আসছে ঈদুল আজহা সামনে রেখে সুনামগঞ্জে বেড়েছে ভারতীয় গরু চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। বিজিবিও কঠোর অবস্থানে থেকে চোরাই গরু আটক করছে। তবে বিজিবির কঠোর অবস্থান থাকলেও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত পথে প্রতিদিন চোরাই পথে আসা শত শত ভারতীয় গরু নানা কৌশলে সীমান্তের হাটগুলোতে বৈধতা পেয়ে যায়। সম্প্রতি দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকা দিয়ে নদীপথে জামালগঞ্জ ধর্মপাশা হয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় ৯০টি ভারতীয় গরু আটক করে বিজিবি।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি অধিনায়ক কেএম জাকারিয়া কাদিরের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি বলেন, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে চোরাই পথে গরু আসছে। এসব গরু আটকাতে বিজিবি সদস্যরা মার খাচ্ছে, হামলার শিকার হচ্ছে। এরপরও গত তিন মাসে চোরাই পথে আসা সাড়ে ৪শ গরু আটক করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি অধিনায়ক কেএম জাকারিয়া কাদির আরও বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় সীমান্তের মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বোগলা বাজার বসে।
এখানে ভারতীয় গরুগুলোকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। বোগলা বাজার গরুর বৈধতা দিচ্ছে এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিজিবি অধিনায়ক জাকারিয়া কাদির বলেন, এই বাজারটি সীমান্তের একেবারে কাছে অবস্থিত। তাই গরুর অবৈধ চালান বন্ধে বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হচ্ছে জানিয়ে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, বোগলা বাজার গরুর হাট সীমান্তের কাছে এবং বাগানবাড়ি বিওপির নিকটবর্তী হওয়ায় আভিযানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বাজারটি একটু দূরে হলে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধা হতো।
সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চোরাকারবারিদের ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ভারতের আসাম থেকে চেরাপুঞ্জি হয়ে ওপারের মোশারম থানার মটনবাজার পর্যন্ত ট্রাকে করে আসে শত শত গরু। এরপর দোয়ারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এসব গরু। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় গরু আসছে জেলার দোয়ারা বাজারের সীমান্ত গ্রাম মৌলারপাড় হয়ে।
চোরাকারবারিদের হানা দিতে গিয়ে অনেক সময় বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে হচ্ছে ছোটখাটো সংঘর্ষ। সীমান্তের লোকজন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান, সীমান্তের ৩৩ ও ৩৪ পিলারের মাঝখানে বেশ কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এদিক দিয়ে করিডোরের মতোই নির্বিঘ্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গরু নিয়ে ঢুকে পড়ে চোরাকারবারিরা।