সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইউসুফ আলী (৬২) ও তার লোকজনদের বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর বাজারের পশ্চিমপাশে থাকা ২১ শতক সরকারি খাস জমির মধ্যে ১৫ শতক জামি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বাড়ি উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে।
সরেজমিন উপজেলার গোলকপুর বাজারে গিয়ে ওই বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এবং অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী ও তার লোকজন তার (ইউসুফ আলী) ছেলে শহীদুল ইসলাম পুলিশের এসআই পদে কর্মরত থাকায় নিজ ছেলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি গত ৯ এপ্রিল বুধবার সকাল ১০টার দিকে সরকারি ২১শতক সরকারি খাস জমির মধ্যে ১৫শতক জমির অবৈধভাবে দখলে যান। পরদিন ১০ই এপ্রিল সকালে ওই জমিতে মাটি ভরাট কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া সরকারি খাস জায়গা দখল করা স্থানে বাঁশের খুঁটি পুতে সড়কের পাশ দিয়ে টিনের বেড়া তৈরি করে।
উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গোলকপুর বাজারের ব্যবসায়ী হেলাল চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ইউসুফ আলী এই এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাব খাটিয়েছে। তিনি তার লোকজন সরকারি ১৫ শতক খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। তাঁর ছেলে পুলিশের একজন এসআই হওয়ায় এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এই কাজটি করেছেন। সরকারি এই খাস জমিটি দখলমুক্ত করার জন্য গোলকপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে আমি গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ইউসুফ আলীসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
এব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, আমি ও আমার লোকজনদের বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি দখল করার যে অভিযোগটি আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা যে জমি দখলে আছি সেটি আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া রেকর্ডভূক্ত জমি। আমি আমার ছেলের ক্ষমতার কোনো প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই আসে না। আমি ও আমার ছেলেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিপদে ফেলার জন্য একটি কুচক্রী মহল এ ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এই জায়গাটি সরকারি খাস জায়গা হলে অবশ্যই আমি তা ছেড়ে দিবো।
শিক্ষক ইউসুফ আলীর ভাতিজা কবির মিয়া বলেন, আমাদের জমিতে যদি সরকার খাস জমি থাকে আর যদি সার্ভেয়ার এসে মেপে আলাদা করে তাহলে আমরা তা সরকারের প্রয়োজনে ছেড়ে দিবো।
সাইফুল প্রধানের ভাই মাইদুল প্রধান বলেন, এই জমিটি পতিত অবস্থায় পড়েছিলো বিধায় আমরা ব্যবসার জন্য দুটি ঘর নির্মাণ করে ছিলাম। কোনো দলীয় প্রভাব খাটানো হয়নি। আর যেখানে আমার আর আয়ুব খানের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তা যদি সরকারি খাস জমি হয় তাহলে সরকারের প্রয়োজনে সরকার চাইলে আমরা তা ছেড়ে দিবো।
সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফুল মিয়া বলেন, এই খাস জমিটি দীর্ঘদিন ধরে পতিত অবস্থায় আছে। বর্ষকালে এখান দিয়ে দূর থেকে আসা নৌকার যাত্রী ওঠানামা করে এবং শুকনো মৌসুমে স্কুলের ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা খেলা দুলা করে। এখন যারা মালিকানা দাবী করে দখল নেয়ার চেষ্টা করছে তখন তাদের পরিবারের লোকজনও এই জমিটি রাক্ষার সার্থে আমাদের সাথে ছিলো। যখন আমরা এই রক্ষার্থে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করে ছিলাম।
ওই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সুহেল মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে খাস জমিটি মাপার জন্য সরকারি সার্ভেয়ার আসছিলো। পরে দখলদার ও বাজার পক্ষ ঝগড়া লাগায় আর মাপা হয়নি।
উপজেলা ভূমি অফিসের সরকারি সার্ভেয়ার শাহীন আলম বলেন, কিছুদিন আগে আমি সেখানে গিয়ে ছিলাম খাস জমিটি মেপার জন্য । কিন্তু বাজার পক্ষ ও দখলদার পক্ষ ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ায় মাপতে পারিনি। পরে আমরা এই ঘটনা ইউএনও স্যারকে জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনি রায় বলেন, উপজেলার গোলকপুর বাজারের সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলের একটি লিখিত অভিযোগটি আমি পেয়েছি। তার সেখানে সরকারি সার্ভেয়ার ও নায়েবকে পাঠিয়েছি। তার পর সার্ভেয়ার ওই খাস জমি পামতে গেলে দখলদার ও স্থানীয় বাজার পক্ষ ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ায় আর মাপা সম্ভব হয়নি। না মেপেই তারা চলে আসে। তার পর পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং ওই জমিতে যেন না যায় দখলদারকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ ও সার্ভেয়ার পাঠিয়ে মাপা হবে। আর সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ অবৈধ দখলে গিয়ে থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।