সিলেটে পৃথকস্থানে বজ্রপাতের ঘটনায় দুইদিনের ব্যবধানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন।এর মধ্যে মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল একদিনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তিন জনের। বুধবার ২৩ এপ্রিল বজ্রপাতে প্রাণ হারাণ আরও ১ জন। একই সাথে বজ্রপাতের ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। বজ্রপাতে মৃত্যুর এসব ঘটনা ঘটে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে। ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা ঘটে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীতে। এ ঘটনায় জিলাল মিয়া (৪০) নামের এক নৌকার মাঝির মৃত্যু হয়। নিহত জিলাল মিয়া উপজেলার বাঘমারা (পশ্চিম) গ্রামের মাছিম মিয়ার পুত্র। তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড় ৮টার দিকে উজান গঙ্গাপুর ঘাট থেকে যাত্রীসহ নৌকা নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আসছিলেন তিনি। এ সময় আকাশে বিকট শব্দে এক আকস্মিক বজ্রপাত হলে নৌকার মাঝি জিলাল মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এ সময় নৌকায় থাকা অন্য যাত্রীরা ছিলেন অক্ষত। জিলাল মিয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার রিপন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একজন লোক বজ্রপাতে আঘাতপ্রাপ্ত জিলাল মিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। জিলাল মিয়ার পুরো দেহ কালো হলেও বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানান ডাক্তার রিপন।
এদিকে ওইদিন দুপুরে বজ্রপাতে নিহতের ঘটনা ঘটে মৌলভীবজারের আখাইলকুড়া ইউনিয়নে। বোরো ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এ সময় মিলাদ মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ৩ জন।
এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সুত্র জানায়, সকালে ধান কাটতে মিলাদ মিয়াসহ কয়েকজন বাড়ির পাশে মাঠে যান। হঠাৎ করে দুপুরের দিকে বজ্রপাত হয়। এতে করে চার জন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার পার্থ মিলাদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন ও বাকি তিনজনকে আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিহত মিলাদ মিয়া(২৮) পাগুলিয়া গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে। বজ্রপাতে মিলাদের আপন ছোট ভাই তানভীর মিয়া(১৫) ও পিতা তাজ উদ্দিন(৬০) আহত হয়েছেন। আহত তাজ উদ্দিনের পিতামৃত- আপ্তাব উদ্দিন। অপর আহত হলো, ইমাদ(২১), পিতা-হেলাল মিয়া, সকলের বাড়ি পাগুলিয়া গ্রামে।বর্তমানে আহত তিনজনের চিকিৎসা চলছে ও তারা সুস্থ আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা. ফয়সুলুজ্জামান।
এদিকে সুনামগঞ্জে দিরাইয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ইকবাল হোসেন (৩৫) নামের এক ধানকাটা শ্রমিক। সন্ধ্যায় দিরাই উপজেলার ভরাম হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে তিনি আহত হন। এসময় তার সাথে থাকা অন্য শ্রমিকরা তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. নাজিয়া মানালুল ইসলাম তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিহত ইকবাল হোসেন ভোলা জেলার রসুলপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের সালা উদ্দিনের ছেলে। সে দিরাই পৌর সদরের চন্ডিপুর গ্রামে ধানকাটার শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন।
নিহতের ভগ্নীপতি সচির উদ্দিন জানান, আমরা ধান কাটতে ছিলাম, এসময় বৃষ্টি নামতে শুরু করলে আমরা জমি থেকে উঠার সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে সে মাটিতে পড়ে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার জানান সে মারা গেছে। এছাড়াও সকালের দিকে বজ্রপাতের কবলে পড়ে উপজেলার পৃথক জায়গায় এক কিশোরী সহ আরও তিনজন আহত হয়েছে।
অন্য আহতারা হলেন, দিরাই পৌর সদরের চন্ডিপুর গ্রামের হাফেজ মাওলানা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাঙ্গাডহর গ্রামের ইসমাইল মিয়া (৫০), কাদিরপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে পাপিয়া আক্তার (১৮)। এরমধ্যে গুরুতর আহত হাবিবুর রহমান হাবিবকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুর রাজ্জাক মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালেও আরও তিনজন আহত হয়েছেন, এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা জরুরী।
এদিকে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বজ্রপাতে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২৩ এপ্রিল বুধবার। বাড়ির সামনে খড় সংগ্রহ করার সময় বজ্রপাতে আবু আইয়ূব (২০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যায় উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের সেচনী গ্রামের এই ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহত আবু আইয়ূব সেচনী গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে। বজ্রপাতে নিহতের বড় ভাই অলিউর ও গ্রামের কাবিল মিয়ার ছেলে মনিরুল (৩৫) আহত হয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজীব সরকার।