মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার আনারস এখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এ অঞ্চলের আনারসের খ্যাতি রয়েছে সারাদেশজুড়ে। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় এবার ১,২৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জে ৫৫৫ হেক্টর এবং শ্রীমঙ্গলে ৪২০ হেক্টর জমিতে এই ফলের আবাদ হয়েছে। মে থেকে জুন পর্যন্ত সময়টিই আনারসের ভরা মৌসুম। উৎপাদিত হানিকুইন ও জাইনকিউ জাতের আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, সাতগাঁও, ডলুছড়া ও বালিশিরা, এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর, শমশেরনগর, ইসলামপুর ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় আনারস উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে ঠেলাগাড়ি, জিপ ও পিকআপে করে এসব আনারস স্থানীয় বাজারে পৌঁছে যায়। প্রতিটি ঠেলাগাড়িতে সাজিয়ে রাখা হয় ১৫০ থেকে ৫০০ পিস পর্যন্ত আনারস, যাতে সহজেই ক্রেতারা আকৃষ্ট হন।
বাজারে প্রায় ৪০ জন আড়ৎদার সক্রিয়ভাবে আনারস কেনাবেচায় যুক্ত আছেন। আশিক বানিজ্যালয়ের আড়তদার মো. আশিকুর রহমান বলেন, “এবার ফলন ভালো হওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে, দামও পাচ্ছি ভালো।”
তবে সংরক্ষণের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মেসার্স মনজুর আলীর আড়তদার মো. মছর উদ্দিন। তিনি বলেন, “পাকা আনারস বেশিদিন বাগানে রাখা যায় না। বর্ষায় তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা এখন খুবই জরুরি।”
আনারস কিনতে আসা পারভেজ, জাহেদ ও সাইদুল ইসলাম জানান, “শ্রীমঙ্গলের আনারসের স্বাদ অনন্য। তাই আমরা পাশের উপজেলা থেকে কিনতে এসেছি।”কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জয়ন্ত কুমার রায় জানান, “কমলগঞ্জে ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। আমরা ১৫ জন কৃষককে ২ হাজার ২৫০টি আনারস চারা প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছি।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এ অঞ্চলে আনারস ছাড়াও লেবু, নাগা মরিচসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হচ্ছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, “খরার কারণে হানিকুইন জাতের আনারস ছোট হয়ে গেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এগুলোকে জলডুগি নামে বিক্রি করছেন, যা এই অঞ্চলে উৎপাদিত হয় না।” তিনি আনারস ও লেবু সংরক্ষণাগার ও প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের দাবি জানান।