দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রাম। ইতিমধ্যে সোনাপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, গাছপালা, রাস্তা, কবরস্থান, খেলার মাঠ ও শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের আরও অন্তত দুই শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
সরজমিন দেখা গেছে, নদীর পানির স্রোতের সঙ্গে কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পড়ছে। তীরের বাসিন্দাদের অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় বসতভিটার গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক গাছপালা ভেঙে নদীর পানিতে পড়েছে। কয়েক বছর ধরেই সোনাপুর গ্রামে চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কর্মযজ্ঞ। ভাঙন আবার অনেকের বসতভিটা পর্যন্ত চলে এসেছে।
উপজেলায় সুরমা নদীর একাধিক সাইটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকার নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সবচেয়ে ভাঙনকবলিত সোনাপুর গ্রাম প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়নি। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। সোনাপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধা ছয়দুন নেছার (৭০) বসতঘর ভাঙনকবলিত স্থান থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে। এখন কী করবেন, জানেন না তিনি। ভাঙনের শঙ্কা নিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে তীরে বসে আছেন তিনি। চোখেমুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। নিজের বসতঘরটি ভেঙে গেলে আর যাওয়ার জায়গা নেই বলে জানান তিনি।
কৃষক আনোয়ার আলী ও নূর ইসলাম জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা শুরু হয়। গত ১০ বছরে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে। চার সন্তানের জননী খালেদা আক্তার নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন অন্যের জমিতে। তিনি জানান, একসময় বসতঘর, ফসলি জমি সবই ছিল। চোখের সামনেই সবকিছু গিলে খেয়েছে সুরমা নদী। কিছুই করতে পারেননি তিনি। আফতাব উদ্দিন জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিন কেয়ার জমি ছিল তার। ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে এখন কেবলমাত্র তার আধ কেয়ার ভিটেজমি অবশিষ্ট আছে।
মো. জমশেদ আলী জানান, প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো সোনাপুর গ্রামটি এখনই রক্ষার কোনো উদ্যোগ না নিলে একসময় পুরো গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। গ্রামবাসীরা উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোয়ারাবাজার পওর উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. শমশের আলী জানান, সুরমা নদী ভাঙন প্রতিরোধে ইতিমধ্যে দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রায় শতকোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে সুরমা নদীর একাধিক সাইটে আরও কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সোনাপুর গ্রামসহ দোয়ারাবাজারের আরও কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকা আমাদের নজরে আছে। আগামীতে নতুন প্রকল্পে এসব এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।