1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 2:08 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

গল্প > নীল রঙের শাড়ি

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, এপ্রিল ৫, ২০২৫
  • 53 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

এই যে অনিরুদ্ধ ভাই কোথায় যাচ্ছেন? শাড়ি না কিনলে, আপনার সাথে কোন কথা নেই।

শিউলি নাছোড়বান্দা। তাই একটু লুকিয়ে পাশ কেটে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল অনিরুদ্ধ। কিন্তু হলো না। দাঁড়াতে হলো ওর সামনে।

— আমি শাড়ি কিনে কি করবো বলো? দেওয়ার মত কেউ নেই।

—কেন? সেদিন যে দেখলাম একজনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন।

—হাঁটতে দেখেছ। হাত ধরতে দেখেছ কি?

— না, তা দেখিনি।

— তাহলে, হাত ধরার কেউ যখন নেই তখন শাড়ি কেন কিনবো, বলতে পারো?

— আসেন, এদিকে আসেন। একটা শাড়ি আপনাকে আমি দেখাই।

অনিরুদ্ধ দাঁড়াল, এগিয়ে এলো শিউলির স্টলের দিকে।

অনেক শাড়ির নিচের থেকে বের করে আনলো অতি সাধারণ একটা শাড়ি। নীলচে রংএর।

বলল, এই শাড়িটা আমি আপনাকে গিফট দিলাম।

—কারণ?

—এমনি। এই শাড়ি যে কিনেছে, সে কদিন পরে ফেরত দিয়ে গেছে। কারণ জানতে চাইলে বলেছে কর্তার পছন্দ না।

তাই আপনার যখন সাতে পাঁচে কেউ নেই তাই আপনিই রাখেন, অন্ততপক্ষে আমার কথা তো মনে পড়বে!

অনিরুদ্ধ হেসে বলল, তথাস্তু।

তারপর অনেকদিন পার হয়ে গেছে।

এক সকালে অলস মুহূর্তে অনিরুদ্ধ ওয়াড্রোবের ভাঙা হাতলটা লাগানোর চেষ্টা করছিল। হঠাৎ চোখে পড়লো সেই শাড়িটা। একটা আকর্ষণ অনুভব করলো। হাতে করে নিয়ে এসে বসলো সোফায়। জানালা দিয়ে রোদের আলো এসে পড়েছিল শাড়িটার ওপর। নীলাভ রং আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

শাড়িটা খুলে ধরল। মনে পড়ল শিউলি বলেছিল যে কিনেছে সে ফেরত দিয়ে গেছে। কেন?

অনিরুদ্ধর মন বিচরণ করতে লাগল সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য।

হঠাৎ দেখতে পেল শাড়ির এক কোনায় ছোট্ট একটা দাগ।

খুবই ছোট। লালচে রঙের।

রক্ত কি?

হাত দিয়ে ঘঁষে উঠানোর চেষ্টা করল। দাগটা মুছলো না।

তাহলে কি যে প্রথম এই শাড়িটা পরেছিল তার রক্ত?

নিজে নিজেই অনেক কল্পনা করলো অনিরুদ্ধ।

কল্পনা করল শ্যামলা ছিপছিপে মেয়েটার শরীরে পেঁচিয়ে শাড়িটা ঝুলে পড়েছে বাঁ কাঁধে। হয়ত সে হাঁটতে গিয়ে চকিত চেয়েছিল পিছনে। ঠোঁটের কোনে ছিল মিষ্টি হাসি। হয়তো চোখাচোখি হয়েছিল পিছনে হেঁটে আসা ছেলেটার সাথে। লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে আঁচল টেনে নিয়েছিল ডানে।

অথবা আঁচল উঠিয়ে দিয়েছিল মাথার উপর। কপালে নীল রঙের টিপ। চোখ আঁকা কালো কাজল দিয়ে। চোখের পাতায় কালো মাসকারার ছোঁয়া।

একদিন হয়ত গাঁটছড়া বেঁধেছিল ওরা।

হয়েছিল কথা কাটাকাটি। উত্তেজিত হয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল মেয়েটাকে। কেটে গিয়েছিল শরীরের কোনো অংশ। তারই রক্ত।

হয়ত সেই আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছিল।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় শাড়িটা খুলে রেখে দিয়েছিল।

তারপর হাত বদল হতে হতে শেষ এসে পড়েছিলো শিউলির হাতে।

অভিশপ্ত এই শাড়ি।

যে পরিধান করেছে সেই স্বপ্নে শুনতে পেয়েছে একটি মেয়ের করুণ আর্তনাদ।

বলছে সে আমাকে ও হত্যা করেছে। আমি বিচার চাই। কেন সে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল? কেন? কেন?

আমি তো অন্যায় কিছু করিনি। ও কেন আমার সব কথা শুনতে চাইলো না।

যার সাথে সে আমাকে চলতে দেখেছিল সে আমার ছোট বেলার বন্ধু।

কেন শুনতে চাইলো না আমার কথা।

যখন প্রেম করেছি হাতে হাত ধরে ঘুরেছি ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি তখন তো সে রাগ করেনি।

যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, কাছে এসে বলেছিল, ‘নীল নীল নীলাঞ্জনা…

চোখ দু’টো টানা টানা…

কপালের টিপ যেন জোনাকির দীপ

আমি প্রেমে পড়েছি তুমি কর না মানা’

মানা তো আমি করিনি।

আমি তো ওকে নিয়ে সুন্দর সংসার গড়তে চেয়েছিলাম।

আমি আবারও ফিরে আসতে চাই এই পৃথিবীতে।

হুঁশ হুঁশ শব্দে অনিরুদ্ধ ফিরে এলো বাস্তবে। চায়ের পানি গরম হয়ে গেছে।

চা নিয়ে এলো।

আবারও দেখলো শাড়িটাকে।

নন্দিনীকে কল দিলো অনিরুদ্ধ।

বলল, তোমার সাথে জরুরি দরকার ছিল। আসতে পারবে?

নন্দিনী এসেছিল।

অনিরুদ্ধ বলেছিল এই শাড়িটা তোমাকে দিলাম। শুধু একটা কথা, কোন প্রশ্ন করো না। কেন দিলাম জানতে চেওনা।

নন্দিনী নিয়েছিল। প্রশ্ন করেনি।

তিনদিন পার হয়ে গেছে। নন্দিনী কল করেনি।

চতুর্থ দিন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।

নন্দিনী দাঁড়িয়ে। হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগ। অনিরুদ্ধের হাতে দিয়ে বলল—

দাঁড়ানোর সময় নেই। এটা রাখো।

অনিরুদ্ধ হাতে নিলো। নন্দিনী সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।

অনিরুদ্ধ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে তাকালো ব্যাগটার ভিতরে।

নীলচে রঙের সেই শাড়িটা।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews