নগরীর আম্বরখানা বড় বাজারের একটি বাসার খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আটক করেছে পুলিশ।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে তুষার চৌধুরী নামের যুবক খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
১৬ এপ্রিল : সিলেট ও হবিগঞ্জে ২ খুনসহ ১ মরদেহ উদ্ধার
এইদিনে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পৃথক ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সিলেট ও হবিগঞ্জে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন এবং ২টি ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার কাদিপুর গ্রামে ১৬ এপ্রিল একটি বড়ই গাছ থেকে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম মো. মিস্টার নুর (২২), তিনি স্থানীয় বাবুল মিয়ার ছেলে।
মধ্যনগর থানার এসআই বিকাশ তালুকদার বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, একই দিনে সিলেটে ভুমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাইয়ের হাতে অপর ভাই খুনের ঘটনা ঘটে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের লুসাইন গ্রামে। নিহত ব্যক্তি নাম মো. মুজিবুর রহমান (৫৩)। তিনি ঐ গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, মুজিবুর রহমানের সাথে তার আপন ছোট ভাই মুহিবুর রহমানসহ আত্মীয়-স্বজনদের ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনার দিন এ নিয়ে মুজিবুর ও মুহিবুর রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। এ পর্যায়ে মুহিবুর মজিবুরকে আঘাত করলে মুজিবুর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎতরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জের ধরে এক ভাইয়ের হাতে অপর ভাই মারা গেছেন বলে জেনেছি। ।
একই দিনে ভাইয়ের হাতে অপর ভাই খুনের আরও একটি ঘটনা ঘটে হবিগঞ্জে। জেলার চুনারুঘাটে পারিবারিক বিরোধের জেরে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই রুয়েল মিয়া (২৪) নিহত হন। এ ঘটনায় ঘাতক ছোট ভাই জসিম মিয়াকে (২২) রাতেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, অভিযান চালিয়ে ঘাতক জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
১৭ এপ্রিল :জকিগঞ্জে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় বসতঘর থেকে মো. মোমিন আহমদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৭ এপ্রিল দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রাম থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মোমিন ওই গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুর রহমান পাতাই মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, মোমিন আহমদ দাম্পত্য জীবনে নানা সমস্যায় ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার স্ত্রীর পরকীয়া চলছিল। এর জেরে বৃহস্পতিবার ভোরে মোমিনের স্ত্রী তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আক্ষেপে মোমিন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, এ ঘটনায় এখন তদন্ত চলমান রয়েছে। ’
১৮ এপ্রিল : সিলেট ও সুনামগঞ্জে নদী থেকে ২ মরদেহ উদ্ধার
সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদী থেকে ১৮ এপ্রিল দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিলেটের সুরমা নদী থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তির নাম শেখ সরওয়ার হোসেন (৫৮)। তিনি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার মিরপুর এলাকার মৃত শেখ সাবের হোসেনের ছেলে। তিনি বর্তমানে ঢাকার মতিঝিল থানার টিএন্ডটি কলোনী এলাকায় বসবাস করে আসছেন।
জানা যায়, দুপুরে স্থানীয় লোকজন শাহজালাল ব্রিজের নিচে নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পান। পরে তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় লাশটি উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুমন চক্রবর্তী জানান, মৃতদেহের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার লাশের সাথে ২ টি বাটন মোবাইল সেট পাওয়া গেছে। এতে ব্যবহৃত সীমকার্ড থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, একই দিনে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বৌলাই নদী থেকে অপর একটি অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চামরদানী ইউনিয়নের মুকশেদপুর সংলগ্ন বৌলাই নদীর পশ্চিম পাড়ে ‘দীঘা’ নামক স্থান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. স্বজীব রহমান জানান, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
১৯ এপ্রিল : খুনসহ প্রাণহানির ঘটনা ৩টি
১৯ এপ্রিল একদিনে অনাকাঙ্খিত তিনটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে কুপিয়ে হত্যা, সিলেটে ঝুলন্ত মরদেহ এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা থেকে ভাসমান একটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওইদিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের জারুলিয়া গ্রামে জায়গা নিয়ে বিরোধে আব্দুল হাই (৬০) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। নিহত আব্দুল হাই ওই এলাকার মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র।
স্থানীয়রা জানান- আব্দুল হাই জারুলিয়া বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার আবদাল মিয়া, কাপ্তান মিয়া, মোতাব্বির মিয়া ও মিরাজ মিয়ার। এর জের ধরে প্রতিপক্ষরা তার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা তাকে এলোপাতারি ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
চুনারুঘাট থানার (ওসি) নূর আলম জানান,পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এদিকে একই দিনে সিলেটে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় হাকিম নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাত আটটার দিকে মহানগরীর মিরাপাড়া এলাকা থেকে ঐ যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাকিম মিরাপাড়া এলাকার আবুল বাশারের ছেলে।
শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, মরদেহের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা।
এদিকে একই দিনে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খাল থেকে এক দিনমজুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম সালাউদ্দিন (৩৫)। দিনমজুর যুবকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেয়। ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে বর্ণি ইউনিয়নের বর্ণির চক (দৌঁড়েরবাজার) এলাকার রাইতখালী খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত সালাউদ্দিন বারোহাল গ্রামের কমর উদ্দিনের ছেলে।
বড়লেখা থানার ওসি তদন্ত শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, মরদেহের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত মিলেছে। দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে ফেলে গেছে বলে ধারণা। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
২০ এপ্রিল : সিলেটে ১ জনকে কুপিয়ে হত্যা ও ১ মরদেহ উদ্ধার
সিলেটের বিশ্বনাথ ও জাফলং এলাকায় একদিনে দুটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজন ছিনতাইকারীর ছুড়িকাঘাতে এবং আরেকজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে সিলেটের বিশ্বনাথে। ২০ এপ্রিল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের বাওয়ানপুর এলাকার পাঁচপীর বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নিপেশ তালুকদার (৪০)। তিনি একজন ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার সুনামপুর গ্রামের সানন্দ তালুকদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন তেমুখীস্থ খালেদ মিয়ার বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করে আসছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিপেশ তালুকদার বাইসাইকেল দিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার বাজারগুলোতে পান, সুপারি ও সিগারেট ফেরি করে বিক্রি করতেন। প্রতিদিনের মতো রোববার সন্ধ্যায়ও সাইকেল দিয়ে মালামাল বিক্রি শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেরার পথে পাঁচপীর বাজারের পশ্চিমে নির্জন সড়কে ছিনতাইকারীরা তার উপর চড়াও হয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেন। এসময় তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ছিনতাইকারীরা তার বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এবং সেখানেই মারা যান।
বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন-ছিনতাইকারী ও ঘাতকদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে একই দিনে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার মামার দোকানে এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম রাজিব কৃষ্ণ সরকার (৩৩)। তিনি নেত্রকোনার কালিয়াজুড়ি এলাকার জয় কৃষ্ণ সরকারের ছেলে। মামার দোকান বাজারে তার একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে।
পুলিশ জানায়- রাত ১০টার দিকে একজন কাস্টমার রাজিবের দোকানে মিষ্টি কিনতে গিয়ে দেখতে পান, দোকানের শাটার ঠিকমতো লাগানো নয়। এছাড়া দোকানের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ আসছে। এসময় ওই কাস্টমার দোকানের শাটার খুলে দেখেন- রাজিবের দেহ টিনের চালার বর্গার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলন্ত। পরে বাজারের ব্যবসায়ীরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল জানান- লাশে পচন ধরেছে। মনে হচ্ছে- ৩/৪ দিন আগে মৃত্যু ঘটেছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেছি। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। এছাড়া ঘটনার তদন্ত চলছে।
২১ এপ্রিল : গোয়াইনঘাটে খাল থেকে মরদেহ উদ্ধার
সিলেটের গোয়াইনঘাটে খাল থেকে এক অজ্ঞাত পুরুষের পরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ রোডের পাশে আইয়ালাবন্দ নামক স্থানে খাল থেকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহতের বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল বলেন- স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেছি। মরদেহের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলার সাবেক আহবায়ক মুকির হোসেন চৌধুরী বলেন, এর কারণ হলো-মানুষের সুচিন্তা-চেতনার অভাব বা চিন্তার অপবিকাশ। মানুষ যেমন চিন্তা করে, তেমনই তার আচরণ গড়ে ওঠে। কম্পিউটারের ভাষায় একটি কথা আছে, গার্বেস ইন গার্বেস আউট; যা ইনপুট করা হবে, তাই আউটপুট হবে। চিন্তার ক্ষেত্রেও এমন, যা জানব তাই দেব। এখানে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিকতা, মানবিকতা ও বিশ্লেষণী শক্তির চর্চা হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে এই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আর ভয়ানক পর্যায়ে চলে যাবে।
সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা বলেন, এর একটি কারণ হচ্ছে যৌথ পরিবার প্রথার বিলীন হওয়া। কারণ, যৌথ পরিবার প্রথায় একটা শৃঙ্খলা বোধ থাকে। থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। যেখানে ছোট ছোট স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে রাখা হয়। যে কারণে লোভ-লালসা, মোহ এবং স্বার্থবোধ সৃষ্টি হয় না। তিনি বলেন, এর বিপরীতে একক পরিবার গুলোতে সেটির চর্চা থাকে না। থাকে কেবল মোহভিত্তিক কার্যক্রম। এর ফলে অবক্ষয় শুরু হয় পরিবার থেকে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমাজের স্তরে স্তরে। শুধু মাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সর্বনাশ দমাতে পারে না। এর জন্য সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ দরকার।