হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন জীবনের। ভালোবাসার টানে পুরনো সংসার ভেঙে নতুন করে সাজাতে চেয়েছিলেন স্বপ্নের ঘর। কিন্তু সবই যেন মরীচিকা! যে প্রেমিকের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদও করেছেন, সেই প্রেমিকই আজ তাকে অস্বীকার করছে। বাধ্য হয়ে প্রেমিকের বাড়িতে বসলেন অনশনে।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামে এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন পপি বনিক (২৮)। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে আসা নারী পপি প্রেমিক রাজিব বনিকের বাড়ির সামনে অনশন করছেন টানা তিন দিন ধরে। তার একটাই দাবি- তাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে সংসার ভাঙতে বাধ্য করেছিল, সে যেন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
আট বছর আগে এক সন্ধ্যায় ভুল করে এক অপরিচিত নম্বরে কল করেছিলেন পপি রাণী। ওপাশ থেকে ভেসে এসেছিল এক তরুণের কণ্ঠ। নাম রাজিব বনিক, বাড়ি লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামে। প্রথমদিনের সেই ভুল কলের পর ধীরে ধীরে শুরু হয় কথোপকথন। কথা থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম।
রাজিব তখন সাউথ আফ্রিকায় থাকতেন। ফোনে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো তাদের। একসময় রাজিব বললেন- তুমি যদি আমার হও, আমি তোমাকে সাউথ আফ্রিকায় নিয়ে যাব, সুখে রাখব। কিন্তু পপি তখন বিবাহিত। এ কথা শুনেও রাজিব তাকে আশ্বস্ত করলেন- “তুমি স্বামীকে ডিভোর্স দাও, আমি তোমাকে বিয়ে করব।”
প্রেমের নেশায় অন্ধ হয়ে পপি নিজের সংসার ভেঙে দিলেন। স্বামীর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে অপেক্ষা করতে থাকলেন প্রবাসী প্রেমিকের জন্য। কিন্তু দিন যেতে লাগল, মাস কেটে গেল, বছরও পার হয়ে গেল- কিন্তু রাজিব ফিরে এল না।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছয় মাস আগে হঠাৎই দেশে ফিরলেন রাজিব। পপির পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন, কিন্তু কিছুদিন পর আবার নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। ফোন নম্বর বন্ধ, কোনো খোঁজ নেই।
প্রেমিককে না পেয়ে হতাশ পপি গত বুধবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজিবের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে গিয়ে রাজিবকে না পেয়ে ঘরের মধ্যে বসে পড়েন তিনি। দাবি একটাই- রাজিবকে তার বিয়ে করতে হবে।
কিন্তু রাজিবের পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্থানীয়দের অনেকে তাকে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলেন, কিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান মেলেনি। উপায় না দেখে টানা তিনদিন অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অনশনরত পপি বলেন, “আমি সবকিছু হারিয়ে শুধু ওর জন্য অপেক্ষা করেছি। ওর কথায় আমি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি। এখন আমাকে বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করব। আমার মরদেহ এখান থেকেই যাবে।”
এদিকে, রাজিব বনিকের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ বলছেন, প্রেমিকার আসার খবর শুনেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে, কেউ বলছেন সে আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গেছে।
মোড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোল্লা ফয়সাল বলেন, “মেয়েটি শ্রীমঙ্গলে তার বোনের বাড়িতে থাকত, এখন প্রেমিককে খুঁজতে এসেছে, কিন্তু ছেলেরই কোনো খোঁজ নেই।”
লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বন্দে আলী জানান, “বিষয়টি আমরা জানি। মেয়েটি ছেলের বাড়িতে অনশন করছে, কিন্তু ছেলের পরিবার তাকে মেনে নিচ্ছে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”