সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পুশইনের কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কর্তৃক দিবা ও রাত্রীকালীন টহল জোরদার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্তবর্তী এলাকা। সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার ৭ কিলোমিটার নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের, ছাতক উপজেলা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ২৩ কিলোমিটার সিলেট ব্যাটালিয়নের এবং অবশিষ্ট ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন।

সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ৯০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৮৯ কিলোমিটার স্থলসীমা এবং ১ কিলোমিটার জলসীমা। সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহ অত্যন্ত দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা। কিছু কিছু স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পুশইনের অপচেষ্টা চলমান থাকলেও সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) সীমান্তে জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করায় সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পুশইনের ঘটনা ঘটেনি।

এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ জেলার ১২ কিলোমিটার সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ও অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা করেছে বিজিবি’র ২৮ ব্যাটেলিয়ান। সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণকে জানানো হয়েছে, ওখানে (ভারতে) শুক্রবার রাত আটটা হতে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করায় এপারে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি এবং পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়ি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা অনুপ্রবেশ, জঙ্গি চলাচল এবং অবৈধ আন্তঃসীমান্ত কার্যকলাপ রোধে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেড়াবিহীন অংশে রাতের কারফিউ জারি করেছেন বলে জানিয়েছে মেঘালয়ের সংবাদমাধ্যম। দুই মাসের জন্য এই কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর.এম. কুরবাহ ও পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়ের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিনব কুমার সিং। তবে অবস্থার উন্নতি অথবা অবনতির প্রেক্ষিতে কারফিউর মেয়াদ হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে।

সুনামগঞ্জ বিজিবি’র দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, সিলেটের ৪৮ বিজিবির সীমানা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। এই উপজেলার বাঁশতলা, পেকপাড়া-বাগানবাড়ীতে থাকা বিজিবি ক্যাম্পের ঠিক উল্টোদিকে ভারতীয় কতৃর্পক্ষ রাত আটটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারী করেছে, এটি কবে নাগাদ শিথিল হবে এটিও বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশী নাগরিক যারা অবৈধপথে ওপারে না যায় তাদেরকে শনিবার সভা করে, জনে জনে আলোচনা করে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে ওখানে গেলেই বিপদে পড়বেন তারা।

এদিকে ভারতের নর্থইস্ট নিউজ (Northeast News) Night curfew imposed along Indo-Bangladesh border in Meghalaya (মেঘালয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি) শিরোনামে সংবাদে লিখেছে, মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় এবং পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা অনুপ্রবেশ, আন্তঃসীমান্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেড়াবিহীন অংশে রাতের কারফিউ জারি করেছেন।

চোরাকারবারি এবং অন্যান্য অপরাধীর অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে পূর্ব খাসি পাহাড় প্রশাসন আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর.এম. কুরবাহের মতে, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির কারণে এই অঞ্চলটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, কারফিউ আদেশে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টাকারী ব্যক্তিদের চলাচল, লাঠি ও পাথরের মতো সম্ভাব্য অস্ত্র নিয়ে পাঁচ বা ততোধিক লোকের জমায়েত এবং গবাদি পশু, সুপারি, শুঁটকি মাছ, সিগারেট এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ পণ্য পাচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর এবং দুই মাস বলবৎ থাকবে, যদি না আগে প্রত্যাহার করা হয়।

একইভাবে, পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়ের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিনব কুমার সিং জিরো লাইন থেকে ২০০ মিটার দূরে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছেন।

এই কারফিউয়ের মাধ্যমে সীমান্তের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ বা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে কোনো অননুমোদিত মিছিল বা পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির বেআইনি সমাবেশকেও নিষিদ্ধ এবং লাঠি, রড এবং পাথরের মতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন জিনিসপত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই আদেশের লক্ষ্য হল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আশেপাশে গবাদি পশু, সুপারি, পান, শুটকি মাছ, বিড়ি, সিগারেট এবং চা পাতার চোরাচালান সহ অবৈধ এবং অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ রোধ করা।

The Statesman ‘Meghalaya imposes night curfew along Indo-Bangladesh border’ ( মেঘালয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রাতের কারফিউ জারি) শিরোনামে লিখেছে, মেঘালয়ের সাথে বাংলাদেশের ৪৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, যার প্রায় ৭০ শতাংশ এখনও বেড়া ছাড়াই রয়েছে। সীমান্তের দুর্গম ভূ-প্রকৃতি, ঘন বন এবং বিক্ষিপ্ত জনবসতি দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি এবং টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কারণে, উভয় কারফিউ আদেশই একতরফাভাবে জনসাধারণের পরামর্শ ছাড়াই জারি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই সীমান্ত পথের কোন কোন এলাকায় কাঁটাতারের বেড়াও নেই। ওই পথ দিয়ে এই সময়ে আসছে গরু, পেঁয়াজ, চিনি, বিভিন্ন ধরণের ভারতীয় মসলা, চকলেটসহ নানা প্রসাধন পণ্য, মাদকসহ ভারতীয় মালামাল। এপার থেকে ওপারে (ভারতে) যাচ্ছে ইলিশ মাছ, শিং মাছ, সুপারীসহ নানা দেশীয় পণ্য। অনেক চেষ্টা করেও বিজিবি এই চোরাচালান ঠেকাতে পারছে না।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক (পরিচালক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির (পিএসসি) জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী জনগণের নিরাপত্তা বিধানে বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির পাশাপাশি সিভিল প্রশাসনসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা বিজিবিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত পরিস্থিতি অদ্যাবধি স্বাভাবিক ও সুরক্ষিত আছে।