1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 8:29 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

সিলেট উইমেন চেম্বারে আবারও দলীয়করণের পদধ্বণি

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
  • 838 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বৃহৎ ও অরাজনৈতিক একটি সংগঠনের নাম সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির খুঁটির জোড়ে কোনো নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। এ নিয়ে সদস্যদের ক্ষোভ ছিল। তবে সভাপতির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারো। কিন্তু ৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। টানা ১০ বছর সভাপতি পদে আসীন থাকা স্বর্ণলতা রায় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিলে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রশাসক নিয়োগের প্রেক্ষিতে সকল সদস্যদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ উদ্দিপনাসহ একটি সুষ্টু নির্বাচনের আওয়াজ জেগে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের লক্ষ্যে শুরু হয় দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসকের কর্মতৎপরতা। এরই অংশ হিসেবে চেম্বারের সকল সদস্যদের সাথে তিনি ২৩ মার্চ প্রথম বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে সংগঠনটির সদস্য নবায়ন করার চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ১৭ এপ্রিল। কিন্তু চূড়ান্ত সময়ের শেষ মুহুর্তে কারো সাথে কথা না বলে প্রশাসক হঠাৎ করেই সদস্য নবায়নের সময়সীমা আরও ১০ দিন বৃদ্ধি করেন। এমন অভিযোগ তোলেন সংগঠনের একটি বড় অংশ। তাদের দাবি, নবায়ন ফরম ১৭ এপ্রিল জমা প্রদানের শেষ দিন ধার্য্য করা হলেও হঠাৎ বেলা ২ টার পর একটি অংশ ইচ্ছেমতো করে নিজেদের নামে ফরম সংগ্রহ করেন। তাদের বক্তব্য যেহেতু চেম্বারে দুটি প্যানেল রয়েছে, সেহেতু একটি পক্ষের চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে এই ঘোষণা প্রশ্নবিদ্ধ হলো। একই সাথে আসন্ন নির্বাচন সুষ্টু গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষতা হারাতে পারে বলে মনে করছেন ওই অংশ। সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট চেম্বারে বিবদমান দুটি পক্ষ রয়েছে। এর একটি পক্ষে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা এবং অপর অংশে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির মহিলাদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী অধ্যাপক সামিয়া বেগম চৌধুরী। মেয়াদ বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ায় উইমেন চেম্বার বিএনপির দখলে নেওয়ার পায়তারা চলছে বলেও অভিযোগ ওই অংশের।

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে জড়িত নিবন্ধিত নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। ২০১৫ সালে এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হলে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বর্ণলতা রায়। সংগঠনের লক্ষ্য হল মহিলা উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার সমস্ত পদক্ষেপগুলিকে সুরক্ষা, বিকাশ, সমর্থন এবং প্রচার করা। এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ হবে ১১ সদস্যের। দুটি ক্যাটাগরিতে এর সদস্যপদ লাভ করা গেলেও ভোটাধিকার রয়েছে অর্ডিনারী সদস্যদের। তবে এসোসিয়েট সদস্যরা চেম্বারের সমুদয় সুযোগ-সূবিধা ভোগ করতে পারবেন। উইমেন চেম্বারের সদস্য সংখ্যা তালিকায় চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নবায়ন করে লিখিতভাবে ৮৩ জনের নাম পাওয়া গেছে। তবে ১৭ এপ্রিলে নবায়নকৃত সদস্যসংখ্যা যোগ করা হলে এই সংখ্যা দুই শতাধিক হতে পারে বলে জানিয়েছেন সদস্যরা।

এর আগে গেল মাসের ১৩ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সিলেট উইমেন চেম্বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করা হয় এবং প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘ বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলপূর্বক নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।’

এদিকে দায়িত্ব প্রাপ্তির পর পরই একটি সুষ্টু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রশাসক মো. নুরের জামান চৌধুরী শুরুতেই তৎপর হয়ে উঠেন। সেই লক্ষ্যে তিনি সিলেট উইমেন চেম্বারের সকল সদস্যদের নিয়ে প্রথম বৈঠক থেকেই সকলের সিদ্বান্ত অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ছিল সদস্যপদ নবায়নের সর্বশেষ তারিখ ঘোষণা করেন। সদস্য পদ নবায়নের শেষ দিন নির্ধারিত তারিখে উইমেন চেম্বারের কার্যালয়ে ভিড় ছিল সকল সদস্যদের। তবে বিকাল ৫ টার ৫ মিনিট আগেই প্রশাসকের একটি ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিকাল সোয়া ৫ টায় চেম্বার কার্যালয়ে আসেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার। প্রশাসকের পক্ষে তিনি জানান, সদস্য নবায়নের সময়সীমা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

এই ঘোষণার প্রতিবাদে চেম্বারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন শম্পাসহ উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যবৃন্দ তাৎক্ষনিক একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে উপস্থিত সদস্যবৃন্দের পক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন লুবানা ইয়াসমিন শম্পা। তিনি জানান, সিলেট উইমেন চেম্বারকে ফের দলীয়করণের অপচেষ্টা চলছে। অথচ, এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এমন অপতৎপরতা সিলেটে নারী উদ্যোক্তা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির শামিল। তাছাড়া প্রশাসক ঘোষিত ১৭ এপ্রিল নবায়ন ফরম জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন শত শত ফরম সংগ্রহ করে নেন প্রতিপক্ষ গ্রুপ। ‘ফলে আমরা মনে করছি, নবায়ন তারিখ পেছানোর নেপথ্যে একটি হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। রয়েছে রাজনৈতিক দুরভীসন্ধি এবং একই সাথে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতেই আমাদের সাথে কথা না বলে হঠাৎ করে প্রশাসকের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসলো। তিনি বলেন, এ অবস্থায় নির্বাচন করা হলেও সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ এই অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটিকে আবারও রাজনীতিকরণ করা হবে। এর ফলে ব্যবসাবান্ধব না হয়ে প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং দলীয় রাজনীতি প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করবে’।

অবশ্য লুবানার এমন বক্তব্যকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন অপর অংশে নেতৃত্বদানকারী বিএনপির মহিলাদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী অধ্যাপক সামিয়া বেগম চৌধুরী। তিনি বলেন, ২৩ মার্চ প্রশাসকের সাথে উভয় পক্ষের আলোচনার ৪ দিন পর ২৭ মার্চ লিখিতভাবে সদস্যদের নবায়ন বৃদ্ধির জন্য প্রশাসক বরাবরে আবেদন করি। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নবায়ন ফি সাধারণ সদস্যদের জন্য নির্ধারিত ৮ হাজার টাকা এবং সহযোগী সদস্যদের জন্য ৩ হাজার টাকা প্রদান করা খুব কঠিন হবে বিধায় অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের জন্য এই সময়সীমা আর কিছুদিনের জন্য বৃদ্ধি করা আবশ্যক।

উইমেন্ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির অফিস সহকারী অন্যন্যা জানান, সদস্যদের নবায়ন সময় সীমা ১৭ এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কতোজন নবায়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তা এখনও গণনা করা সম্ভব হয় নি। তিনি জানান, ওই দিন নতুন করে আরও অনেকেই ফরম বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগে বিষয়ে উইমেন চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব প্রাপ্তির পর চেম্বারের সকল স্তরের সদস্যদের নিয়ে মিটিং করি এবং সকলের সম্মতিক্রমে এটি সুষ্টু নির্বাচনের জন্য ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সদস্য নবায়নের তারিখ ধার্য্য করি। পরবর্তিতে এই সময় আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৭ মার্চ কয়েকটি যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে সদস্যদের পক্ষ থেকে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। তাদের যৌক্তিক বিষয়টি মাথায় রেখেই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এখানে কোনো পক্ষ নেই। তাছাড়া এখনও নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা হয় নি। অংশগ্রহণ মূলক একটি নির্বাচনের জন্য সর্ব্বোচ্চ স্ংখ্যক নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ দেওয়াই হবে আমার মূল লক্ষ্য।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews