সিলেট সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই আটক হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গেল দু’দিনে সিলেটের ২ টি সীমান্ত দিয়ে অন্তত ২ শতাধিক লোককে ‘পুশ ইন’ করেছে। এর মধ্যে স্থানীয় জনতা ও বিজিবি ৭০ জনকে আটক করেছে। পুশ ইনের সঠিক তথ্য জানাতে না পারলেও বিজিবি সূত্র ২ দিনে দুটি সীমান্তে ৭০ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুশইনের সংখ্যা দুই শতাধিকেরও বেশি হবে। সীমান্তের ওপারে এখনও দলবেধে রয়েছে লোকজন। সুযোগ বোঝে যেকোনো সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরও বেশি অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করতে পারে। অনুপ্রবেশ ঘটনায় সিলেটের সবকটি সীমান্তে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ অবস্থায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ পুশ ইনসহ যেকোনো ধরনের উস্কানীমূলক তৎপরতা চালালে সেটা প্রতিহত করার পুর্ণ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে এমন দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ।
স্থানীয়দের দাবি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের দামামার মধ্যে তাদের সীমান্তের ওপার থেকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ। এদিকে সীমান্তে পুশ ইন এর জন্য আরও অনেক লোককে জড়ো করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মারফতে খবর পাওয়া গেছে। গেল দুইদিনে সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ধাপে ধাপে অনুপ্রবেশকারী প্রবেশের ঘটনায় সীমান্ত এলাকাগুলোতে বেড়েছে গভীর উদ্বেগ। ।
মৌলভীবাজারের ধলই সীমান্ত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে বুধবার (৭ মে) সকালে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৫ জনকে বিজিবি আটক করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শীব নারায়ণ শীল। তিনি বলেন, ‘বিজিবি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৫ জন লোককে আটক করে। এর মধ্যে নয় জন পুরুষ, তিন জন নারী ও তিন জন শিশু রয়েছে। এদের বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
শিব নারায়ণ শীল আরও জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে তারা ভারতের আসামে বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ করে ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিক ভান্ডারে নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তারা প্রায় তিন শতাধিক লোক ছিলেন। বিএসএফ তাদের কয়েকজনকে ধলই সীমান্ত দিয়ে গেট খুলে ‘পুশইন’ করলে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তবে অন্যদের কোন সীমান্তে নিয়ে গেছে তারা বলতে পারেননি।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসাইন এ বিষয়ে জানান, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনা মতে সীমান্ত এলায় আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশী জোরদার করেছি। তবে পুশ ইন বা কোনো নাগরিক আটক হওয়ার খবর আমরা এখনো জানি না
বড়লেখা উপজেলার দুই সীমান্ত
উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, বুধবার (৭ মে) ভোর পাঁচটার দিকে নিউ পাল্লাথল বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে পুশইন করেছে বিএসএফ। অপরিচিতি ও সন্দেহজনক চলাফেরার কারণে পাল্লাথল চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (০৮ মে) সকালে বোবারথল সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ আরো ২৩ জনকে পুশইন করেছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই লোকজনকেও আটক করে তারা বিজিবির কাছে সোপর্দ করেছেন।
যা বলছে সীমান্তের লোকজন
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, বড়লেখার দুই সীমান্ত দিয়ে গত দু’দিনে শতাধিক লোক বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারিরা জানিয়েছে, ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদের ধরে এনে জোর করে বর্ডার পার করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও অনেক বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করছেন। সীমান্তের ওপারে তাদের মতো আরো অনেককে পুশইন করার জন্য বিএসএফ ধরে রেখেছে।
এদিকে নিউ পাল্লা বিজিবি ক্যাম্প এলাকা দিয়ে বিএসএফের পুশইন করা ৩২ জনের অনেকে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর বাজার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বড়লেখা ত্যাগ করেন। কেউ কেউ সিএনজি যোগে অন্যত্র চলে গেছেন। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে, বিএসএফ যাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন করলো, তারা প্রকৃতপক্ষে কারা। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে কি বিএসএফ তাদেরকে ঢুকিয়ে দিয়েছে ?
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, গত দুইদিন ধরে বেশকিছু মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। বিএসএফ তাদের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে বিজিবির কাছে তুলে দিচ্ছে। বুধবার ৩২ জনকে ও বৃহস্পতিবার ২৩ জনকে বিজিবির কাছে সোপর্দ করেছেন চা শ্রমিকরা। আটকরা বাংলাভাষী। বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের পরিচয় নিশ্চিতের কাজ চলছে।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বেশকিছু মানুষকে আটক করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবির নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের ঠিকানা নিশ্চিত করণের কাজ চলছে। পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।