রুমেল আহসান:: সিলেট-আখাউড়া রেলপথ যেন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। চলন্ত ট্রেনে বগি বিচ্ছিন্ন হওয়া, ঘনঘন বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। চাকার স্প্রিং, অন্যান্য যন্ত্রাংশের নানা সমস্যা নিয়ে পুরনো বগি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী ট্রেন। একের পর এক আন্তঃনগর, লোকাল ও পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে মাঝপথে। এভাবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। ট্রেন চালকদের চোখেমুখে তাকে চিন্তার ছাপ। তাছাড়া সিলেট রুটের ট্রেনগুলোর কোচ ও বগিতে ময়লা-দুর্গন্ধ এবং সিটও ভাঙাচোরা। এক কথায়, পুরনো ট্রেন বহর জুড়ে অব্যবস্থাপনার ছাপ চোখে পড়ে।
রেলওয়ে প্রকৌশল-অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। এ সেকশনের অধিকাংশ রেলব্রিজ মেয়াদোত্তীর্ণ- রেলের ভাষায় যার নাম ‘ডেড স্টপ’। আর ডেড স্টপ মানেই সেখানে সব ধরনের ট্রেন বাধ্যতামূলক দাঁড়াবে। এছাড়া পুরো রেলপথের প্রায় ৯০ শতাংশই জরাজীর্ণ-ত্রুটিপূর্ণ। ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে এই সেকশনে ট্রেনের সময়সূচিও ঠিক থাকছে না। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে আগে ট্রেন চলত ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন সেই গতি অর্ধেকে অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্যমতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেসে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন। এ রুটে সবচেয়ে বেশি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ব্রিজ ভেঙে কোচ পড়ে খাদে। লেভেলক্রসিংয়ের ৮৮ শতাংশই অবৈধ। এসব কারণে ট্রেন যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হচ্ছেন। এক ট্রেনের কোচ ও বগি দিয়ে আরেক ট্রেন চলে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস শমশেরনগর পৌঁছলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। গতকাল রবিবার সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি পথিমধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জের মোমিনছড়া চা বাগান এলাকায় আসতেই ইঞ্জিনের পেছন থেকে ১১টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত বছরের ২৪ জুন ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর রেল সেতুতে চলন্ত পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান যাত্রীরা। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সিলেটবাসীর মধ্যে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ সিলেট থেকে পারাবত এক্সপ্রেসে ঢাকার উদ্দেশে যায়। রাত প্রায় ৮টার দিকে হবিগঞ্জের হরষপুর এলাকায় ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর আখাউড়া থেকে একটি ইঞ্জিন আসার পর ট্রেন চালু হয়। রাত প্রায় আড়াই টার দিকে ঢাকার কমলাপুর গিয়ে পৌঁছায়।’
মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনের বগিতে নম্বর স্পষ্ট করে লেখা না থাকায় খুঁজে পেতে সমস্যা হয় যাত্রীদের।’
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুর ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।