এতিমের ভুয়া তালিকা বানিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা। এতে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত এতিমরা। এ ছাড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে অর্থ ছাড়ের নামে চলছে অনিয়মের মহোৎসব। এমন চিত্র দেখা গেছে চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর দারুল উলুম এতিমখানায়।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিন মিয়া বলেন, অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফজালুর রহমান বলেন, এতিম শিশুদের প্রতিপালনের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের বরাদ্দ অনুযায়ী প্রত্যেক এতিমের মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে খাদ্য বাবদ ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোশাক বাবদ ২০০ টাকা এবং ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২০০ টাকা। ভুয়া এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ করা অর্থ উত্তোলন করলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, চুনারুঘাটে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ এতিমখানা রয়েছে ৬টি। আইন অনুযায়ী ক্যাপিটেশন গ্রান্টের বিল পরিশোধের সময় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ ও বণ্টন নীতিমালা ২০১৫ অনুযায়ী এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক বিল প্রস্তুতপূর্বক খরচের হিসাব এতিমখানার কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য উপস্থাপন এবং অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এরপর কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত রেজুলেশন খরচের বিলগুলো উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে দাখিল করতে হবে।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা, আচার-আচরণ ও নৈতিকতার বন্ধন তৈরি হওয়ার কথা সেখানে যদি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় তা হলে অচিরেই দমন করা প্রয়োজন মনে বলে করি আমি।
এ ব্যাপারে জানতে এতিমখানার সভাপতি আমির আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সভাপতি হুমায়ুন চেয়ারম্যান জেলে থাকার কারণে আমি তার নামে টাকা উত্তোলন করেছি মাত্র। আমি কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম করিনি।
গাজীপুর দারুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার দাতা পরিবারের সদস্য ও গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি হিমু চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এতিমখানার সভাপতি আমির আলী এতিমের নামে টাকা উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
গাজীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান বলেন, আমি আমেরিকা থাকায় আমির আলী একাই মাদরাসার সভাপতি এবং এতিমখানার অর্থ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সেজে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এতিমখানার মোতাওয়াল্লি ইদ্রিসুর রহমান মাসুক বলেন, আমি আমেরিকা থেকে আমির আলীকে মোবাইল ফোনে বলেছি সঠিক হিসাব-নিকাশ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি দেননি।
গাজীপুরের বাসিন্দা রায়হান উদ্দিন বলেন, আমির আলী এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করে তার ছেলেকে লন্ডন পাঠিয়েছেন। বিলাসবহুল বাড়িও নির্মাণ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।