কিশোরী বালিকার ডাক
.
নাহ ! কেউই থামছে না, সবাই চলে যাচ্ছে;
যে যার মতো করে। সবার ঠিকানা আছে, আছে গন্তব্য
তাদের চোখে-মুখে ছাপ নেই আবেদনের, নেই কোনে আর্তি
ভরা রাস্তায় রিক্সার টুং টাং শব্দ
বাহারি রঙয়ের গাড়ি চলছে একের পর এক
পুরো শহর যেন এক শব্দের মহোৎসব।
উৎসবযজ্ঞ আবার সকলের নয়, কেউ হাঁটে একাকী
জীবনের হিশেব কষছে আনমনে।
শহর কাঁপিয়ে যান যাচ্ছে আকাশ পথে
কেউ যাচ্ছে,দামি গাড়ি হাঁকিয়ে
নববধূকে সঙ্গে নিয়ে।
প্রেমিক যাচ্ছে প্রেমিকার গায়ের উপর মাথা রেখে।
হাসপাতাল থেকে ছেলে যাচ্ছে মাকে নিয়ে
কেউবা আবার বের হচ্ছে বাবার মরদেহ নিয়ে।
ব্যস্থ নগরীতে কেউই থেমে নেই। তবুও কিছু গাড়ি থেমে যায়
আগে-পিছে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে
চৌরাস্তা অতিক্রম করছিল আরো একটি গাড়ি
রাইফেল কাত করে রাস্তায় সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড়ানো ডজনখানেক সিপাহী
অবশেষে গাড়িটিও চলে গেল নির্বিঘ্নে
রাস্তার একপাশে দাঁড়ানো জীর্ণদেহী কিশোরী বালিকা
হুইল চেয়ারে বসা তার প্রতিবন্ধি বাবা।
রাস্তার দুপাশ এখন জনশুন্য
সবারই গন্তব্য আছে, ঠিকানা আছে। আছে বিস্তর জমা-খরচ।
কেউ এসে একবারও জিজ্ঞেস করেনি
‘বালক তোমার ঠিকানা কোথায়?
পিছন থেকে একটি ডাক শোনে ফিরে থাকালাম।
আহ! কি মধূর ডাক
প্রতিবন্ধি বাবার হাত ধরা সেই কিশোরী বালিকার ডাক
‘একটা ট্যাহা দ্যান না গো বড় ভাই, একটা ট্যাহা দ্যান না গো”
মুহুর্তেই ঝলসে উঠলো আমার দু’চোখ
অন্তত একটি ডাক আমি শুনতে পেলাম।
এখানে কেউই থামে না, সবাই যায় ফিরবে বলে
কেবল দাঁড়িয়ে আছি আমি!