সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের শেয়ালমারা হাওর সংলগ্ন ডুপিকোনা এলাকার ধান মাড়াইয়ের জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে বিক্রয় করছে একটি পক্ষ। এ নিয়ে দুইপক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, মাটি কাটায় জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, এলাকার কৃষকদের মাড়াই জায়গা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, মাটি কেটে তুলে আনার পক্ষের ব্যক্তিগণ বলছেন, নিজেদের মালিকানাধীন উঁচু জমিকে বোর জমিতে রূপান্তরের জন্য মাটি তুলছেন তারা।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
ডুপিকেনা গ্রামের আব্দুর রহিম বললেন, আমাদের বুড়িস্থল, জুগিরগাঁও, ডুপিকোনা, বাদে সাদেকপুর গ্রামের কৃষকদের একমাত্র ধান মাড়াইয়ের জায়গা থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। আব্দুল লতিফ ময়না মিয়া নিজের শ^শুরের জায়গায় অন্যায়ভাবে এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। আমরা গ্রামবাসী নিষেধ দেবার পরও তিনি এই মাটি কাটা বন্ধ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ মাটি কাটতে নিষেধ করে গেছে, এরপরও মাটি কাটা বন্ধ হয় নি। শনিবার আমরা মাটি কাটার এক্সকেভেটর মেশিনসহ মাটি বোঝাই ট্রাক আটক করে প্রশাসনকে জানাই। কিন্তু ময়না মিয়া এবং তার লোকজন মিলে দা, রামদা সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা করতে আসে। পথে ঘাটে আমাদের কেউ গেলেই মারপিট করে, আমরা আতংকে আছি।
ওয়ার্ড মেম্বার সাখাওয়াত হোসেন রাজিম বলেন, এই জায়গা আব্দুল লতিফ ময়না মিয়ার শ^শুরের। জায়গায়টি এলাকার কৃষকদের একমাত্র ধান মাড়াইয়ের জায়গা। কিন্তু এখান থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন ময়না মিয়া। আমাদের গ্রামের লোকজনের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে, পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ময়না মিয়া কথা দিয়েছেন তিনি আর মাটি কাটবেন না। কিন্তু শনিবার রাতেও এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটেছেন। আমরা এলাকাবাসী এসে এই মেশিন সহ মাটি বোঝাই ট্রাক আটক করি। এসময় ময়না মিয়ার লোকজন আমাদের গ্রামের মানুষ শহরে গেলে মারপিট করছে এবং রেজাউল করিম নামের একজনকে আহতও করেছে।
এ বিষয়ে আব্দুল লতিফ ময়না মিয়া বললেন, আমার শ^শুরের জায়গা অনাবাদি আছে। আমি এই জায়গায় মাটি কেটে অন্য জায়গায় ভিটে তৈরি করছি এবং এই জমিকে বোরো জমি করার উপযোগী করছি। কিন্তু গ্রামের কিছু লোকজন শনিবার সন্ধ্যায় আমার গাড়ির চালককে মারধর করে, গাড়ির চাবিসহ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি গ্রামের লোকজনের অনুমতি নিয়েই এই জায়গায় মাটি কাটছি।
এখানে মাটি কাটতে আইনি নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই। গ্রামের মানুষের উপর হামলার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, মাটি কাটার বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান মোহাম্মদ সোয়াইব এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।