1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 2:08 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

‘আমাদের নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই’

  • প্রকাশিতঃ রবিবার, মে ৪, ২০২৫
  • 43 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

চা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়া, সেই সাথে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত রেশন। এই অবস্থা একদিন কিংবা দুইদিনের নয়, প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে নেই কারো আন্তরিকতা। চা শ্রমিক নন্দিনি জানালেন,আমাদের ঘরে খাবার না থাকলেও এ বিষয়ে কারো নেই মাথা ব্যাথা। ফলে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-রেশনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের বুরজান চা কোম্পানির অধীন তিনটি বাগান ও একটি কারখানার প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক। তবে টানা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শুধু বারবার আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছে।

সিলেটের বুরজান চা কোম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল এবং বুরজান কারখানার শ্রমিকদের ২০ সপ্তাহের বকেয়া এবং রেশনের বাকি পড়েছে। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেতন ও রেশনের দাবিতে রোববার দুপুরে শ্রমিকরা সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের লাক্কাতুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সড়ক অবরোধ কর্মসূচির আগে মালনিছড়া চা বাগান এলাকায় নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে সোমা বুনার্জী বলেন, “আমাদের ঘরে চাল, ডাল নেই। আমরা খেতে পারি না। আমাদের বাচ্চারা অসুস্থ, আমরা নিজেরাও অসুস্থ। খেটে খাওয়ার মত শরীরে শক্তি নেই। অনাহারে পড়ে আছি, কেউ আমাদের দেখতেও যায় না, খোঁজও নেয় না।

“বৃষ্টি পড়লে আমরা ঘরের এক পাশে পড়ে রই। এক প্লেইট ভাত নিয়ে, আমরা যখন বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে বসে খাই, তখন দেখি আমাদের পাতে ভাত নেই। আমাদের উপাস থাকতে হয়। তখন আমরা চাল ভেজে হালকা চা-পানি দিয়ে খেয়ে রাত কাটাই।”

তিনি বলেন, “এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। এই যে এত দূর থেকে হেঁটে আসার পর আমাদের শরীর কাঁপে। আমরা একেবারে দুর্বল। এই দুর্বল অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।”

সোমা বুনার্জী বলেন, “বাচ্চারা পাঁচ টাকা চাইলে দিতে পারি না। জানুয়ারিতে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করতে পারি নাই। বাগানের কিছু বাচ্চা ভর্তি হয়েছে, তবে তাদের খরচ দেওয়ার সামর্থ নেই। সামনে পরীক্ষা ফিস দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ১০ টাকা টিফিন খরচ দেওয়ার মত নাই। বাগানের সব বাচ্চারা ঝড়ে পড়ছে। বাচ্চারা হচ্ছে আগামীকালের ভবিষ্যৎ, কিন্তু বাগানের বাচ্চারা কী হচ্ছে? অর্থহীন হওয়ার কারণে বাচ্চাদের ভাত দিতে পারছি না, পড়াশোনা কিভাবে করাবো? অনেকবার আমরা ডিসি অফিসে গিয়েছি, ডিসি আমাদের চাল আর ৫০০ টাকা দিয়েছে অনেকদিন আগে। আর উপজেলা থেকেই নয় কেজি করে চাল দিসে। শুধু চাল খেয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?”

শ্রম দিয়ে উপার্জন করতে চান মন্তব্য করে এই চা শ্রমিক বলেন, “আমরা শ্রম দিব কিন্তু টাকা পাই না। আমরা কি কোম্পানির কোনো ক্ষতি করেছি? কেন কোম্পানি আমাদের এভাবে ফেলে চলে গেল- এটা জানতে চাই। আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে, আর যদি না চায়, আমাদের বিষ এনে দিবে, বিষ খেতে মরতে পারি।

“না হয় প্রতিটি বাগানে বোমা মারুক, আমরা ঘুমিয়ে থাকব বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে, বোমা মেরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। আমরা চাইব না বিচার, আমরা যাব না আদালতে, যাব না ডিসির কাছে, যাব না বিরক্ত করতে। আজকে আমরা দাবি নিয়ে এসেছি আমাদের বেঁচে থাকার ঠিকানা দেন, না হয় মৃত্যুবরণ করার কোনো জিনিস দান করুন। যা খেয়ে আমরা মৃত্যুবরণ করতে পারি। আমাদের বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই।”

এ সময় সেখানে দাঁড়ানো শ্রমিক উষা কুর্মী, নমি সিং, বৈশাখি বুনার্জী ও ভারতি নায়েকেও সোমা বুনার্জীর কথায় সায় দিচ্ছিলেন।

পুরুষ শ্রমিক নমি সিং বলেন, “আমাদের ২০ সপ্তাহের বেতন বাকি পড়েছে। আমাদের বাগানের মালিক বিদেশে ভাগছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। বর্তমানে আমরা চাচ্ছি, আমাদের দায়িত্ব, বাগানের দায়িত্ব কেউ নিতে। নিয়ে সুন্দরমত বাগানটা চালুক। আমরা যাতে বেতন পাই।”

শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে বুরজান চা বাগান কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামানের মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews