সিলেট ওসমানী হাসপাতাল যেন টাকার খনি। ফলে আউটসোর্সিং কোম্পানীগুলো যে কোন মূল্যে এই হাসপাতালে জনবল প্রদানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। একবার জনবলের অনুমতি আদায়ে সমর্থ হলে, তার মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে শুরু হয় নতুন করে দৌড়ঝাঁপ। চলে টাকার খেলা। এই খেলায় দু’একটি রাজনৈতিক দলের লোক মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। ফলে মেয়াদ বৃদ্ধির আকাঙ্খা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে। আর সুযোগ বোঝে কোম্পানী এবং হাসপাতালের কতিপয় দুর্নীতিকারী চক্রও হাতিয়ে নেয় কাড়ি কাড়ি টাকা। আর তাদের হীন উদ্দেশ্যের বলি হন চাকুরী প্রত্যাশী নিম্ন আয়ের লোকজন। নির্ধারিত জনবলের বিপরীতে ডেলিভারি হয় অতিরিক্ত লোকজন। টাকা দিয়ে চাকুরী পেলেও মাস শেষে বেতন থাকে না অতিরিক্তদের। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে যেকোন মূল্যে টাকা আদায় করা তাদের নেশা হয়ে উঠে।
বর্তমানে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আউটসোর্সিং জনবল রয়েছে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের। ৬ মাসের জন্য অনুমোদন পাওয়া এই কোম্পানীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুন মাসে। শুরু থেকে জনবল নিয়োগে এই কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া। চাহিদার বিপরীতে বাড়তি জনবল নিয়োগ করে অবৈধ টাকা উপার্জন,দায়িত্বরতদের স্বাক্ষর গ্রহণ না করে অনুপস্থিতি দেখানো, সময় মতো বেতন পরিশোধ না করাসহ নানা অপকর্ম। এতো অপবাদের পরও একই কোম্পানী তাদের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য নতুন করে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। এর নেপথ্যে রয়েছেন হাসপাতালের সরকারি দুই ওয়ার্ড মাস্টার ও এক ব্রাদার। তারা হলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার দেলোয়ার ও সহযোগী আরেক ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স অরবিন্দু চন্দ্র দাস। এই চক্রের সাথে একজোট হয়ে কাজ করছে আওয়ামী একটি সিন্ডিকেট।
যেভাবে প্রতারণা সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস (প্রা:) লিমিটেড কোম্পানীর
কোম্পানীটি অখ্যাত হলেও চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের দোসরদের যোগ সাজসে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আউটসোর্সিং জনবলের জন্য দায়িত্ব পায় সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস। দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকে এই কোম্পানী বিভিন্ন পদে সিভি আহবান করে। প্রতিটি পদের বিপরীতে (পদভেদে) ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়। ২৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও টাকার বিনিময় ৩২৫ জন লোক নেওয়া হয়েছে। ২৬২ জনের অধিক লোক বিনা বেতনে চাকরি করছেন। এরা শুধু রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও ঔষধ চুরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর স্টাফদের সহযোগিতা করছেন দুই ওয়ার্ড মাস্টার।
যা বলছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হরিজন সম্প্রদায়
হরিজন সম্প্রদায়ের ৫০ জনকে হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজে নিয়োগ করেন তৎকালীন পরিচালক। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস এই ৫০ জনকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য বলেন। তারা এই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যার ফলে তাদেরকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একাধিক দপ্তরের অভিযোগ দায়ের করেছেন সিলেট জেলা হরিজন সম্প্রদায়ের সহ-সভাপতি পান্নু লাল। কিন্তু কোন সুরাহা হচ্ছে না। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি।
হাসপাতালের সিন্ডিকেট
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে স্টাফদের মধ্যে রয়েছে প্রতারক চক্রের একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই সকল সময়ে আউটসোর্সিং টেন্ডার অনুমোদন হয়। এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রকিব বাবলুর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা আব্দুল খালিক লাবলু। তিনি নেপথ্যে থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা শ্রমিক দল নেতা রুবেল আহমদ রানা ও সামছু মিয়াকে দিয়ে এই কোম্পানি পরিচালনা করাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওসমানী হাসপাতালে কর্মরত একাধিক স্টাফ জানান, কোম্পানীর সাবেক স্টাফ রুবেল ও সামছু নতুন স্টাফদের কাছ থেকে দেড় লাখ ও পুরাতন স্টাফদের কাছ থেকে ১ লাখ নিয়েছেন। যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের সিভি নিয়ে ওয়ার্ড মাস্টার দেলোয়ারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে দেলোয়ার ও সাইফুল মালেক সকল স্টাফদের বিনা বেতনে চাকরি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক আহমদের ব্যক্তিগত সেল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।