ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ক’জন বিপ্লবী নারী ইতিহাসস্রষ্টা, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন সিলেটের এক ক্ষণজন্মা নারী যাঁর নাম স্নেহলতা দত্তচৌধুরী (দেব)। পিতা ডা. শশীভূষণ দত্তচৌধুরী ছিলেন একজন প্রথিতযশা ডাক্তার। চিকিৎসাবিদ্যায় অনন্য অবদানের জন্য তদানীন্তন সরকার তাঁকে ‘স্বর্ণপদকে’ ভূষিত করে। মাতা কুসুমকুমারী দত্তচৌধুরী ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। তাঁদের চার পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে স্নেহলতা ছিলেন জ্যেষ্ঠ।
জন্ম ও বংশপরিচয় :
স্নেহলতা দত্ত সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার ইতিহাসখ্যাত বীরশ্রী গ্রামের জমিদার বংশে ৫ কার্তিক ১৩১১ মোতাবেক ১৯ অক্টোবর ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে-পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সেই পরিবারের বীজপুরুষ ছিলেন রাঢ়বাসী গৌতম গোত্রের কর্ণ্বকৌশিক উপগোত্রীয় রাজা নরহরি দত্ত। রাজা নরহরি দত্ত ছিলেন মহাভারতীয় যুগের অজেয় বীর বাঙালি কামরূপরাজ মহারাজা ভগদত্ত-র অধস্তন বংশধর। নরহরি দত্ত-র পুত্র নারায়ণ দত্ত গৌড়েশ্বর বল্লাল সেনের আমলে (১১৫৮-১১৭৯ খ্রি.) যুদ্ধমন্ত্রী ছিলেন। বল্লাল সেন কুলমর্যাদাভিত্তিক ঘৃণ্য শ্রেণিবৈষম্যপ্রথা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিলে যুদ্ধমন্ত্রী নারায়ণ দত্ত নিজ অনুসারীদের নিয়ে রাজার স্বৈরাচারমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই নারায়ণ দত্তই এই বংশের প্রথম বিপ্লবী রাজপুরুষ যিনি অন্যায় রাজাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
বল্লাল সেন দিল্লির মসনদে বসলে নিজ পুত্র লক্ষ্মণ সেন থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বাংলার শাসনভার না দিয়ে তৎকালীন বাংলার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সম্রাট বিশেষ অনুরোধ করে বিপ্লবী নারায়ণ দত্তকে দুই বছরের জন্য বাংলার শাসনকর্তার দায়িত্ব প্রদান করেন। নারায়ণ দত্ত স্বাধীনভাবে দুই বছর বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যারপরনাই উন্নয়ন ঘটিয়ে স্বেচ্ছায় অযোগ্য লক্ষ্মণ সেনের হাতে দায়িত্ব দিয়ে অবসরে চলে যান। এই নারায়ণ দত্ত-র কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন ভারতবিখ্যাত রসায়নবিদ চিকিৎসক আচার্য্য চক্রপাণি দত্ত। চক্রপাণি দত্ত-র দ্বিতীয় পুত্র মহীপতি দত্ত পিতৃআদেশ পালনার্থে তদানীন্তন পঞ্চখণ্ড অঞ্চলে কুশিয়ারকূল নামে এক বিশাল জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন এবং বীরশ্রী গ্রামের গোড়াপত্তন ঘটিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। এই মহীপতির পুত্র কল্যাণ দত্ত, তাঁর পুত্র বঙ্গ দত্ত, তাঁর পুত্র হরি দত্ত, তাঁর পুত্র ধর্মনারায়ণ, তাঁর পুত্র রূপচন্দ্রনারায়ণ, তাঁর পুত্র শ্যামরায়। এই শ্যামরায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইতিহাসখ্যাত রাজা সর্বানন্দ দত্তচৌধুরী দিল্লির সুলতান বহলুল লোদির যুদ্ধমন্ত্রী ও শাহজাদা বরবক শাহ ও নিজাম খানের সামরিক শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে নিয়ে ইতিহাসে একটি চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে ।
সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে ১৪৬৮/১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে শাহজাদাদ্বয়ের মধ্যে এক ঐতিহাসিক প্রতিযোগিতামূলক দাবা-খেলা অনুষ্ঠিত হয়। রাজা সর্বানন্দ দত্তচচৌধুরী স্নেহবশে ছোট শাহজাদা নিজাম খানকে কৌশলে দাবার একটি চাল বলে দিলে তিনি জয়লাভ করেন। এতে বড় শাহজাদা বরবক শাহ ক্রুদ্ধ হয়ে তরবারি কোষমুক্ত করে শিক্ষকের প্রাণনাশে উদ্যত হন, অপরদিকে ছোট শাহজাদা নিজাম খান প্রিয় শিক্ষকের প্রাণরক্ষার্থে স্বীয় তরবারিও কোষমুক্ত করে নেন। এমতাবস্থায় স্বয়ং সুলতানের হস্তক্ষেপে এ সমস্যার সুন্দর সমাধান হয়।
রাজা সর্বানন্দ দত্তচৌধুরী সুলতানের পরামর্শে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ‘রাজা সরওয়ার খান’ নামধারণ করেন। ‘হিন্দু হিসেবে মৃত্যু এবং মুসলমান হিসেবে পুনর্জন্ম’– এই মিমাংসার দ্বারা বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। সুলতান একটি তাম্রপত্রে এ ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে উৎকীর্ণ করে সরওয়ার খানকে প্রদান করে তাঁকে বাংলার সুলতান রুকনউদদীন বরবক শাহ(১৪৫৯-১৪৭৪)-এর বরাবরে প্রেরণ করেন। বাংলার সুলতান তাঁকে করিমগঞ্জ শহরের মধ্যস্থলে এক বিরাট জায়গির প্রদান করেন। অতঃপর রাজা সরওয়ার খান বাংলার সুলতানের জনৈক আত্মীয় ও সেনাপতি মুগলিস খাঁর কন্যা মেহেরুননেছাকে বিবাহ করেন। তিনি পূর্বতন স্ত্রী গঙ্গাদেবীর গর্ভজাত সন্তান শ্রীবীর দত্তচৌধুরীকে বীরশ্রীর জমিদারি দান করে দিয়ে সম্রাট কর্তৃক নতুনভাবে দানকৃত জমিদারি প্রাপ্ত হয়ে করিমগঞ্জ শহরে চলে যান এবং শহরের মধ্যস্থলে মাইজডিহিতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন । বাড়ির সম্মুখে ১৫০ বিঘা জমিতে একটি বিশাল দিঘি খনন করেন যা ‘সরওয়ার খাঁর দিঘি’ লোকমুখে ‘সরল খাঁর দিঘি’ নামে অদ্যাবধি কালের সাক্ষী হয়ে আছে ।
রাজা সরওয়ার খান কর্মোপলক্ষে দিল্লিতে থাকতেন । বাংলার সুলতান আলাউদদীন হোসাইন শাহ্-র অনুরোধে তিনি শ্রীহট্টের কতিপয় প্রভাবশালী রাজদ্রোহী জমিদার সুলতান বায়েজিদ, ভানুনারায়ণ প্রমুখের অন্যায় বিদ্রোহ দমনার্থে ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাতৃভূমি আসেন এবং এক যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত করে শ্রীহট্টে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। সুলতান প্রীত হয়ে তাঁকে ‘নবাব’ উপাধি দিয়ে সিলেটের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি ১৫১১খ্রি. পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নিয়ে দিল্লিতে ফিরে যান। তখন তাঁর পুত্র নবাব মীর খানকে সুলতান শ্রীহট্টের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সরওয়ার খানের মুসলমান স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র এই মীর খানই ছিলেন এই বংশের মুসলমান শাখার স্থপতি। তিনি ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপগড়ের পরাজিত জমিদার সুলতান বায়েজিদের কন্যা গুলনাহার বেগমকে বিবাহ করেন। অপরদিকে সরওয়ার খানের সনাতন স্ত্রী গঙ্গাদেবীর গর্ভজাত পুত্র শ্রীবীর দত্তচৌধুরীর রক্তধারায় সনাতন শাখা অদ্যাবধি বহমান রয়েছে। একই বংশজাত হিন্দু-মুসলিম উভয় ধারার মধ্যে রক্তের বন্ধন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি আজও অটুট রয়েছে।
কথিত আছে যে, আমাদের মুসলমান পরিবারের কেউ মারা গেলে হিন্দু জ্ঞাতিরা কুশিয়ারা নদীতে মাটির হাঁড়ি ভেঙে শোকপ্রকাশ করতেন এবং শেষকৃত্যানুষ্ঠানে এসে কবরে মাটি দিয়ে যেতেন। একইভাবে সনাতন পরিবারের কেউ মারা গেলে মুসলমান পরিবারের সদস্যরা আমের শাখা ভেঙে কুশিয়ারা নদীতে বিসর্জন দিয়ে শোকপ্রকাশ করতেন এবং শেষকৃত্যানুষ্ঠানে চিতায় কাঠ দিয়ে যেতেন। এবিষয়ে আমাদের গুরুসদয় দাদুর বাল্যসাথী ও স্ব-বংশীয় ভ্রাতুষ্পুত্র নরেন্দ্রকৃষ্ণ দত্তচৌধুরী তাঁর ‘পল্লীস্মৃতি’ নামের এক স্মৃতিচারণমূলক বিখ্যাত প্রবন্ধে লিখেছেন, “হিন্দু-মুসলমান আহার সম্বন্ধে সমাজে খুব কঠোরতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বংশটি ছিল এর ব্যতিক্রম। আমাদের হিন্দু-মুসলমান উভয় ধারার মধ্যে কিরূপ সম্প্রীতি ছিল তাহা একটি ঘটনায় স্পষ্ট প্রতীতি হইবে। আমার জ্যেষ্ঠতাত হরেকৃষ্ণ দত্তচৌধুরীকে তখনকার এক ইংরেজ সাবডিভিশনাল অফিসার (করিমগঞ্জের) সকলের সামনে ‘তুমি’ বলিয়া সম্বোধন করে। জ্যাঠামশায় সেখানে উপস্থিত আমাদের জ্ঞাতি জালালউদদীন চৌধুরীকে ডাকিয়া বলিলেন–‘বাবা শুনলে ত ফিরিঙ্গি কিরকম সকলের সামনে আমাকে অসম্মান করল।’ বাবাজী তৎক্ষনাৎ অপমানকারীকে চপেটাঘাত করেন। সেইজন্য জালালউদদীন চৌধুরীকে ছয়মাস কারাদণ্ড ভোগ করিতে হইয়াছিল। তখন তাঁহার পরিবারের ভরণপোষণ জ্যাঠামশায়ই করিয়াছিলেন। মুসলমান জ্ঞাতিদের কাহারও মরণ হইলে হিন্দু জ্ঞাতিদের এক ঢেলা করে মাটি কবরে ফেলিয়া আসিতে হইত ; আর হিন্দু কাহারও মরণ হইলে মুসলমান জ্ঞাতিদের একটুকরো করে কাঠ শ্মশানে ফেলিয়া আসিতে হইত। ‘তমোলী’ অর্থাৎ বিপদসূচক সংবাদ কিংবা শঙ্খধ্বনি শুনিলে মুসলমান জ্ঞাতিরা আগে আমাদের বাড়ি ছুটিয়া আসিতেন আর আমরাও আবশ্যকমত তাঁহাদের বাড়ি ছুটিয়া যাইতাম। সেই বীরত্বব্যঞ্জক মুখশ্রীযুুক্ত মুসলমান ভাইসকল আজ আমাদের নাই। আজ উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করিয়া ডাকিলেও কেহ আর ছুটিয়া আসে না, গ্রামের নির্জ্জন বনভূমি শুধু প্রতিধ্বনি তুলিয়া উপহাস করে। পূর্বপুরুষদের সম্বন্ধে অনেক গল্প এখনও শোনা যায়, সেগুলি লিখিতে গেলে পুঁথি অনেক বাড়িয়া যাইবে।”(মাসিক ‘বাংলার শক্তি’, ৩য় বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, চৈত্র ১৩৪৫, পৃ. ২৮৯-২৯০)।
এ প্রসঙ্গে গুরসদয় দত্তের জীবনীকার Sanker Sengupta-র Folklorists of Bengal (Calcutta, 1965, P. 129) গ্রন্থে বলা হয়েছে : It is to be noted in this connection that an ancestor of Gurusaday Dutt named Raja Sarbananda Duttchowdhury was converted to Muhammedanism and held a new name Raja Sarwar Khan. Still there is a family relation between his (Gurusaday) converted relatives and his family. The reason for pointing out this fact is to show that as a family they were unbiased and unorthodox. From this family tradition they got an unbiased and non-sectarian outlook.
এই রাজপরিবারের সনাতনী শাখায় আলোচ্য বিপ্লবী নারী স্নেহলতা দত্তচৌধুরীর জন্ম। তাঁর বংশতালিকা হলো: রাজা শ্রীবীর দত্তচৌধুরীর পুত্র রাজা গদাধর দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র রাজা বিপক দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার রাজা পিয়াইরাম দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার রঘুরাম দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার শ্রীচন্দ্র দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার রামজীবন দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার রামানন্দ দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ফৌজদার রাজা যশধর দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র রাজা হাঁড়িচাঁদ দত্তচৌধুরী (জায়গির তালুক নম্বর (১৫৪৯৩/৩), তাঁর পুত্র রামচন্দ্র দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র রত্নবল্লভ দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র রায়কৃষ্ণ দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র হরেকৃষ্ণ দত্তচৌধুরী, তাঁর পুত্র ডা. শশীভূষণ দত্তচৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেন আলোচ্য বিপ্লবী কন্যা স্নেহলতা দত্তচৌধুরী।
এই বংশের হিন্দু-মুসলিম উভয় শাখায় যেসব স্বদেশপ্রেমী সন্তানের জন্ম হয়েছে তাঁদের মধ্যে বিপ্লবী রাধাকৃষ্ণ দত্তচৌধুরী, ভারতবর্ষের সেরা আইসিএস স্বদেশপ্রেমী বিপ্লবী গুরুসদয় দত্ত, বিপ্লবী কংগ্রেসনেতা হাজি মতছিম আলী চৌধুরী, বিপ্লবী হাজি নজিব আলী চৌধুরী চিশতি (র.), প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ বিপ্লবী ড. ত্রিগুণা সেন (মাতৃসূত্রে), বিপ্লবী কবি আবদুল গফফার দত্তচৌধুরী, বিপ্লবী শশধর দত্তচৌধুরী, বিপ্লবী পুলিস অফিসার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আহাদ চৌধুরী, গণশিল্পী বিপ্লবী খালেদ চৌধুরী (মাতামহী সূত্রে), ভারতবিখ্যাত প্রকৌশলী ড. অমরেন্দ্রনাথ দত্তচৌধুরী, বিপ্লবী প্রফেসর ড. গিরীন্দ্রচন্দ্র দত্তচৌধুরী (প্রয়াত অধ্যক্ষ, ১৯৫০-১৯৫৯ খ্রি., সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ), শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. অরুণ দত্তচৌধুরী, আসামের ভাষাসৈনিক ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী (বটলা মিঞা), কবি দ্বীপেন্দ্রকৃষ্ণ দত্তচৌধুরী, ৫২-র ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আহমদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী মোসতাফা চৌধুরী, প্রমুখ ইতিহাসখ্যাত।
শিক্ষা ও বিপ্লবী জীবন :
স্নেহলতা দত্ত গুরুসদয় এম ই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে করিমগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী হলেও রক্ষণশীল সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার আগেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। ১১ কার্তিক ১৩২৬ মোতাবেক ১০ অক্টোবর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের গোটাটিকর মালিগাঁও নিবাসী বিখ্যাত কংগ্রেসনেতা বিপ্লবী এডভোকেট উপেন্দ্রনাথ দেব (এমএএলএলবি )-এর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।
তাঁর স্বামী বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ দেব সম্পর্কে একটু অালোকপাত করছি। উপেন্দ্রনাথ দেব ছিলেন উত্তর শ্রীহট্ট মহকুমা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির নির্বাহী সদস্য। তাঁর অনুজ সহোদর দুই ভ্রাতা সতীন্দ্রনাথ দেব ও যতীন্দ্রনাথ দেবও স্বদেশি বিপ্লবী ছিলেন। উপেন্দ্রনাথ দেব ১৯৩০ সালে নেতাজির আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে দুই মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং ১৯৩২ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে দেড় বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন।
স্নেহলতার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত হলেও স্বামীর সাহচর্যে তিনি ইংরেজি, বাংলা, ফারসী প্রভৃতি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম, রুশ ও ফরাসী বিপ্লবের উপর বিভিন্ন বইপত্র পাঠ করে বিশ্ব রাজনীতির উপর অগাধ জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হন। বিপ্লবী পরিবারের কন্যা হওয়ায় তাঁর ধমনীতে যে বিপ্লবী রক্তধারা বহমান ছিল, বিপ্লবী পরিবারের বধূ হয়ে আসার পর সেই রক্তে সোনায় সোহাগা ঘটলো।
স্নেহলতা দত্ত ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এ আন্দোলনই মেয়েদেরকে সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ করে রাজনীতি সচেতন করেছে। তাদের ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিপ্লবী নারী লীলা নাগের উদ্যোগে ‘নিখিলবঙ্গ নারী ভোটাধিকার সমিতি’র শাখা বাংলার জেলায় জেলায় গঠিত হয়। সিলেটের কমিটির সম্পাদিকা নিযুক্ত হন স্নেহলতা। ১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গে বন্যাত্রাণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর দ্বারা গঠিত ‘বন্যাত্রাণ কমিটি’কে সাহায্য করার জন্য বিপ্লবী লীলা নাগের উদ্যোগে ঢাকায় গঠিত হয় ‘ঢাকা মহিলা ত্রাণ কমিটি’ এবং সিলেটে স্নেহলতা গঠন করেন ‘সিলেট মহিলা ত্রাণ কমিটি’। সিলেটের কমিটিতে স্নেহলতা সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করেন এবং অতি অল্প সময়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বহু অর্থ ও জামা-কাপড় সংগ্রহ করে লীলা নাগের কাছে ঢাকায় প্রেরণ করেন।
১৯২৬ সালে কলকাতায় ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’ গঠিত হলে সিলেটেও এর শাখা গঠিত হয়। স্নেহলতা সিলেটের কমিটিতে সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। এই সমিতির মূল কার্যক্রম ছিল: লাঠি খেলা, কারাত কৌশল ও ছোরা নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ দেওয়া। ১৯২৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার বিপ্লবী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করে। সিলেটের বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে এ সম্মেলনে স্নেহলতা দত্ত অংশগ্রহণ করেন। এসময় গুরুসদয় দত্ত-র সাথে দেখা করে তিনি গুরুসদয়ের ‘সরোজনলিনী নারীমঙ্গল সমিতি’রও সদস্যভুক্তি গ্রহণ করেন। অতঃপর সিলেটে প্রত্যাবর্তন করে ‘সরোজনলিনী নারীমঙ্গল সমিতি’র শাখা গঠন করেন এবং এর সম্পাদিকার দায়িত্বও গ্রহণ করেন। এই সমিতির স্বদেশপ্রেম জাগানিয়া গঠনমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি তিনি নারীদেরকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নেন অতীব গোপনে। এই সমিতির ভেতরে একটি সশস্ত্র নারীবিপ্লবী স্কোয়াড গঠন করে এটিরও অধিনায়কত্ব তিনি গ্রহণ করেন। বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার পাথারিয়া পাহাড়ে এই স্কোয়াডের সদস্যাদেরকে পিস্তল, ছোরা প্রভৃতি হাল্কা অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বিলঙ্গময়ী কর, চারুশীলা দেব, অপর্ণা পালচৌধুরী প্রমুখ সাহসী নারীরা এই স্কোয়াডের সদস্যা ছিলেন।
স্নেহলতা ১৯৩০ সালে গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সিলেটের ‘মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটি’র সহ-সম্পাদিকা হিসেবে নোয়াখালীতে লবণ আইনভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এবছর ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল সংক্রান্ত মামলার ব্যয় নির্বাহের জন্য স্নেহলতা দত্ত সিলেট থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে দেন। ১৯৩২ সালে সত্যাগ্রহ ও সশস্ত্র বিপ্লব চরম পর্যায়ে। ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ইউরোপীয়ান ক্লাবে এক সম্মুখযুদ্ধে বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা শহীদ হন। এর প্রতিবাদ করায় প্রীতিলতার সহযোদ্ধা সন্দেহে সিলেটে গ্রেফতার হন স্নেহলতা। দেড় বছরের দ্বিতীয় শিশুপুত্র জ্যোতির্ময়কে সঙ্গে নিয়ে তিনি ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩৯-এর ‘কৃষক আন্দোলনে’ তিনি বৃহত্তর সিলেটের ‘কৃষাণ-কৃষাণী সংগ্রাম কমিটি’র সাধারণ সম্পাদিকা ও করিমগঞ্জ মহকুমা কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। এবছরের ২৩ জুলাই পঞ্চখণ্ডের লাতু দাসগ্রামে অনুষ্ঠিত মহিলা সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
স্নেহলতা দত্ত নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী ছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এক বিরাট অংশ ছিল সুভাষপন্থী। সিলেটের কংগ্রেসে সুভাষপন্থী নেতা বিপ্লবী ব্রজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কংগ্রেস সঙ্ঘের’ কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন স্নেহলতা । তাছাড়া ১৯৩৮ সালে ত্রিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীর মনোনীত প্রার্থী সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু গান্ধীর বাঙালিবিদ্বেষী ভূমিকার কারণে নেতাজি কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন এবং ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। সিলেটেও এর শাখা গঠিত হয়। স্নেহলতা দত্তকে ফরওয়ার্ড ব্লকের সিলেট জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ মনোনীত করা হয়। অতঃপর করিমগঞ্জ মহকুমায় ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দলের শাখা গঠিত হলে স্নেহলতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪২-এর ঐতিহাসিক ‘আগস্ট বিপ্লবে (Quit India Movement)’ শ্রীহট্টনন্দিনী স্নেহলতা দত্ত-র দুঃসাহসী ভূমিকা তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিপ্লবী নারীদের মধ্যে প্রথম সারির আসনে সমাসীন করে। তাঁর বিপ্লবী স্কোয়াডের মেয়েরা ছিলেন আত্মঘাতী এবং সবসময় সশস্ত্র থাকলেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগমুহূর্তে জাদুমন্ত্রের মতো অস্ত্রগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হতেন। অবশ্য সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ তাঁদের কখনো ঘটেনি। যাই হোক, সশস্ত্র সংঘর্ষের লক্ষ্যে ১৯৪২-এর ৩১ আগস্ট স্নেহলতা তাঁর বিশেষ নারী স্কোয়াডসহ স্বাধীনতার পতাকা হাতে শ’তিনেক নারীর এক বাহিনী নিয়ে সিলেট জেলা জজকোর্ট ঘেরাও করেন। কংগ্রেসনেত্রী সরলাবালা দেবকে এ কর্মসূচির সঞ্চালক নিয়োজিত করা হয়। তিনিও স্নেহলতার মূল লক্ষ্য সম্পর্কে আদৌ টের পাননি। স্নেহলতা জজদের বিচারকার্য স্থগিত করে দিতে সক্ষম হন। জেলা জজ ছিলেন একজন ইংরেজ। স্নেহলতা ছিলেন প্রখর প্রজ্ঞাবতী একজন বিপ্লবী। তিনি সশস্ত্র সংঘর্ষে না গিয়ে কৌশলে কার্যসিদ্ধির প্রয়াস চালান। জেলা জজ পুলিশ বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে এজলাসে উঠতে চাইলে স্নেহলতা তার জামার কলার ধরে টেনে বের করে দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে নিজে জজের আসনে বসে পড়েন। তখন ছিল সকাল ১১ টা। পুলিশের গুলির ভয় উপেক্ষা করে বিপ্লবী স্কোয়াডের কয়েকজন জানবাজ মেয়ে এজলাস প্রহরায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের প্রতি নির্দেশ ছিল- কোনো পুলিশি হামলা এলে জজসহ অন্যান্যদেরকে হত্যা করতে হবে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে সশস্ত্র সকলকে আত্মহত্যা করতে হবে। বাহিরে অন্যান্য মেয়েরা বন্দেমাতরম ধ্বনি তুলে সমগ্র কোর্ট এলাকা মুখরিত করে রেখেছিলেন। সুবিধামত এক নিরাপদ স্থানে একটি জীপ নিয়ে সশস্ত্র কয়েকজন মেয়ে অপেক্ষা করছিলেন। স্নেহলতা জজের আসনে বসেই উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘ আজ থেকে বাংলায় ইংরেজ শাসনের শিকল ছিন্ন হলো। আজ এ আসনে বসে বাংলা মা-র স্বাধীনতার সূচনা করলাম। বন্দেমাতরম !’ বিকাল ৫ টায় আসন ছেড়ে সহযোদ্ধা নারীবাহিনীর বিশেষ এস্কর্টের ভেতর দিয়ে দ্রুতগতিতে তিনি সরে পড়েন এবং ঐ জীপে আরোহণ করে নিমেষেই উধাও হয়ে যান। পরদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে এক গোপন আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মুহাম্মদ শামসুল হক সম্পাদিত ‘ইতিহাসের খসড়া : সুহাসিনীকথা’, তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০ এবং অদিতি দাস সম্পাদিত ‘Women Words : মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের নারী’: পর্ব-১, তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে জানা যায় যে, সেই সময় স্নেহলতা দেব-এর সাথে গ্রেফতার হন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ‘শ্রীহট্ট মহিলা সংঘে’র অন্যান্য কর্মীবৃন্দ : বিপ্লবী অগ্নিকন্যা সুহাসিনী দাস, সুনীতিবালা দেব, প্রফুল্লকুমারী দত্ত, যামিনীবালা দাস, হিরণবালা দেবী, ঊষারাণী দাস, উমা চক্রবর্তী, লীলাবতী দত্ত, সুখদা পালচৌধুরী, শোভনা দেব, নরেশনন্দিনী দত্ত, চারুশীলা দেব প্রমুখ।💪
এ ঘটনাটি সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে এবং তৎকালীন পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। বিচারে তাঁর এক বছরের কারাদণ্ড হয় এবং এক বছরের শিশুকন্যা স্বপ্না দেবকে নিয়ে কারাদণ্ড ভোগ করেন। জেলে তাঁর উপর চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। হাতের শাখা পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়। একটি মাত্র শাড়ি ও একটি কম্বল ছিল তাঁর সম্বল। শোবার জন্য কোনো বালিশও দেওয়া হয়নি। ইটে মাথা রেখে ঘুমাতেন। এভাবে থাকতে থাকতে তাঁর মাথায় পচন ধরে গিয়েছিল। শাড়ি পরে গোসল করতেন এবং কম্বলখানি পরে থাকতেন। শাড়ি শুকালে তা পরতেন। এভাবেই তাঁর জেল জীবন অতিবাহিত হয়। জেলে অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে তিনি একনাগাড়ে ১৩ দিন অনশন করেন। সরকার সেই অনশন ভাঙ্গানোর জন্য স্প্রে করে কমলালেবুর রস পর্যন্ত মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জেলে তাঁর সতীর্থদের মধ্যে বিপ্লবী যজ্ঞেশ্বর দাস, সুরেশচন্দ্র দেব, রথীন সেন প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। তাঁর স্বামী বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ দেব তখন অন্য একটি রাজদ্রোহী মামলায় আসামের নওগাঁ জেলে বন্দি ছিলেন। আগস্ট বিপ্লবের ঐতিহাসিক ঘটনার পর থেকে সতীর্থমহল তাঁকে জজদি বলে সম্বোধন করতেন।
শেষজীবন ও মৃত্যু :
১৯৪৭-এর ১৫ অগাস্ট যদিওবা ভারতবর্ষ তথাকথিত স্বাধীনতা পেল, তথাপি নেতাজির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার গর্ব ও আনন্দের পূর্ণ আস্বাদ ভারতবর্ষের কেউ পেল না। দেশবিভাগের পরিণতির যন্ত্রণা ও বিষাদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিধ্বস্ত পূর্ববঙ্গের সনাতন সম্প্রদায়ের জনস্রোত নিরাপত্তা-সঙ্কটের জন্য বাস্তুত্যাগী হয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এই বীরকন্যাও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন। তবে তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি। এই বীরকন্যা তাঁর জীবদ্দশায় কোনোদিন কারোর কাছে মাথা নত করেননি। স্বাধীনতা লাভের পর আত্মপ্রত্যয়, বিশ্বাস আর আশায় উদ্দীপ্ত হয়ে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনায় ভারতের আসাম প্রদেশের অধুনা মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের লাইমুখরা অঞ্চলের গর্ডন ভাগ্যকূলের বাড়িতে কাটিয়েছেন। জজের চেয়ার দখল করে বসেছিলেন বলে স্নেহলতা দেব এর ভাগ্যকূলের এই বাড়ীটি ‘জজদি বাড়ি’ বলে আজও পরিচিত।
স্বাধীনতার ২৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে ১৯৭২ সালে ১৫ই আগস্ট দিল্লির লালকেল্লায় ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি স্বয়ং নিজ হস্তে তাম্রপত্র প্রদানের মাধ্যমে স্নেহলতা দত্তচৌধুরীকে ভারতের অন্যতম সেরা এক স্বাধীনতাসংগ্রামী বিপ্লবী ‘বীরকন্যা’ হিসাবে রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত করেন।
১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর এই মহীয়সী বিপ্লবী নারী শিলং-এর ভাগ্যকূল গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। স্নেহলতা দত্তচৌধুরী(দেব) আমাদের বাঙালি জাতির গর্ব, সিলেটবাসীর অহঙ্কার।💪
তথ্য সহায়িকা
১. শ্রীমনোজ বসু সম্পাদিত মাসিক ‘বাংলার শক্তি’ ৩য় বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, চৈত্র ১৩৪৫
২. মোস্তফা কামাল, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শ্রীহট্ট’, জুলাই ২০১০, ঢাকা
৩. লেখক কর্তৃক গৃহীত বিপ্লবী শশধর দত্তচৌধুরীর স্ত্রী শ্রীমতী বাসন্তী দত্তচৌধুরীর সাক্ষাৎকার, ১৫ অক্টোবর ২০১০, মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট
৪. ফজলুল হক সম্পাদিত ‘বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজ আহমদ চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ’, ২৬ মার্চ ২০১১, সিলেট
৫. প্রফেসর মো. আবদুল আজিজ সম্পাদিত ‘বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস’, প্রথম খণ্ড, নভেম্বর ১৯৯৭, সিলেট
৬. নীরদকুমার গুপ্ত, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি’ শক্তি প্রেস, শিলচর-৫, ১৯৭৪, আসাম, ভারত
৭. মালেকা বেগম, ‘বাংলার নারী আন্দোলন’, ২০১০, ইউপিএল, ঢাকা
৮. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘জাগরণ’, ২৫ আগস্ট ১৯৩৯, সিলেট
৯. দেবব্রত দত্ত, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রীহট্টের অবদানের এক অধ্যায়’, ১৯৮২, দিল্লি
১০.সাপ্তাহিক ‘জনশক্তি’, ২৩শ বর্ষ, ২১শ সংখ্যা, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪২
১১. মাসিক ‘সিলেট ভিউ’, মার্চ ২০১৩