1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 21, 2025, 9:41 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

বিদ্যুৎহীনতার দেশে স্টারলিংক

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, মে ২৬, ২০২৫
  • 40 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

গালভরা স্লোগান আর চমক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে স্টারলিংক। বলা হচ্ছে, যেসব অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পৌঁছায় না, সেসব দুর্গম এলাকা বা সীমান্ত জনপদে এখন সহজেই মিলবে উচ্চ গতির ইন্টারনেট।

স্টারলিংক মূলত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যার জন্য বাড়ির ছাদে বসাতে হয় একটি ডিশ। সেটি আকাশপথে ঘুরে বেড়ানো স্পেসএক্সের স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট দেয়। বাংলাদেশে স্টারলিংকের এককালীন সেটআপ খরচ প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। মাসে গুনতে হবে আরও ৪ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে গতি পাওয়া যেতে পারে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ২৫০ মেগাবাইট পার সেকেন্ড। সঙ্গে রয়েছে ২০ থেকে ৭০ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত লেটেন্সি, যা ভিডিও কনফারেন্স, গেমিং বা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মতো কাজের জন্য আদর্শ নয়। পাশাপাশি আবহাওয়া খারাপ থাকলে স্টারলিংক সংযোগে ব্যাঘাত ঘটে।

স্টারলিংকের তুলনায় বাংলাদেশের শহর এলাকায় অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে মাত্র সর্বনিম্ন ৫০০ টাকার মধ্যেই এ সেবা পাচ্ছেন। বিদ্যমান অপটিক্যাল ব্রডব্যান্ড সেবা শুধু সস্তা নয়, বরং অনেক বেশি স্থিতিশীল, কম লেটেন্সি এবং স্থানীয়ভাবে সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য।
এমন বাস্তবতায় সহজ প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশের সাধারণ ব্যবহারকারী কেন ব্রডব্যান্ড ছেড়ে বহুগুণ ব্যয়বহুল স্টারলিংক বেছে নেবেন? এ প্রশ্নের উত্তরেই ধরা পড়ে স্টারলিংকের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুর্বলতা। যেসব এলাকায় ব্রডব্যান্ড নেই, সেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগও অনিয়মিত। স্টারলিংক চালাতে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হবে না, চাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ডিশ সংযোগ, রাউটার, যা সবকিছু একসঙ্গে চালু রাখতে হবে। এটি একটি প্রযুক্তিগত কাঠামো, যা একেবারেই শহরকেন্দ্রিক লাইফস্টাইলের জন্য তৈরি। ফলে অগ্রাধিকার তালিকায় যেখানে বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, নিরাপদ পানি সবার ওপরে, সেখানে এত ব্যয়ে মানুষ ইন্টারনেট কেন কিনবে?

অন্যদিকে শহরাঞ্চলে স্টারলিংকের কোনো বাস্তব চাহিদা নেই। এখানে বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে ইন্টারনেট সেবা আরও উন্নত হয়েছে। ১ হাজার টাকার মধ্যেই এখন ১০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি মিলছে। স্টারলিংক সেখানে নিতান্তই বিলাসী প্রযুক্তি ছাড়া কী?

তাহলে প্রশ্ন জাগে, স্টারলিংক কি সত্যিই মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এসেছে? স্টারলিংক শুধু প্রযুক্তি হিসেবে নয়, বরং এক ধরনের ‘স্বাধীন’ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হয়ে উঠতে পারে। কারণ সাধারণ ব্রডব্যান্ড সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলে। ফলে চাইলে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এমনকি যুদ্ধাবস্থায়ও স্টারলিংকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন। প্রশ্ন উঠছে, এই সুবিধা যদি কোনো উগ্র গোষ্ঠী বা বিদেশিদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, তাহলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তা কি নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করবে না?

সরকার বলছে, স্টারলিংক চালু হলে দুর্যোগ, আন্দোলন কিংবা রাজনৈতিক সংকটেও সংযোগ অটুট থাকবে। একই সঙ্গে এই প্রশ্নও ওঠে– কার সংযোগ? কাদের সঙ্গে থাকবে এই ‘অটুট সংযোগ? স্টারলিংকের উপস্থিতি তাই নীতিগত প্রশ্নও। প্রযুক্তির সুবিধা নিতে হলে তার উদ্দেশ্য বুঝে চলা জরুরি।

বাংলাদেশের মানুষের দরকার সুলভ, নিরাপদ, স্থিতিশীল ইন্টারনেট। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে স্টারলিংক আপাতত নিয়ে আসছে অনেক প্রশ্ন।

কৌশিক আহমেদ: সাংবাদিক

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews