সিলেটের বহুল আলোচিত ভূমি জালিয়াত মিসবাউল ইসলাম কয়েসকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট কোতয়ালি থানা পুলিশ। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় জল্লারপাড় রোডস্থ জিন্দাবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায় ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে প্রতারণা,হত্যাসহ প্রায় ৮ টি মামলা রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ভূমি দস্যু হেলেন আহমদ ছিলেন দুর্দণ্ড প্রতাপশালী। সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেনের অত্যন্ত ঘণিষ্টজন ছিলেন হেলেন আহমদ। আর হেলেন আহমদের ব্যক্তিগত চাকর থেকে একসময় ব্যবসায়ীক পার্টনার হওয়া ভূমি দস্যু মিসবাউল ইসলাম কয়েসও সেই দাপটকে কাজে লাগান। আওয়ামী রাতারাতি কয়েকশো কোটি টাকার মালিক বনে যান হেলেন-মিসবাহ। এ নিয়ে দেশের জাতীয় গণমাধ্যম থেকে স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
আইনজীবী মিসবাউল ইসলামের এক সময় নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো অবস্থা থাকলেও আজ তার রয়েছে একাধিক বাড়ি, গাড়ি এমনকি নারীও। ধর্ষণ মামলায়ও গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ পায় মিসবাউল ইসলামের। অবশ্য ক্ষমতার দাপটে সেই সময় মিসবাউল ইসলামকে কিচ্ছু করার ক্ষমতা ছিল না। হেলেন আহমদের দাপটের কাছে প্রশাসন জিম্মি থাকায় সুযোগ বোঝে দুজনেই প্রবাসীদের ভূমি দখল করে যাচ্ছিলেন। সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে হেলেন-মিসবাহ প্রতারণার শিকার হওয়া প্রবাসীরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবুও দমানো যায়নি এই দুষ্টচক্রকে।
এদিকে ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাতারাতি রূপ পাল্টে ফেলেন ভুমি প্রতারক ওই আইনজীবী। তিনি ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য নির্বাচিত হওয়া সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াত আমিরের ছবি পোস্ট করে শুভ কামনা জানান। এর আগে যিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের সকল অনুষ্ঠানের ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। বর্তমানে তিনি জামায়াত ইসলামীর সকল নেতাকর্মীদের ঘণিষ্ট হবার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এখন তিনি নিজেও দাবি করেন- সিলেট সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি শিবিরের রাজনীতি করতেন। এখানেই শেষ নয়। প্রতারক মিসবাউল ইসলাম জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল পদে থাকা অনেকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে মিসবাউল ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লেখা পোস্ট করেন তার প্রতিবেশি ও এক সময়কার ঘণিষ্টজন বলে খ্যাত জাষ্ট হাসান। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর জাষ্ট হাসান নামের ফেসবুক আইডির লেখা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে মন্তব্যে অংশ গ্রহণ করেন কয়েকশো মানুষ।অধিকাংশ মানুষই মিসবাউল ইসলামকে বহুরূপী আখ্যা দিয়ে এই প্রতারককে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। পাঠকদের সার্থে সেই আইডির লেখা হুবুহ তোলে ধরছি।
হোটেল বয় থেকে কোটিপতি মিসবাউল ইসলাম!
পুরো নাম মিসবাউল ইসলাম কয়েস। ২০০০ সালের দিকে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে জিন্দাবাজার এলাকায় গ্রাম বাংলা রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয় হোটেল বয় হিসেবে। নগরীর এই হোটেলটির অবস্থান ছিল সিলেট জিন্দাবাজার ফরিদ প্লাজায় যার মালিক ছিলেন রুহেল আহমেদ। যিনি ছিলেন জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদের স্বামী। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে রুহেল আহমেদ মৃত্যু হলে ব্যবসার হাল ধরেন হেলেন আহমদ। ব্যাবসায়ীক কাজে যখন মার্কেটে অফিসে আসতেন তখন তার গাড়ি থেকে হেলেন আহমেদের ব্যাগ নিয়ে উপরে নিয়ে দিয়ে আসতো এই হোটেল বয় কয়েছ। রেস্টুরেন্ট এর কাজ শেষ হওয়ার পরে তার নিয়োগ হয়ে যায় হেলেন আহমদের মার্কেট অফিসে এরপর থেকেই তার ভাগ্য খুলে যায়। একসময় সে হেলেন আহমেদের আস্থাভাজন হয়ে যাওয়া হেলেনা আহমেদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ে এবং সে হেলেনা আমাদের নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিন বসবাস করে। কখনো সে নিজেকে হেলেন আহমদের স্বামী পরিচয় দিয়ে, কখনো ব্যবসায়িক পাটনার কখনো হেলেন আহমেদের আইনজীবী হিসেবে তার পরিচয় দেয়। হেলেন আহমদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরে সে তালাক দেয় তার প্রথম স্ত্রীকে, যার বাড়ি দক্ষিণ সুরমার বরই কান্দি এলাকায় বলে জানা গেছে। হেলেনের সাথে অবৈধ সম্পর্কে থেকেও সে পরে আবার বিয়ে করে আরেক তরুনীকে যার বাড়ি সিলেট এর বিশ্বনাথ যার একটি সন্তানসহ সেই মহিলাকে সে তালাক দিয়ে দেয়, এর পরে আরও একটি বিবাহ করে এবং হেলেন আহমদের সাথেও অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যায়। হেলেন আহমেদের অফিসের যত তরুনীদেরকে সে চাকরি দিত তাদের সাথে সে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিচয় দিত এবং হাইকোর্টের বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্ত করে দিয়েছেন এই হেলেন আহমদ। হেলেন আহমদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার নেতৃত্বে সিলেটের বেশ কিছু মহিলারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ এর মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে এবং বিরুদ্ধে ও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আব্দুল মোমেন সাহেবের পিএস জুয়েল আহমদের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রবাসীদের জমি দখলের সাথে হেলেনের অন্যতম সহযোগী মিসবাউল ইসলাম। সিলেটের অনেক সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন সময় হুমকি ধমকি দিয়েছে এই মিসবাউল ও হেলেন গংরা!
বর্তমানে এই বহুরূপী নারী লোভী মিসবাউল নিজেকে জামায়াতের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে এবং সে সরকারি কলেজের শিবিরের সাথে যুক্ত ছিল হিসেবে ও প্রচার করছে। বর্তমানে জামায়াত নেতাদের ছবি দিয়ে সে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট করছে তার ফেইসবুক একাউন্টে। তাহার বাড়ি গোলাপগঞ্জ এলাকায় হওয়ায় সে জামায়াত নেতা জনাব মাওলানা হাবিবুর রহমানের আস্থাভাজন এবং আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে সব জায়গায় বিভিন্ন জামায়াত শিবির নেতাকর্মীর কাছে। সে বর্তমানে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেছে সে মামলা থেকে বাঁচার জন্য। সে জামায়াত শিবির পরিচয় দিয়ে তার অপকর্ম এবং হেলেন আহমদের অপকর্ম এবং মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে সকল রাজনৈতিক দলের উচিত এই সব আওয়ামী দূস্কৃতি কারীদের প্রসাশনের হাতে তুলে দিয়ে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা।