সিলেট সীমান্তে বাড়ছে উদ্বেগ। গত ১৪ দিনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ একের পর এক পুশ-ইন ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার (১৬ জুলাই) ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চারটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আরও ৫৫ জন বাংলাদেশিকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৩ জনে।
বিজিবির সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুলাই মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে ৪৮ জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। ভোরের দিকে সীমান্তবর্তী পাল্লাথল পুঞ্জি এলাকায় তারা অবৈধভাবে প্রবেশ করলে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটককৃতদের মধ্যে ছিল ১৮ শিশু, ১৫ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ। তারা জানান, কুড়িগ্রাম ও যশোর সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ভারতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিএসএফ তাদের ধরে এনে ফেরত পাঠায়।
এরপর ৬ জুলাই আবারও বড়লেখার বাতামোড়াল সীমান্ত দিয়ে আরও ১০ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করে ভারত। স্থানীয় টহলদল তাদের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আটক করে। এদের মধ্যে সাতজন পুরুষ এবং তিনজন নারী ছিলেন, যারা কাজের সন্ধানে ভারতে ঢুকেছিলেন এবং পরবর্তীতে মুম্বাই থেকে গ্রেফতার হয়ে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়। তারা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরিশালের বাসিন্দা বলে জানান বিজিবি।
১১ জুলাই, শেরপুর জেলার পানিহাটা সীমান্তে রামচন্দ্রকুড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ভোরে আরও ১০ বাংলাদেশিকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। বিজিবির অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। ওই দলে ছিলেন চারজন শিশু, চারজন নারী ও দুইজন পুরুষ। তারা দিল্লিতে কাজ করছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে গৌহাটিতে নিয়ে আসে এবং সেখান থেকে বিএসএফ সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
সর্বশেষ বুধবার, ১৬ জুলাই ভোর ৪টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধীনস্থ নোয়াকোট, কালাইরাগ, শ্রীপুর ও তামাবিল বিওপি সীমান্ত দিয়ে মোট ৫৫ জনকে চারটি আলাদা গ্রুপে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় সীমান্তের স্থানীয় এলাকাগুলোতে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্ত পেরিয়ে আসা এসব ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে পরিবারসহ ফিরেছেন। কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে আসে সাতটি পরিবারের মোট ১৯ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন পাঁচজন পুরুষ, নয়জন নারী এবং পাঁচজন শিশু। তারা মূলত নড়াইল, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলার বাসিন্দা।
শ্রীপুর সীমান্ত দিয়ে আসে আরও নয়টি পরিবারের ১৩ জন, যাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, আটজন নারী ও তিনজন শিশু ছিলেন। এই দলে ছিলেন যশোর, হবিগঞ্জ, বরিশাল, নরসিংদী ও সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দারা। তামাবিল সীমান্ত দিয়ে যশোর জেলার একটি পরিবারের একজন পুরুষ ও একজন নারী প্রবেশ করেন। একই দিন সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপির ছনবাড়ী এলাকা দিয়ে আরও ২১ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরত পাঠানো হয়, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সব মিলিয়ে গত ১৪ দিনে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে মোট ১২৩ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘটনায় কড়া নজরদারি ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, সীমান্তে পুশ-ইনের বিষয়টিকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং বিএসএফের সঙ্গে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাহীন থাকলেও বিজিবি বলছে, এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিজিবি সজাগ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি পারস্পরিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আরও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।