বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শিশুপুত্র শেখ রাসেল করুণ আর্তনাদ করেও রক্ষা পায়নি। সে বলেছিল, ‘আমি বাংলার একজন শিশু সন্তান, বাংলার আলো-বাতাসে বাঁচতে চাই। তোমরা আমাকে হত্যা করো না, আমাকে বাঁচিয়ে রাখো।’ কিন্তু ঘাতকেরা নিষ্পাপ শিশুটিকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক গভীর শোকের দিন। আমি তখন সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলাম না, কিন্তু জাতির এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর মনে হলো, আমাকে আবার রাজনীতিতে ফিরতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠন করেন, তখন আমি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াই। আমার মনে হয়েছিল, দেশের রাজনীতি এক ভিন্ন পথে যাচ্ছে। তবে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর আমি উপলব্ধি করি, এ জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য আবার রাজনীতিতে ফিরতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের রাজনৈতিক ভূমিকা স্মরণ করে ফজলুর রহমান বলেন, “১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে এক আবেগঘন বক্তৃতা দেই। তখন দেশে এমন পরিস্থিতি ছিল যে, সামান্য উচ্চস্বরে কথা বলাও ছিল কঠিন। কিন্তু আমি বলেছিলাম, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশে সামরিক অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়, কিন্তু এক নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা।’”
তিনি বলেন, “আমি তখন মুজিব বাহিনীর একজন লিডার ছিলাম, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ গঠনের নেতৃত্ব দেই, যা পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।”
ফজলুর রহমান স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি মেয়র হানিফের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছিলাম। তখন সারা দেশ জানলো যে, একজন আবেগঘন বক্তা আছেন, যিনি জাতির হৃদয় স্পর্শ করতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কবিতা ভালোবাসি, গান ভালোবাসি। রবীন্দ্রসংগীত আমার মনকে শুদ্ধ করে। আমি যখন খুব মন খারাপ অনুভব করি, তখন গান গাই, কবিতা আবৃত্তি করি। আমার জন্মভূমি ভাওয়াইয়া অঞ্চলের শিল্পীদের গান আমার হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।”
এডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে লালন করা এবং সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।”