1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 2:19 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

চা’য়ের আড্ডায় রাজনীতির সরল ভাবনা

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, জুন ৭, ২০২৫
  • 30 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

‘তানরে ছিনস নি ব্যাটা, সারা বিশ্বর মাঝে ১০ জন মাইনষর একজন অইলো আমরার দেশর প্রধান উপদেষ্টা। ব্যাটায় দেশরে কই নিয়া যাইবো, চিন্তা করতে পারতে নায়। খালি কয়টা দিন সবুর করতে অইবো।’ (আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন। তিনি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন, চিন্তা করতেও পারবে না। শুধু কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে) এক হাতে সিগারেট এবং অপর হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তছকির মিয়া। যার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি সবজি বিক্রেতা ফিরিজ আলী। তছকির মিয়ার কথায় সম্মতিসূচক সায় দিয়ে মাথা নাড়েন ফিরিজ আলী। কিন্তু তছকির আলীর কথায় ভিন্ন মত পোষণ একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা সুজেল মিয়ার। তিনি তছকির মিয়াকে বললেন , ‘শোনেন ভাই, ড. ইউনুসের ক্ষমতা গ্রহণের ৯ মাস অতিক্রান্ত। এই ৯ মাসে তিনি ৯ টি নয় একটি চমক ও দেখাতে পারলেন না। ঘুষ-দুর্ণীতি,খুন,সন্ত্রাস চলছে আগের মতোই। আমরা তো রাজনীতি বুঝি না। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, চাই দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি দেশ।’

সুজেলের বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে এবার তছকির মিয়ার আবারও বলতে শুরু করলেন। ‘ধুর ভাই ১৫ বছর কতো জুলুম সইলাম, আর মাত্র ৯ মাস সহ্য অইরো না আপনারার’। এবার চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে থাকা অপর যুবক বিশ্বনাথের মিনহাজ উদ্দিন পক্ষ নিলেন সুজেল মিয়ার। তিনি হাতে থাকা সিগারেটের শলাকা ফেলে দিয়ে বেশ রাগত স্বরে বললেন, শোনেন ভাই ‘৯ মাসে দেশর যে অবস্থা গেল ১৫ বছরেও ই রকম আছিল না।’

বৃহস্পতিবার ৫ জুন বেলা ১১ টা ১০ মিনিট। বৃষ্টির মধ্যে আটকে পড়া একটি চায়ের দোকানে এভাবেই একের পর একজন কথা বলছেন। স্থান নগরের মেন্দিবাগ পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তার পাশে মেম্বারের চায়ের দোকান। যেখানে প্রতিদিন চা খেতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন। সকাল ৮ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকানে চায়ের আড্ডায় মশগুল থাকেন চা প্রেমী লোকজন। চায়ের কাপের প্রতি চুমুকে চুমুকে চলে নানা আলোচনা। ব্যক্তি জীবন থেকে সমসাময়িক কিংবা স্থানীয় ঘটনায়ও সরব থাকে আলোচনা। বাদ যায়নি রাজনীতির ধারাপাতও।

চা দোকানের রাস্তার এক পাশে সিলেট জালালাবাদ গ্যাস অফিস। অপর পাশে কর ভবনসহ বিভিন্ন বানিজ্যিক স্থাপনা। চায়ের দোকানের এক গজের মধ্যে রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড। বেলা ১ টা ১৯ মিনিটে চায়ের দোকানে চা খেতে আসেন সিএনজি চালক মুবাশ্বির আলী। দোকানীকে আদা দিয়ে এক কাপ রং চায়ের অর্ডার দিলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পাশে বসে থাকা অপর সিএনজি চালক মিনহাজ উদ্দিনকে তিনি জিজ্ঞেসে করেন, ‘কিতা বা , দেশর অবস্থা কও চাই। নির্বাচন অইবো নি বোঝ?’

সরল জবাব মিনহাজ উদ্দিনের। মুবাশ্বিরকে বলছেন ‘ভাই হুন, তাইন ইলেকশন করবার লাগি খেমতায় আইছইন না। তাইন শোধ নিবা কড়ায় গণ্ডায়। মন নাই নি, হাসিনায় কিতা করছিলা’ ?

পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেক সময় ধরে কথা শুনছিলেন বেঞ্চের কোনায় বসা স্কুল শিক্ষক জগদিশ বাবু। বেঞ্চ থেকে উঠে একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে তিনি বলছিলেন- ‘দেশে এখন যা চলছে, তাতে সরকার আছে বলে মনে হয় না। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রয়োজনে স্মরণ করে। জনগণের দিকে এই সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। আজ নির্বাচিত সরকার থাকলে এমনটি হতো না। কিন্তু এই সরকার তো নির্বাচন দিচ্ছে না। তাছাড়া, আইন-আদালত সবকিছুকেই প্রয়োজনে ব্যবহার করে বহু বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। জগদীশ বাবুর কথায় সায় দিলেন ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম। তিনি বললেন, আওয়ামী লীগ তাদের টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে যতো না দুর্নীতি করেছে, ৯ মাসে এই সরকারের পরিসংখ্যান বলছে,১ বছর থাকলে দেশ একবারে রসাতলে যাবে।

এবার চা’বিক্রেতা রহিম মিয়াও শুরু করলেন কথা বলা। তিনি বলেন-‘ভাইরে আমরা তো কোনো দল করি না। এর লাগি ই সরকাররে সমর্থন দিছি। কিন্তু এখন যা খেলা দেখরাম-মনে অইরো দেশও একটা যুদ্ধ আরম্ভ অইবো।’

রহিম মিয়ার কথা শোনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করা চাকুরী প্রত্যাশী শিবগঞ্জের যুবক তাহমিদ। মেন্দিবাগ জালালাবাদ গ্যাস অফিসে আসছিলেন নিজের একটি কাজের জন্য। কাজ শেষে সহপাঠিসহ চা খেতে যান মেম্বারের চায়ের দোকানে। তিনি বললেন-‘আগামী দিনগুলোতে ফ্যাসিবাদ যাতে কায়েম না হয়, সেই নের্তৃত্ব সৃষ্টির জন্য কাজ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। তাদের হাত ধরেই আগামীর বাংলাদেশ হবে স্বপ্নের প্রতিফলন। কারণ-এনসিপির সাথে আছে পৃথিবীখ্যাত অধ্যাপক ড.ইউনুস।’

কিন্তু না। সহপাঠি তাহমিদের কথায় আপত্তি মিনহাজের। তিনি বলতে শুরু করলেন। ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর পথ হারিয়েছে আন্দোলকারী ছাত্ররা। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে নতুন ফ্যাসিবাদের নমুনা এখন বাংলাদেশ। যে সরকার সবকিছু মুছে দিয়ে রিসেট বাটন পুশ করার কথা বলতে পারে, তাদের হাতে অন্তত দেশ কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না। মিনহাজের ভাষায়-এক দল একাত্তরের চেতনা দিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছিল। আর এখন ছাত্ররা জুলাই স্পিরিট বলেন নতুন চেতনা বাণিজ্য শুরু করেছে। কোনো কিছুতেই পরিবর্তন নেই। কেবল পরিবর্তন হয়েছে ক্ষমতার।’

চায়ের দোকানের ঠিক পিছন দিকে কাজ চলছে একটি বাণিজ্যিক ভবনের। নির্মানাধীন ভবনটির নীচতলায় চেয়ারে বসা ছিলেন আরও ৪/৫ জন লোক। সকলের দৃষ্টি ছিল চায়ের দোকানের রাজনৈতিক আলোচনায়। তর সইতে না পেরে হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চায়ের দোকানে আসলেন বিল্ডিংয়ের ঠিকাদার। আলাপে সামিল হলেন তিনিও। আগে কথা বলা দু’জন শিক্ষার্থীর বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত তাঁর। তিনি বললেন, ‘সরকারের ৯ মাস হয় নি। আর বিগত ১৮ বছর ফ্যাসিবাদি সরকারকে সবাই সহ্য করেছে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাদের যুক্ত করা হয়েছে, তাদের সকলেই গ্রহণযোগ্য এবং সুযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদি আওয়ামী সরকারের বিপরীতে ড. ইউনুছের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের মানুষের জন্য আশির্বাদরূপে আবির্ভুত হয়েছে। সামনের দিনেই তার প্রমান মিলবে’।

হাতে থাকা চায়ের কাপ রেখে দিয়ে ঠিকাদারের দিকে বেশ মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসলেন খলিল মিয়া। একটি ঔষধ কোম্পানীতে চাকুরী করেন তিনি। আঞ্চলিক ভাষায় ঠিকাদারের উদ্দেশ্যে তিনি বলতে থাকেন,‘ওই মিয়া, তুমি রাজনীতির বোঝোটা কী ? বিল্ডিংয়ের কাজে আছেন, কাজে থাকেন। না থেমে তিনি আরও বলেন, এই যে গণ অভ্যুত্থান হইলো, এইডা অইলো দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল। এই অভ্যুত্থানে একটি ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটাইতে গিয়া আমরা আরো এক ভয়ানক ফ্যাসিবাদ চক্রের কাছে বন্দি অইছি। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এখন ডিসি নিয়োগ দেয়, সচিবালয়ে ঘুর ঘুর করে। যখন তখন যে কাউকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করে। সারাদেশ জুড়ে এখন চলছে তাদের দখলদারিত্ব। চলছে চাঁদাবাজি, টাকা আত্মসাতসহ নানা অপকর্ম।’

আলাপ চলছিল, চলতে থাকবে। এমন আলাপে মনোযোগী ছিলেন সকলেই। চায়ের আড্ডায় রাজনীতির এই ধারাপাত থাকবে সবসময়ই। এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে সাধারণ মানুষের সরল ভাবনা। তবে মোটা দাগে বলা যায়- রাজনীতি না বোঝে/রাজনীতির লোক না হয়েও রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেশের অধিকাংশ মানুষের। তাই সকলের দাবি-দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকার যথাসময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews